কলকাতা খাদ্যপ্রেমীদের শহর! এখন জেন জি-র (১৯৯৭-২০১২ সালে জন্মগ্রহণকারী যুবক-যুবতীদের) নতুন নতুন ট্রেন্ডস (Gen Z Food Trends) দিয়ে ভরে উঠেছে। ২০২৫ সালে এই প্রজন্মের খাদ্য পছন্দগুলি শুধু স্বাদের খোঁজ নয়, বরং সাসটেইনেবিলিটি, মেন্টাল হেলথ এবং সোশ্যাল মিডিয়া-চালিত ভাইরাল মুহূর্তগুলির সাথে জড়িত। গ্লোবাল ট্রেন্ডস যেমন প্ল্যান্ট-বেসড ডায়েট, সোয়ালটি (সুইট-অ্যান্ড-সলটি) ফ্লেভারস এবং ফিউশন কুইজিনের প্রভাবে কলকাতার স্ট্রিট ফুড থেকে ক্যাফে-কালচার পর্যন্ত সবকিছু বদলে গেছে। টোস্টের রিপোর্ট অনুসারে, ৭১% জেন জি-র খাদ্যপ্রেমীরা হেলথ-কনশাস অপশন খোঁজেন, যখন ৬১% সাসটেইনেবল সোর্সিং-এর জন্য অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে রাজি। কলকাতায় এই ট্রেন্ডস দুর্গাপূজার ফুড ফেস্টিভ্যাল থেকে ইনস্টাগ্রাম রিলস পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে, যা স্থানীয় ফ্লেভারসকে গ্লোবাল টুইস্ট দিয়ে নতুন করে জীবন্ত করছে।
Also Read | ৩১তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রী
প্রথম এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় ট্রেন্ড হলো বাঙালি স্ট্রিট ফুডের ফিউশন। ঐতিহ্যবাহী পুচকা এবং কাঠি রোল এখন কোরিয়ান-স্টাইল স্পাইসি মায়ো বা থাই বেসিল দিয়ে রিমিক্স হচ্ছে। পার্ক স্ট্রিট এবং গড়িয়াহাটের পপ-আপ স্টলসে ‘সোয়াইসি’ (সুইট-স্পাইসি) পুচকা ম্যাঙ্গো-চিলি ফিউশন দিয়ে তৈরি হয়েছে, যা টিকটক চ্যালেঞ্জের মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। দুর্গাপূজা ২০২৫-এ ফুড ফেস্টিভ্যালে এই ডিশগুলি হাজারো যুবকদের আকর্ষণ করেছে। সল্ট লেকের বাইজার এশিয়ায় কোরিয়ান হট ডগস এবং জাপানিজ করায়াগে মাস্টার্ড অয়েলের দেশি টুইস্ট সহ পরিবেশিত হচ্ছে, যা গ্লোবাল জেন জি ট্রেন্ডস যেমন কোরিয়ান-মেক্সিকান ট্যাকোসের সাথে মিলে যায়। রুবিক্স ফুডসের রিসার্চ অনুসারে, জেন জি-র মধ্যে ‘সোয়ালটি’ ক্রেভিং ৩২% বাড়বে, যা কলকাতার চাট-কালচারে পিকল-লোডেড ফ্রাইজ বা ব্ল্যাক গার্লিক পুচকায় প্রতিফলিত হচ্ছে। এই ফিউশনগুলি শুধু স্বাদ বাড়ায় না, বরং সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ারযোগ্য করে তোলে, যেখানে ৪০% জেন জি নতুন রেস্তোরাঁ ইনস্টাগ্রাম থেকে আবিষ্কার করে।
Also Read | যোগীরাজ্যে আদিবাসী বাঙালি শ্রমিককে ‘কচুকাটা’! ক্ষোভ উগড়ে দিল TMC
