মহাশিবরাত্রি, শিব ভক্তদের জন্য এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব, যা ২০২৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি, বুধবার অনুষ্ঠিত হবে। ফাল্গুন মাসের অন্ধকার অর্ধমাসের চতুর্দশী তিথিতে এই উৎসব পালিত হয়, এবং এটি শিব ভক্তদের জন্য আধ্যাত্মিক গুরুত্ব বহন করে। এই দিনে ভক্তরা উপবাস পালন করে এবং শিবের আশীর্বাদ লাভের জন্য বিশেষ পূজা আয়োজন করেন।
মহাশিবরাত্রি ২০২৫ পূজা বিধি:
মহাশিবরাত্রি পূজায় ভক্তরা কয়েকটি বিশেষ রীতি পালন করেন। এখানে পূজা করার মূল পদক্ষেপগুলি তুলে ধরা হলো-
শুদ্ধিকরণ: পূজা শুরু করার আগে ভক্তরা স্নান করেন এবং শুদ্ধ কাপড় পরিধান করেন। পূজা স্থলও পরিষ্কার করা হয় এবং সেটি প্রস্তুত করা হয়।
পূজার সেটআপ: একটি কাঠের প্ল্যাঙ্কে শিবের মূর্তি বা শিবলিঙ্গ স্থাপন করা হয়। শিবলিঙ্গ বা শিবযন্ত্র ফুল, পাতা এবং ফল দিয়ে সজ্জিত করা হয়।
পূজার সামগ্রী: পূজার সময় ভক্তরা ফল, দুধ, মধু, বেলপত্র, ভাং এবং ধূত্রা নিবেদন করেন, যা শিবের কাছে আশীর্বাদস্বরূপ গণ্য হয়।
অভিষেক: শিবলিঙ্গের অভিষেক এক অন্যতম প্রধান পূজা বিধি। ভক্তরা পাঁচটি পবিত্র দ্রব্য—দুধ, দই, মধু, চিনির গুড় (বূড়া), এবং ঘি—এই পাঁচটি জিনিস দিয়ে অভিষেক করেন, এবং শিব মন্ত্রের উচ্চারণ করেন।
মন্ত্রপাঠ: মহাশিবরাত্রির পূজায় “ওম নমঃ শিবায়” এবং মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্রের উচ্চারণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও শিব চালীসা এবং শিব সহস্রনাম পাঠ করা হয়।
আরতি: পূজা শেষ হলে আরতি অনুষ্ঠিত হয়। এই সময় একটি প্রদীপ জ্বালিয়ে তা শিবের মূর্তির সামনে দোলানো হয়। “জয় শিব ওমকারা” আরতি বিশেষভাবে গাওয়া হয়।
মহাশিবরাত্রি উপবাসের নিয়মাবলী:
ভক্তরা তাদের অনুগমন ও শারীরিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরনের উপবাস পালন করেন। যেমন-
নির্জলা উপবাস: এটি একটি পূর্ণ উপবাস, যেখানে কোনো খাবার বা জল খাওয়া হয় না। এটি বিশেষভাবে তারা পালন করেন যারা ভীষণ আত্মবিশ্বাসী এবং শারীরিকভাবে সুস্থ।
ফলাহার ব্রত: এই উপবাসে দুধ, ফল, বাদাম, এবং শুকনো ফল খাওয়া যায়। কিছু ভক্ত হালকা খাবারও গ্রহণ করেন, যা মূলত শাক-সবজি দিয়ে তৈরি হয়, যেমন আলু ও নুন দিয়ে তৈরি খাবার।
মহাশিবরাত্রির জন্য প্রস্তুতি:
উপবাস শুরুর আগে শরীরকে সুস্থ রাখতে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন এবং রাতের খাবারে ফল, সবজি, এবং তরল খাবার গ্রহণ করুন। উপবাসের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত আত্মিক শান্তি, ভক্তি এবং আত্মনিয়ন্ত্রণ।
মহাশিবরাত্রির মন্ত্রগুলি:
– ওম নমঃ শিবায়।
– ওম ত্রয়ম্বকং যাজামহে সুগন্ধিম্ পুষ্টি বহনম্ উর্বরুকমিবন্ধনান্ মৃ্ত্যুর্মুখশিয়া মা মৃতাত।
এছাড়াও শিব পুরাণ পাঠ করা যেতে পারে।
মহাশিবরাত্রি শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি একটি আত্মিক উত্থান এবং সাধনা। এই দিনে শিব ভক্তরা উপবাস পালন, মন্ত্র পাঠ, এবং পূজা অর্চনার মাধ্যমে নিজেদের আত্মিক উন্নতি সাধন করেন এবং শিবের অনুগ্রহ লাভের জন্য আত্মবিশ্বাসী হন।