মাস্ক ছাড়া বাইরে বেরোন ? শরীরে বাসা বাঁধবে মারণ রোগ ক্যান্সার

ভারতে ক্যান্সারের (cancer) ঘটনা ক্রমশ বাড়ছে, এবং এই উদ্বেগজনক প্রবণতার পিছনে একাধিক কারণ জড়িত রয়েছে বলে জানিয়েছেন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ড. কৃতিগা শ্রীধর। সম্প্রতি ‘দ্য হিন্দু’-র…

Air pollution is increasing the risk of cancer

ভারতে ক্যান্সারের (cancer) ঘটনা ক্রমশ বাড়ছে, এবং এই উদ্বেগজনক প্রবণতার পিছনে একাধিক কারণ জড়িত রয়েছে বলে জানিয়েছেন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ড. কৃতিগা শ্রীধর। সম্প্রতি ‘দ্য হিন্দু’-র ‘ইন ফোকাস’ পডকাস্টে সাংবাদিক জুবেদা হামিদ এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি ক্যান্সারের কারণ হিসেবে পরিবেশ দূষণ এবং রাসায়নিক পদার্থের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেছেন।

   

২০২৫ সালে ভারতে ক্যান্সারের সংখ্যা ১৫.৭ লক্ষে পৌঁছবে বলে অনুমান করা হয়েছে। বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে ক্যান্সারের হার বৃদ্ধি গবেষকদের জন্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তামাক সেবন, মদ্যপান এবং স্থূলতার মতো পরিচিত ঝুঁকির কারণগুলোর পাশাপাশি পরিবেশ দূষণ এখন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বলে মনে করা হচ্ছে।

Advertisements

আরো দেখুন চার বনাম পাঁচের লড়াইয়ে জমজমাটি প্লে-অফ

ক্যান্সারের (cancer) জন্য একাধিক কারণ

ড. শ্রীধর, যিনি ক্রনিক ডিজিজ কন্ট্রোল সেন্টারের ক্যান্সার এপিডেমিওলজি ইউনিটের প্রধান, জানান যে ক্যান্সারের কোনো একক কারণ নেই। তিনি বলেন, “এটি একটি বহুমুখী রোগ। তামাক, অ্যালকোহল এবং অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের পাশাপাশি পরিবেশগত কারণগুলো এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।”

তিনি উল্লেখ করেন যে বায়ু দূষণ, জল ও মাটিতে থাকা চিরস্থায়ী রাসায়নিক পদার্থ (ফরএভার কেমিক্যালস) এবং অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবারের ব্যবহার বৃদ্ধি ক্যান্সারের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। “আমরা এই কারণগুলো সম্পর্কে কতটা জানি এবং এগুলো কীভাবে ক্যান্সার সৃষ্টি করে, তা নিয়ে গবেষণা চলছে। কিন্তু এটা স্পষ্ট যে এগুলোর প্রভাব উপেক্ষা করা যায় না,” তিনি যোগ করেন।

পরিবেশ দূষণের ভূমিকা

ভারতে বায়ু দূষণ একটি প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ড. শ্রীধর জানান, “বায়ুতে থাকা সূক্ষ্ম কণা (পিএম ২.৫), শিল্প নির্গমন, যানবাহনের ধোঁয়া এবং জৈব জ্বালানি পোড়ানো থেকে উৎপন্ন দূষকগুলো ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।” তিনি আরও বলেন, জল ও মাটিতে শিল্প দূষণের ফলে ভারী ধাতু এবং রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি মূত্রাশয়, প্রোস্টেট এবং রক্তের ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। “এই রাসায়নিকগুলো দীর্ঘমেয়াদে শরীরে জমা হয় এবং কোষে পরিবর্তন ঘটিয়ে ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে,” তিনি ব্যাখ্যা করেন।

তরুণদের মধ্যে ক্যান্সার বৃদ্ধি

একটি উদ্বেগজনক তথ্য হলো, তরুণদের মধ্যে ক্যান্সারের (cancer) হার বাড়ছে। ড. শ্রীধর বলেন, “আগে যেসব ক্যান্সার বয়স্কদের মধ্যে দেখা যেত, যেমন কোলোরেক্টাল বা স্তন ক্যান্সার, তা এখন ২০, ৩০ বা ৪০ বছর বয়সীদের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে।” তিনি এর জন্য জীবনযাত্রার পরিবর্তন, প্রক্রিয়াজাত খাবারের ব্যবহার বৃদ্ধি এবং পরিবেশগত বিষাক্ত পদার্থের প্রভাবকে দায়ী করেন। “শৈশব বা কৈশোরে এই রাসায়নিকের সংস্পর্শে আসা পরবর্তী জীবনে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে,” তিনি জানান।

গবেষণায় কী বলছে?

