Puja Special : পুজোয় ঢাকের মিঠে বোল না শুনলে মন বসে না, আবার হইহট্টগোলও পছন্দের নয়। এমন মানুষ কিন্তু অনেকেই আছেন। চেষ্টা করেন একটু নিরিবিলিতে পুজো কাটানোর। যারা অপশন পান না তারা ওই অনেকেই দিঘা, তাজপুর করে ফেলেন। যারা ওই কম্বো প্যাক খুঁজছেন তারা ঘুরে আসতে পারেন এই পাঁচ রাজবাড়িতে। যা চাইছেন তা তো পাবেনই সঙ্গে এক্সট্রা কিছুও পাবেন। হ্যাঁ, একটু খরচ হতে পারে, তবে একেবারেই যে সাধ্যের বাইরে তা নয়। দিন দুয়েক বেশিই ভালো কাটতে পারে।
নাড়াজোল রাজবাড়ি, পশ্চিম মেদিনীপুর
নাড়াজোল রাজবাড়ির জয়দুর্গা পুজোর বয়স ৬০৮ বছর। পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু, মতিলাল নেহরু, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, মহাত্মা গান্ধি, ঋষি অরবিন্দ, মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখ মনীষীদের পদধূলি পড়েছে এই নাড়াজোল রাজবাড়িতে। কথিত আছে, বর্ধমানের রাজা ইছাই ঘোষের দেওয়ান উদয়নারায়ণ ঘোষ নাড়াজোল রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করেন। স্বপ্নাদেশে তিনি মা দুর্গার একটি অষ্টধাতুর মূর্তি খুজেঁ পান এবং এটিই জয়দুর্গা নামে পরিচিত হয়। জয়দুর্গার মন্দিরকে মায়ের কৈলাস ধাম বলা হয়। এছাড়াও রয়েছে সীতারামজিউ মন্দির, গোবিন্দজিউ মন্দির এবং শিবমন্দির। এখানে কোনও দুর্গাপ্রতিমা তৈরি হয় না। স্থায়ী অষ্টধাতুর মূর্তিতে মা বৈষ্ণবীরূপে একাই পূজিত হন। লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ, কার্তিক থাকে না। ষষ্ঠীর ঠিক ১৫ দিন আগে মায়ের পুজো শুরু হয়। বাড়ির মেয়েদের পুজোয় অংশ নেওয়ার অধিকার থাকলেও পুষ্পাঞ্জলি দেওয়ার অধিকার নেই। মা নিরামিষাশী তাই এখানে বলিপ্রথা নেই৷ তবে, সন্ধিপুজোর সময় রাজবাড়ির পাকশালে তৈরি ৩ কেজির মোয়া মাকে নিবেদন করা হয়৷ পুজো চলাকালীন সেই মোয়া নিজে থেকেই নাকি ফেটে যায়। একেই বলি বলা হয়। কলকাতার থেকে গাড়িতে কোলাঘাট হয়ে নাড়াজোল রাজবাড়ি ১১৫ কিলোমিটার। পাঁশকুড়া থেকে নাড়াজোল ৩৫ কিলোমিটার, কোলাঘাট থেকে ৪৮ কিলোমিটার। করোনা আবহে পুজোয় নাড়াজোল রাজবাড়িতে রাত্রিবাস করা যাবে না। তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতির খোঁজ নিয়ে নিতেই পারেন এই নম্বরে- 9733621495
কাশিমবাজার রাজবাড়ি, মুর্শিদাবাদ
আঠারো শতকের গোড়ায় পিরােজপুর গ্রামের অযোধ্যা রায় পরিবার মুর্শিদাবাদের কাশিমবাজারে উঠে আসায় তাদের গ্রামের বাড়ির দুর্গাপুজোও উঠে আসে কাশিমবাজারের বাড়ির সুদৃশ্য চণ্ডীমণ্ডপে। রায়-পরিবারের পুজো প্রায় ৩০০ বছরের পুরনাে। পুজো দেখার পাশাপাশি বাড়ি ঘুরে দেখতেও ভালাে লাগে। এককালে লােকমুখে ‘ছােট রাজবাড়ি’ নামে পরিচিত এই বাড়ির বর্তমান পােশাকি নাম ‘কাশিমবাজার প্যালেস অব দ্য রয়েজ’। বাড়ির একাংশেই তৈরি হয়েছে বিলাসবহুল থাকার ব্যবস্থা। অন্দর সজ্জায় সাবেকিয়ানার পাশাপাশি রয়েছে সমস্ত আধুনিক সুযোগ সুবিধে। প্রাচীন চণ্ডীমণ্ডপটির সাথেই রয়েছে ঠাকুরদালান। সামনে প্রশস্ত চাতাল আর তার দুপাশে টানা দোতলা বারান্দা। খিড়কি জানালা, পালকি, ঝাড়বাতির সাজ দেখার মতাে। ইউরােপীয় স্থাপত্যের ছাপ স্পষ্ট চারিদিকে। বিশাল সেন্ট্রাল বল রুম, সুদৃশ্য মিউজিয়াম। রয়েছে লক্ষ্মীমন্দির, রাধাগােবিন্দ জিউ মন্দির ও শিবমন্দির। বাড়ি ঘিরে রয়েছে সুন্দর সাজানো বাগান ও লন। কলকাতা থেকে কাশিমবাজার সড়কপথে ২১৩ কিলোমিটার। ট্রেনের ক্ষেত্রে রয়েছে সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটের হাজারদুয়ারি এক্সপ্রেস। ট্রেনটি মুর্শিদাবাদ স্টেশন পৌঁছয় বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ। আগে থেকে বুকিং করা থাকলে, মুর্শিদাবাদ স্টেশন থেকে রাজবাড়ির গাড়ি এসে নিয়ে যাবে। বা শিয়ালদহ – লালগোলা গামী ট্রেনে এসে নামতে হবে কাশিম বাজার রেলস্টেশন, রিক্সায় সময় লাগে ৫ মিনিট। এছাড়া বহরমপুর কোর্ট রেল স্টেশন থেকেও রিক্সা পাওয়া যায়। বহরমপুর বাস স্ট্যান্ড থেকেও রিক্সা পাওয়া যায়। যোগাযোগ – 9831031108 / 8584035663।
ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি
রাজবাড়ী ক্যাম্পাসে আছে কুলোদেবতার মন্দির, ল ফি বছর শারদীয়ায় এই পরিবারের পটে আঁকা দেবী দুর্গা পূজিত হন ঝাড়গ্রাম রাজপ্রাসাদের বাইরের সাবিত্রী মন্দিরে। রাজস্থান থেকে রাজা সর্বেস্বর সিং চৌহান সেইসময়ের মল্ল বংশের রাজাকে যুদ্ধে পরাজিত করে ধারণ করেন মল্লদেব উপাধি। ১৫৯২ সালে মূল রাজবাড়ী স্থাপনের পর ১৮ জন মল্লদেববংশীয় রাজা এখানে রাজত্ব করেন প্রায় ৪০০ বছর। এই রাজবাড়ীতে থাকা যায়। গ্রাউন্ড ফ্লোর এখন হেরিটেজ হোটেল। কলকাতা থেকে গাড়িতে মুম্বই হাইওয়ে ধরে ঝাড়গ্রাম ১৬৬ কিলোমিটার। ঝাড়গ্রাম স্টেশন থেকে গাড়ি পাওয়া যায়। যোগাযোগ – 6294024319
কৃষ্ণনগর রাজবাড়ি, (নদীয়া)
কৃষ্ণনগর রাজবাড়ীর পুজো প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো। কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের আগে তাঁর পূর্বপুরুষেরা দুর্গাপূজা করলেও তার হাত ধরেই জাঁকজমক সহকারে দুর্গাপুজো চালু হয় রাজবাড়ীতে। কৃষ্ণচন্দ্র রায় ঢাকা থেকে আলাল বক্স নামে এক স্থপতিকে আনিয়ে তৈরি করেন চকবাড়ি, কাছারিবাড়ি, হাতিশালা, আস্তাবল, নহবতখানা এবং পঙ্খ-অলংকৃত দুর্গাদালান ও একটি সুবিশাল নাটমন্দির। নাটমন্দিরের শিল্পকার্য এখনও দেখার মতো। নাটমন্দিরের খিলান, থামের গায়ে রয়েছে হিন্দু ও মুসলিম স্থাপত্যের প্রভাব। কৃষ্ণনগরের রাজবাড়ির দুর্গাপ্রতিমার নাম রাজরাজেশ্বরী। দেবী বর্ম পরিহিতা যোদ্ধা। দেবীর বাহন ঘোড়ামুখো সিংহ। আগে মুসলিম শিল্পীরা আঁকতেন দেবীর চোখ, মুখ, নাক। রাজবাড়ীর পুজোয় ১০৮ সংখ্যার একটা বিশেষ ব্যবহার দেখা যেত। প্রতিমা তৈরিতে ব্যবহৃত হতো ১০৮ মন গঙ্গামাটি, ১০৮ ঘড়া গঙ্গাজল, পূজোয় লাগতো ১০৮ টা পদ্ম, বাজত ১০৮ টা ঢাক, দেবীমূর্তিকে বহন করে নিয়ে যেত ১০৮ জন বাহক। এমনকি পুজোয় পশু বলিও হতো ১০৮ টা। এখানে দুর্গাপুজো, জগদ্ধাত্রীপুজো ও বৈশাখ মাসের বারোদোল মেলার সময় প্রবেশের অনুমতি থাকে। কলকাতার থেকে গাড়িতে এলে রানাঘাট বা সিঙ্গুর হয়ে কৃষ্ণনগরের দূরত্ব ১১২ কিলোমিটার। কৃষ্ণনগর রাজবাড়ীতে থাকা যায় না। থাকা যায় ১২ কিলোমিটার দূরের বালাখানা ভিলাতে।
মহিষাদল রাজবাড়ি
১৭৭৮ সালে মহিষাদল রাজবাড়িতে দুর্গাপুজোর প্রচলন হয় রানি জানকী দেবীর হাত ধরে। প্রথম রাজপ্রাসাদটি আজ অবলুপ্ত। আশেপাশের গ্রাম্য পরিবেশ আর দিঘি, পুকুর সংলগ্ন রাজবাড়ি আর মিউজিয়াম অবশ্যই দর্শনীয়। মহিষাদল রাজবাড়িতে সাবেকি ডাকের সাজের প্রতিমা। পুজো হয় বৈষ্ণব মতে। ১০৮ টা নীলপদ্মে দুর্গাপুজোর রীতি ছিল। এখন বাড়ির রাজদিঘিতে ফোটা নীল শালুকে পুজো হয়। মহালয়ার দিন থেকেই শুরু হয় রাজবাড়ির দুর্গাপুজো। আগে অষ্টমী ও নবমী তিথির সন্ধিক্ষণে অর্থাৎ সন্ধিপুজোয় কামান দাগার চল ছিল। কলকাতা থেকে দূরত্ব ১১০ কিলোমিটার। কলকাতা থেকে বম্বে রোড ধরে কোলাঘাট পার হয়ে নন্দকুমার মোড় এসে সেখান থেকে ৮ কিলোমিটার এগোলে কাপাসারিয়া মোড়। কাপাসারিয়া থেকে ৫ কিলোমিটার গেলেই মহিষাদল রাজবাড়ি। যোগাযোগ – 9830275928