কালী কথা পর্ব ৩: প্রকৃত অর্থ না বুঝে ‘বিপজ্জনক’ কালীপূজা অনেক জায়গাতেই হয়

শ্রী কালীচরণ ভট্টাচার্য: পরপর দুদিন বাঙালির আরাধ্য দেবী কালিকার বিভিন্ন দিক তুলে ধরার পর আজ তৃতীয় কিস্তি। কালী তথা তন্ত্র সাধনার গুঢ় তত্ত্বগুলির মধ্যে অন্যতম…

শ্রী কালীচরণ ভট্টাচার্য: পরপর দুদিন বাঙালির আরাধ্য দেবী কালিকার বিভিন্ন দিক তুলে ধরার পর আজ তৃতীয় কিস্তি। কালী তথা তন্ত্র সাধনার গুঢ় তত্ত্বগুলির মধ্যে অন্যতম এবং বহুল চর্চিত তত্ত্ব হল পঞ্চ ম কার সাধনা। বীরাচারী সিদ্ধ সাধক ছাড়া এই পথ অবলম্বন করা যায় না। অত্যন্ত বন্ধুর পথে প্রতি পদে ঘনিয়ে আসে বিপদ। একটু এদিক ওদিক হলেই মৃত্যু অনিবার্য। এই পথে দরকার প্রচণ্ড সাহসী, শক্তিশালী, সৎ, নিষ্ঠবান হওয়া।

পঞ্চ ম সহযোগে দেবী কালিকার আরাধনার কাহিনী চর্চিত। পঞ্চ ম কারের নামে চারদিকে চলছে মদ, মাংস সহযোগে দেবী কালিকার আরাধনা। প্রকৃত অর্থ না বুঝে গৃহস্থ বাড়িতে এই পদ্ধতিতে পুজো অনেক জায়গাতেই হয়। যার ফল হয় অত্যন্ত বিপজ্জ্ক।

পঞ্চ ম কার সাধনার আগে তার অন্তর্নিহিত তত্ব জানা দরকার। পঞ্চ ম এর অর্থ, মদ, মাংস, মুদ্রা, মৎস্য এবং মিথুন।

বীরাচারি শাক্ত সাধকরা নির্জন অরণ্য বা জঙ্গল, পাহাড় সংলগ্ন নির্জন জঙ্গল, নদীর তীরবর্তী জঙ্গল বা নির্জন জায়গা, শশ্মানে পঞ্চ ম সহযোগে সাধনা করে থাকেন। তবে এই পঞ্চ ম আসলে সাধনার এক একটি ধাপ। নিম্ন বা পশুভাবের সাধকরা প্রথমে বাহ্যিক পঞ্চ ম সহযোগেই সাধনা শুরু করেন। তারপর ধাপে ধাপে নিজেদের উত্তীর্ণ করে থাকেন।

পঞ্চ ম এর প্রথম তত্ব মদ: আমাদের ব্রহ্মরন্ধ্রে যে সহস্রদল কমল বা পদ্ম রয়েছে সেখান থেকে যে সুধারস নির্গত হয় তাই সাধকের মদ।

দ্বিতীয় তত্ত্বে মাংস: মাংস শব্দের অর্থ মা এবং অংশ। সাধকের মৌনতা বা বাক সংযম নিজের জীভের ওপর নিয়ন্ত্রণ। এটিই তন্ত্রশাস্ত্রে মাংস সাধন বলে পরিচিত।

তৃতীয় তত্ব মুদ্রা: মুদ্রা অর্থে অর্থ, শাস্ত্র ভেদে মদের চাট। তবে তন্ত্রশাস্ত্রে বর্ণিত মুদ্রা অর্থে পূর্ণ চৈতন্যজ্ঞান। রিপু নিয়ন্ত্রণ। এককথায় সংযম বা জিতেন্দ্রিয় হওয়া।

চতুর্থ তত্ব মৎস্য: আমাদের দেহে দুই মৎস্য রয়েছে। ইড়া ও পিঙ্গলা। গঙ্গা ও যমুনা বলে যা বর্ণিত তন্ত্রশাস্ত্রে। এই দুই নদীতে প্রবাহমান দুই মৎস্য শ্বাস ও প্রশ্বাস। অর্থাৎ শ্বাস বায়ু নিয়ন্ত্রণ। মৎস্য সাধনের অর্থ, যোগের দ্বারা নির্বাণ লাভ।

পঞ্চম তত্ব মিথুন: মিথুন শব্দটির আক্ষরিক অর্থ নারী ও পুরুষের মিলন। তন্ত্রশাস্ত্রে আমাদের দেহে নারী ও পুরুষ বলতে বলা হয়েছে, ষটচক্রভেদ করে মুলাধারে যে শক্তি রয়েছে তাকে সহস্রদলপদ্মে গিয়ে মিলন ঘটানো এককথায়, পূর্ণচৈতন্য লাভ। এটিই সাধকের পরম অবস্থা।

তন্ত্রশাস্ত্র অতি বিষধর সর্প। না জেনে চর্চা বা অভ্যাস সমূহ ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। ফলে না জেনে এসব নিয়ে চর্চা থেকে দূরে থাকা ভাল। আগ্রহ থাকলে পারদর্শী পণ্ডিত বা সদগুরুর কাছে গিয়ে শেখা উচিত। বাজারের বই পড়ে করায়ত্ব করা নিষেধ। কারণ, বাজার থেকে বই কিনে পড়ে চিকিৎসক হওয়া যায় না।