ড. শ্রীধরের মতে, পরিবেশ দূষণ এবং ক্যান্সারের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। “আমরা জানি যে কিছু রাসায়নিক, যেমন পলিসাইক্লিক অ্যারোম্যাটিক হাইড্রোকার্বন (পিএএইচ), ফর্মালডিহাইড এবং বেনজিন, ক্যান্সার সৃষ্টি করে। কিন্তু এগুলোর সঠিক প্রভাব এবং কতটা দায়ী, তা নির্ধারণ করতে আরও তথ্য প্রয়োজন,” তিনি বলেন। তিনি উল্লেখ করেন, ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে শিল্পায়ন এবং নগরায়ণের ফলে দূষণ বেড়েছে, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

ব্যক্তিগত স্তরে কী করা যায়?

ড. শ্রীধর ব্যক্তিগত স্তরে সতর্কতার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমরা দূষণ পুরোপুরি এড়াতে পারি না, তবে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের মাধ্যমে ঝুঁকি কমাতে পারি।” তিনি পরামর্শ দেন:
তাজা, অপ্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া।

ধূমপান ও মদ্যপান এড়ানো।

নিয়মিত ব্যায়াম করা।

বায়ু দূষণ বেশি থাকলে মাস্ক ব্যবহার করা।

জল ফিল্টার করে পান করা।

তিনি বলেন, “সরকারি নীতি এবং জনসচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি ব্যক্তিগত উদ্যোগও গুরুত্বপূর্ণ।”

ভারতের ক্যান্সার পরিস্থিতি

ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর তথ্য অনুযায়ী, ভারতে প্রতি বছর প্রায় ১৪ লক্ষ নতুন ক্যান্সারের ঘটনা ঘটে। ২০২৫ সালের মধ্যে এই সংখ্যা ১২% বৃদ্ধি পেয়ে ১৫.৭ লক্ষে পৌঁছতে পারে। পুরুষদের মধ্যে ফুসফুস ও মুখের ক্যান্সার এবং মহিলাদের মধ্যে স্তন ও জরায়ুমুখের ক্যান্সার সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। ড. শ্রীধর বলেন, “তামাক এখনও প্রধান কারণ, কিন্তু পরিবেশ দূষণের ভূমিকা উপেক্ষা করা যায় না।”

সরকারি পদক্ষেপের প্রয়োজন

ড. শ্রীধর জোর দিয়ে বলেন, ক্যান্সার প্রতিরোধে সরকারি হস্তক্ষেপ অপরিহার্য। তিনি বলেন, “দূষণ নিয়ন্ত্রণে কঠোর আইন, শিল্প নির্গমন পর্যবেক্ষণ এবং জনস্বাস্থ্য নীতি জোরদার করা প্রয়োজন।” তিনি আরও বলেন, ক্যান্সার স্ক্রিনিং এবং প্রাথমিক সনাক্তকরণের জন্য সচেতনতা বাড়াতে হবে। “আমাদের গবেষণা এবং নীতি একসঙ্গে কাজ করলে এই সমস্যা মোকাবিলা করা সম্ভব,” তিনি আশা প্রকাশ করেন।

ড. কৃতিগা শ্রীধরের সাক্ষাৎকার ভারতে ক্যান্সারের ক্রমবর্ধমান হারের পিছনে পরিবেশ দূষণ এবং রাসায়নিক পদার্থের সম্ভাব্য ভূমিকার উপর আলোকপাত করেছে। তিনি জানান, যদিও তামাক এবং জীবনযাত্রার কারণগুলো প্রধান দায়ী, পরিবেশ দূষণ একটি উদীয়মান হুমকি হয়ে উঠেছে। এই সমস্যা মোকাবিলায় ব্যক্তিগত সচেতনতা এবং সরকারি পদক্ষেপের সমন্বয় জরুরি। ভারতের জনস্বাস্থ্যের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ, যার সমাধানে সময়মতো পদক্ষেপ প্রয়োজন।