হেঁচকি (Hiccups) সাধারণত পেটের বা ডায়াফ্রাম (যে পেশীটি শ্বাস নেয়ার সময় পেটের নীচে থাকে) অস্বাভাবিক সংকোচনের কারণে ঘটে। হেঁচকির ফলে, ডায়াফ্রাম দ্রুত সংকুচিত হয়, এবং ভোকাল কর্ড (স্বরের মধ্যে যে অংশ সঙ্গতভাবে শব্দ তৈরি করে) বন্ধ হয়ে যায়, যার ফলে হেঁচকি হয়।
হেঁচকির কারণ:
1. অতিরিক্ত খাবার খাওয়া: অনেক খাওয়া বা খুব তাড়াতাড়ি খাওয়ার ফলে পেটের অতিরিক্ত প্রসারণ হতে পারে, যা ডায়াফ্রামকে উত্তেজিত করে।
2. গরম বা ঠাণ্ডা খাবার পানীয়: তীব্র গরম বা ঠাণ্ডা খাবারের কারণে হেঁচকি হতে পারে, বিশেষ করে যদি একসঙ্গে তাপমাত্রা পরিবর্তন হয়।
3. গ্যাস বা বায়ু গেলা: খাবার খাওয়ার সময় বেশি বায়ু গেলা বা অতিরিক্ত সোডা পান করা।
4. অতিরিক্ত অ্যালকোহল বা মশলা: মদ্যপান বা মশলাদার খাবার খাওয়ার ফলে হেঁচকি হতে পারে।
5. মানসিক উত্তেজনা বা উদ্বেগ: মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা হেঁচকির সৃষ্টি করতে পারে।
6. গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ: এই রোগে পাকস্থলী থেকে অ্যাসিড গলায় উঠে আসে, যা ডায়াফ্রামকে উত্তেজিত করে এবং হেঁচকি সৃষ্টি করতে পারে।
7. অপর্যাপ্ত শ্বাস নেয়ার কারণে: দীর্ঘক্ষণ ধরে শ্বাস আটকে রাখা বা খুব তাড়াতাড়ি শ্বাস নেওয়ার কারণে হেঁচকি হতে পারে।
হেঁচকি নিরাময়ের উপায়:
1. গভীর শ্বাস নেওয়া: ধীরে ধীরে গভীর শ্বাস নিয়ে শ্বাস আটকে রাখা (প্রায় ১০-১৫ সেকেন্ড) সহায়ক হতে পারে। এটি ডায়াফ্রামের স্বাভাবিক কার্যক্রম ফিরিয়ে আনে।
2. পানি খাওয়া: ঠাণ্ডা বা গরম পানি খাওয়া হেঁচকি বন্ধ করতে সাহায্য করতে পারে, বিশেষত এক ঢোক পানি খুব ধীরে ধীরে পান করা।
3. চিনি খাওয়া: এক চামচ চিনি চিবিয়ে খেলে, এটি ত্বকের রিসেপ্টরকে উত্তেজিত করতে সাহায্য করতে পারে এবং হেঁচকি বন্ধ হতে পারে।
4. লেবুর রস: লেবুর রস খাওয়া বা লেবুর টুকরো চিবানো গ্যাস্ট্রিক কার্যক্রম পরিবর্তন করে এবং হেঁচকি বন্ধ করতে পারে।
5. ঠাণ্ডা বা গরম জলের কাপের সাথে শ্বাস নেওয়া: ঠাণ্ডা বা গরম জলের কাপের কাছ থেকে শ্বাস নেওয়ার মাধ্যমে ডায়াফ্রামের সংকোচন নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।
6. প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা: খাবার খাওয়ার সময় ধীরে ধীরে খাওয়া, অতিরিক্ত মশলা বা তেলজাতীয় খাবার না খাওয়া এবং মানসিক চাপ কমানো হেঁচকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
যদি হেঁচকি দীর্ঘস্থায়ী হয়ে যায় (যেমন ৪৮ ঘণ্টার বেশি), তবে এটি কোনো অন্তর্নিহিত রোগের লক্ষণ হতে পারে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।