বিপত্তারিণী পুজোয় কেন বাঁধা হয় লাল তাগা? কারণ জানলে অবাক হবেন!

মঙ্গলবার মা বিপত্তারিণীর (Bipadtarini) পুজো। বিপত্তারিণী ব্রত পরেই সকলের হাতে দেখা যায় লাল রঙের তাগা। এই লাল তাগার মাধ্যমেই মা বিপত্তারিণীর আশীর্বাদে সকল বিপদ থেকে…

Why red rope is tied on the hand in Bipadtarini Puja, বিপত্তারিণী পুজোয় কেন বাঁধা হয় লাল তাগা?

মঙ্গলবার মা বিপত্তারিণীর (Bipadtarini) পুজো। বিপত্তারিণী ব্রত পরেই সকলের হাতে দেখা যায় লাল রঙের তাগা। এই লাল তাগার মাধ্যমেই মা বিপত্তারিণীর আশীর্বাদে সকল বিপদ থেকে মুক্তির দিশা মিলবে বলে বিশ্বাস।

কীভাবে দেবী বিপত্তারিণী পুজোর সূচনা?

   

দেবী দুর্গা দেবাদিদেব মহাদেবের অর্ধাঙ্গিনীর আদি শক্তি। অন্যান্য দেবী তাঁরই অবতার বা ভিন্ন রূপ। দেবী দুর্গার ১০৮ রূপের মধ্যে অন্যতম দেবী সঙ্কটনাশিনী, দেবী বিপত্তারিণী। সঠিক অর্থে বিশ্লেষণ করলে ‘বিপত্তারিণী’ বা ‘বিপদনাশিনী’ দেবীর নাম নয়, উপাধি। যিনি বিপদ তারণ করেন, তিনিই বিপত্তারিণী।

কথিত আছে, ওসুর শুম্ভ-নিশুম্ভ একবার অসুর ভ্রাতৃদ্বয়ের হাত থেকে নিষ্কৃতি পেতে মহামায়ার স্তব করেছিলেন। সেই সময় শিব-জায়া পার্বতী সেখানে হাজির হয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন শুম্ভ-নিশুম্ভ কার স্তব করছে? কিন্তু জবাব দিতে পারেননি ওই দুই ওসুর। তখন পার্বতী ক্রোধে নিজের স্বরূপ দেখিয়ে শুম্ভ-নিশুম্ভকে বধ করেন। উদ্ধার করেন দেবতাদের। সেই থেকে মর্তবাসীর ঘরে ঘরে বিপত্তারিণী পুজোর সূচনা।

পুজোর রীতি-

দেবী বিপত্তারিণীর ব্রত আষাঢ় মাসে রথ এবং উল্টোরথের মাঝে যে মঙ্গল ও শনিবার পড়ে। বাংলায় ঘরে ঘরে মহিলারা স্বামী-সন্তান-পরিবারের মঙ্গল কামনায় মা বিপত্তারিণী পুজো করে থাকেন। গ্রামাঞ্চলে বিপত্তারিণী পুজো চলে চারদিন ধরে। প্রথম দিনে দেবীর আরাধনা হয়। মহিলারা গঙ্গা বা কোনও নদীতে স্নান করে দণ্ডী কাটেন। তারপর দু’রাত্রি ধরে রাতে বাংলা লোকগান, ভজন ও কীর্তন চলে। চতুর্থ দিনে বিসর্জন হয়। বিপত্তারিণী পুজো উপলক্ষে মেয়েরা উপবাস করেন।

– বিপদত্তারিণী পূজার নিয়ম অনুযায়ী সবকিছুর সঙ্গে ১৩ সংখ্যা আবশ্যিক। সে ফল হোক অথবা ফুল কিংবা প্রসাদের ক্ষেত্রেও। সাধারণত লাল রঙের পোশাক পরে এই পূজায় বসতে হয়।
– পুজো না হওয়া পর্যন্ত উপোস থাকা জরুরি। অনেকেই এইদিন অন্ন গ্রহণ করেন না। তারা লুচি কিংবা অন্য কিছুই প্রসাদ হিসেবে খান।
– ১৩টা ফল, সে নৈবেদ্য হিসেবে কেটে সাজিয়ে হোক অথবা গোটা হোক এটি দিতেই হবে। ১৩ রকমের ফুল অবশ্যই রাখতে হবে। ১৩ রকমের মিষ্টি – এই পুজোয় আবশ্যিক। এই পুজোর মূল আকর্ষণ লাল সুতোর তাগা। এই তাগায় ১৩ টা গিঁট এবং ১৩ টি দূর্বা বাঁধা হয়। ছেলেমেয়েরা অনেকেই সারাবছর এটিকে সঙ্গে রাখেন। বেশিরভাগই হাতে পড়ে থাকেন। মেয়েদের ক্ষেত্রে বাম হাত এবং ছেলেদের ডান হাতে লাল তাগা বাঁধা হয়।
– ব্রত পালন যিনি করছেন তিনিই শুধু নন, এই তাগা পরিবারের সব সদস্যদের বাঁধার রীতি চালু আছে।
– ব্রতপালনের পর খাবার যা খেতে হয়, সেখানেও ১৩ সংখ্যায় আহার গ্রহণের রীতি চালু আছে। তবে, এ দিন চাল, চিঁড়ে, মুড়ি এসব খাওয়া যায় না৷

কেন হাতে বাঁধা হয় লাল তাগা?

পুরান প্রচোলিত একটি মতা অনুযায়ী, এক সময় দেবতা ও অসুরের মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধ শুরু হয়। অসুরদের পরাক্রম দেখে দেবরাজ ইন্দ্র খুবই চিন্তিত হয়ে পড়েন। স্বামীকে চিন্তিত দেখে স্ত্রী ইন্দ্রাণী তাঁর জন্য প্রার্থনা শুরু করেন। ইন্দ্রানী তাঁর আধ্যাত্মিক শক্তি একত্রিত করে লাল সুতো দিয়ে তাগা তৈরী করেন। তারপর দেবরাজ ইন্দ্রের মঙ্গল কামনা করে সেই লাল সুতোর মালা তাঁর গলায় বেঁধে দেন। যাতে অসুরেরা তাঁকে আঘাত করতে না পারে। এরপর দেবতা ও অসুরের মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধ চলে। ইন্দ্রের নেতৃত্বে সেই যুদ্ধে দেবতারা জয়ী হন। সেই থেকে বিপদ এড়াতে হিন্দু ধর্মে লাল সুতো বা তাগা বাধার প্রচলন চালু আছে।

শাস্ত্র অনুযায়ী আরেকটি মত হল- পুরান অনুসারে, ভক্ত প্রহ্লাদের পুত্র বলিরাজ ব্রহ্মার আশীর্বাদে স্বর্গ, মর্ত ও পাতালের অধিকারী হয়েছিলেন। দেবরাজ ইন্দ্রের সিংহাসন রক্ষা করতে ভগবান বিষ্ণু বামন রূপে জন্ম গ্রহণ করে বলিরাজকে পাতালে পাঠিয়ে দেন। ভগবান বিষ্ণু বলিকে অমরত্ব দান করলে, আর্শীবাদ স্বরূপ তিনি তাঁর হাতে বেঁধে দেন লাল সুতো। সেই থেকেই হিন্দুদের মধ্যে হাতে লাল সুতো বাঁধার প্রচলন রয়েছে।