বাঙালির খাওয়ার পাতে শাকের গুরুত্ব অপরিসীম (Leafy Vegetables)। শাক শুধুমাত্র স্বাদই বাড়ায় না, বরং পুষ্টিগুণে ভরপুর হওয়ায় শরীরের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। পুষ্টিবিদরা বলছেন, প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় বিভিন্ন ধরনের শাক অন্তর্ভুক্ত করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, হজমশক্তি উন্নত হয় এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে। বাঙালির ঐতিহ্যবাহী খাবারের তালিকায় শাকের বিশেষ স্থান রয়েছে, এবং এখানে আমরা এমন পাঁচটি শাকের কথা বলব যা প্রতিদিনের খাবারে রাখলে স্বাস্থ্য ও স্বাদ দুই-ই সমৃদ্ধ হবে।
পালং শাক
পালং শাক বাঙালির পাতে সবচেয়ে জনপ্রিয় শাকগুলির মধ্যে একটি। এটি আয়রন, ভিটামিন এ, সি এবং কে-এর চমৎকার উৎস। পালং শাক রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। পুষ্টিবিদদের মতে, “পালং শাক হজমশক্তি উন্নত করে এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর, যা ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়।” বাঙালিরা পালং শাক দিয়ে তরকারি, ভাজা বা স্যুপ তৈরি করে খান। এটি আলু বা পনিরের সঙ্গে মিশিয়ে রান্না করলে স্বাদ দ্বিগুণ হয়।
নোটে শাক
নোটে শাক বা আমরান্থ শাক বাঙালির পাতে আরেকটি প্রিয় উপাদান। এই শাক ভিটামিন সি, আয়রন এবং ক্যালসিয়ামে সমৃদ্ধ। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এবং হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক। নোটশাক সাধারণত ভেজে বা তরকারি হিসেবে খাওয়া হয়। কলকাতার বাজারে এই শাকের দাম প্রতি কেজি ২০-২৮ টাকা, যা এটিকে সাশ্রয়ী এবং সহজলভ্য করে তুলেছে। পুষ্টিবিদরা পরামর্শ দেন, নোটশাক রোজ খাদ্যতালিকায় রাখলে ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
পুঁইশাক
পুঁইশাক বা মালাবার স্পিনাচ বাঙালির ঘরে ঘরে প্রিয়। এটি ফাইবার, ভিটামিন এ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। পুঁইশাক হজমশক্তি বাড়ায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এটি আলু, বেগুন বা ইলিশ মাছের সঙ্গে রান্না করে খাওয়া হয়। পুঁইশাকের ডাঁটা দিয়ে তৈরি তরকারি বাঙালি রান্নাঘরে বিশেষ জনপ্রিয়। এই শাক প্রতিদিন খেলে চোখের স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
মেথি শাক
মেথি শাক বাঙালির খাবারে তুলনামূলকভাবে কম ব্যবহৃত হলেও এর পুষ্টিগুণ অসাধারণ। এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে, রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে এবং কোলেস্টেরল কমাতে সহায়ক। মেথি শাকের হালকা তেতো স্বাদ অনেকের পছন্দ। এটি ভেজে বা তরকারি হিসেবে খাওয়া যায়। পুষ্টিবিদরা বলেন, মেথি শাক গর্ভবতী মহিলাদের জন্য বিশেষ উপকারী এবং এটি দুধ উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে।
কলমি শাক
কলমি শাক বা ওয়াটার স্পিনাচ বাঙালির পাতে আরেকটি জনপ্রিয় শাক। এটি ভিটামিন এ, সি এবং খনিজ পদার্থে সমৃদ্ধ। কলমি শাক হজমে সহায়ক এবং শরীরের প্রদাহ কমায়। এটি সাধারণত ভাজা বা ডালের সঙ্গে রান্না করে খাওয়া হয়। কলমি শাকের কোমল পাতা এবং ডাঁটা দুটোই রান্নায় ব্যবহার করা যায়। এটি রক্ত পরিশোধন এবং ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
সেপ্টেম্বরে পার্সোনাল লোনের সুদের হার! কোন ব্যাঙ্ক দিচ্ছে সবচেয়ে কম হার?
পুষ্টিবিদদের পরামর্শ
পুষ্টিবিদরা বলছেন , “এই শাকগুলি প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় রাখলে শরীরের পুষ্টির চাহিদা পূরণ হয়। তবে, শাক ভালোভাবে ধুয়ে এবং সঠিকভাবে রান্না করে খাওয়া উচিত।” তিনি আরও জানান, শাক বেশি সিদ্ধ করলে এর পুষ্টিগুণ নষ্ট হতে পারে, তাই হালকা ভাপে বা সামান্য রান্না করে খাওয়া ভালো।
বাঙালির খাবারে শাকের এই বৈচিত্র্য শুধু স্বাদই বাড়ায় না, বরং স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। বাজারে এই শাকগুলি সহজলভ্য এবং সাশ্রয়ী মূল্যে পাওয়া যায়। তাই, প্রতিদিনের খাবারে এই পাঁচটি শাক রাখলে স্বাস্থ্য ও স্বাদের এক অপূর্ব সমন্বয় ঘটবে।