দ্বিতীয় ট্রেন্ড হলো প্ল্যান্ট-বেসড এবং সাসটেইনেবল বাঙালি কমফর্ট ফুড। ভারী মটন কোশা ছেড়ে জ্যাকফ্রুট (কাঁঠাল) বা সয় চাপ দিয়ে ডাল মাখনি-স্টাইল কারি তৈরি হচ্ছে। সিয়েনা ২.০-এর মতো ক্যাফেগুলিতে হেয়ারলুম রাইস বোলস স্লো-কুকড ভেজিটেবল ঝোল এবং গট-ফ্রেন্ডলি ফার্মেন্টেড সাইডস (যেমন পিকলড র ম্যাঙ্গো চাট) জনপ্রিয়। এটি ২০২৫-এর ‘মুডফুল মোমেন্টস’ ট্রেন্ডের সাথে যুক্ত, যেখানে ৫৮% জেন জি ইমোশনাল কমফর্টের জন্য টার্মারিক-জিঞ্জার লাসি বেছে নেয়। বিহালার ক্লাউড কিচেনে মিসো-ইনফিউজড মোতিচুর লাড্ডু ‘সোয়ালটি’ স্ন্যাকস অফার করছে, যা গ্লোবাল ট্রেন্ডস যেমন সি মস-ইনফিউজড স্মুদিসের সাথে মিলে। বাঙালি রিভাইভাল স্পটস যেমন ব্যানানা লিফ র্যাপসে পনির টিক্কা পরিবেশন করে জিরো-ওয়েস্ট প্রমোট করছে। ওভি গ্রুপের মার্চ ২০২৫ রিপোর্ট অনুসারে, জেন জি-র গ্লোবাল এক্সপোজার এক্সোটিক ফ্লেভারস খোঁজে, যা কলকাতায় হাইপার-লোকাল ইনগ্রেডিয়েন্টস দিয়ে অভিযোজিত হচ্ছে।
Also Read | অবসরের দুশ্চিন্তা শেষ! এখন থেকে এনপিএস হবে স্থায়ী পেনশন স্কিম, জানুন নতুন নিয়ম
তৃতীয়ত, গ্লোবাল ওয়েলনেস বোলস এবং মুড-বুস্টিং ইটস ট্রেন্ডিং। টিকটকের প্রভাবে এশিয়া কিচেন বাই মেইনল্যান্ড চায়নায় কাস্টমাইজেবল পোক-স্টাইল বোলস উত্তর থাই ফ্লেভারস সহ কুইনোয়া-মিসো স্যালমন অলটারনেটিভস (টোফু ভার্সন ভেগানদের জন্য) পরিবেশিত হচ্ছে। নিউ টাউনের ক্যাফেগুলিতে ‘ক্যাওস কেকস’—ডিকনস্ট্রাকটেড রসগোল্লা ম্যাচা টুইস্ট সহ—সেন্সরি হিটের জন্য শেয়ার হচ্ছে। টেস্টওয়াইজের রিসার্চে বলা হয়েছে, জেন জি-র ৫৮% ইমোশনাল কমফর্ট ফুডস খোঁজে, যখন ৭১% হেলথ-ফোকাসড স্পটস পছন্দ করে। বয়ল্ড এগ রাইতা বোলস ফ্রাইড পকোড়ার চেয়ে কুইক প্রোটিন-প্যাকড গ্র্যাবস হিসেবে জনপ্রিয়। চার্টওয়েলসের ইমার্জিং ফুড ট্রেন্ডস রিপোর্টে কটেজ চিজ এবং মিসো-র মতো ইনগ্রেডিয়েন্টস জেন জি-র অ্যাডভেঞ্চারাস ইটিং-এর অংশ, যা কলকাতায় শাকশুকা-অন-বেগেলস বা মাশরুম বিরিয়ানিতে দেখা যায়।
চতুর্থ ট্রেন্ড হলো স্ন্যাকিফিকেশন এবং ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়া বাইটস। জেন জি পূর্ণ খাবার ছেড়ে শেয়ারেবল মিনি-হিটস খায়, যেমন পিকল-লোডেড ফ্রাইজ বা ব্ল্যাক গার্লিক পুচকা। সল্ট লেকের ফুড পার্কসে কোরিয়ান কর্ন ডগস বাঙালি চাটনি সহ রিলস-এ ভাইরাল হচ্ছে। ইনস্টাগ্রামে ৪০% খাদ্য আবিষ্কার করে, এবং কলকাতার যুবকরা ‘হট গার্ল পিকলস’ ফিউশন চাটস চেজ করে। হোম চেফস এক্স-এ সিতাফল আইসক্রিম সুন্দেয় বা গুয়াভা চাটের মতো গিল্ট-ফ্রি স্ন্যাকিং হ্যাকস শেয়ার করছে, যা ৩২% ‘সোয়ালটি’ ক্রেভিং-এর সাথে মিলে। এই ট্রেন্ডস ‘ফ্রিকি ম্যাশআপস’ যেমন পিকল ফ্লেভার ইন আনেক্সপেকটেড প্লেসেস প্রমোট করে, যা রাবিক্স ফুডসের নেক্সট ফ্লেভার রিপোর্টে হাইলাইট করা হয়েছে।
পঞ্চমত, অথেনটিক এশিয়ান এবং ইন্টারন্যাশনাল পপ-আপস কলকাতার সিনে বাজমেন্ট তৈরি করছে। থাই কারি ইন অ্যাপাম বোলস বা জাপানিজ-ইন্সপায়ার্ড ওকোনোমিয়াকি লোকাল প্রনস সহ পপ-আপসে যুবকরা ভিড় করে। ব্যালিগঞ্জের ব্রাঞ্চ স্পটসে শাকশুকা-অন-বেগেলস জেন জি-র গ্লোবাল এক্সপোজার প্রতিফলিত করে। টাচবিস্ট্রোর ২০২৪ রিপোর্টে ৬৪% জেন জি সপ্তাহে অন্তত একবার ডাইন আউট করে, এবং তারা ইথিক্যাল স্পটস যেমন সীওয়েড ইন স্যালাডসের জন্য ফ্লক করে, যা নিউট্রিয়েন্ট বুস্ট দেয়। এক্স থ্রেডস লোকাল ফুডিজ নিহারি র্যাপস বা মাশরুম বিরিয়ানির মতো ডাইভার্স, ভেজি-ফরওয়ার্ড অ্যাডভেঞ্চারস প্রমোট করে। পিনটেরেস্টের প্রেডিক্টস রিপোর্টে বলা হয়েছে, জেন জি সেন্সরি-বেসড এক্সপিরিয়েন্স খোঁজে—স্বাদ, টেক্সচার এবং ফিলের মিশ্রণ।
এই ট্রেন্ডস কলকাতার জেন জি-কে ডিজিটাল নেটিভ হিসেবে দেশি হার্ট সহ ফিউজ করে, যা ওয়েলনেস, হুইমসি এবং ওয়ার্ল্ডলি টেস্টস মিশ্রিত করে। টাউচবিস্ট্রোর রিপোর্টে ৩৫% সপ্তাহে কয়েকবার ডাইন আউট করে, এবং তারা টিকটক বা এক্স-এ লোকাল ইনফ্লুয়েন্সারস ফলো করে পরবর্তী ভাইরাল স্পট খোঁজে। এই শহরের ফুড ম্যাপ পূজা পান্ডালের মতো দ্রুত বদলাচ্ছে। কলকাতার যুবকরা শুধু খায় না, বরং খাদ্যকে আইডেনটিটি এবং এক্সপিরিয়েন্স হিসেবে গ্রহণ করে। ২০২৫-এ এই ট্রেন্ডস অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মধ্যেও ডেলি ইন্ডালজেন্সকে এলিভেট করে, যেমন ইরেওয়ন স্মুদিস বা লিকুইড ডেথ ওয়াটারের মতো। ফুড অ্যাজ থার্ড স্পেস—সোশ্যালাইজিং-এর জন্য—জেন জি-র কোর পার্ট, যা ক্যাফে থেকে স্ট্রিট স্টলস পর্যন্ত ছড়িয়ে। এই ট্রেন্ডস শুধু খাদ্য নয়, বরং কালচারাল শিফট, যা কলকাতাকে গ্লোবাল ফুড ক্যাপিটাল হিসেবে গড়ে তুলবে। যুবকরা লোকাল ইনফ্লুয়েন্সারস ফলো করে নতুন স্পটস আবিষ্কার করুন—শহরের ফুড সিন দ্রুততম বিকশিত হচ্ছে!


