বর্তমান গবেষণায় দেখা গেছে, এক কাপ কোকো (Cocoa) স্ট্রেসের সময় চর্বিযুক্ত খাবারের উপর ক্ষতিকর প্রভাবকে কমিয়ে দিতে সাহায্য করতে পারে। স্ট্রেসের সময় মানুষের খাবারের পছন্দ হৃদরোগের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারে, এমনটাই জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। নতুন এক গবেষণায় জানা গেছে, চর্বিযুক্ত খাবারের সঙ্গে এক কাপ কোকো খাওয়া শরীরের উপর কিছু নেতিবাচক প্রভাব কমিয়ে দিতে পারে।
গবেষকরা বলছেন, স্ট্রেসের সময় আমরা যে খাবারগুলি খাই, তা আমাদের শরীরের উপর ইতিবাচক বা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। কিন্তু নতুন একটি ছোটো গবেষণায় এই সিদ্ধান্তে পৌঁছানো হয়েছে যে, চর্বিযুক্ত খাবারের সঙ্গে যদি কোকো খাওয়া হয়, যা ফ্ল্যাভানলসমৃদ্ধ, তবে সেই খাবারের প্রভাব কিছুটা কমিয়ে দেয়।
ফ্ল্যাভানল হল একটি রাসায়নিক যৌগ যা কিছু খাবারে এবং পানীয়তে পাওয়া যায়, যেমন আপেল এবং চায়ে। ফ্ল্যাভানলগুলি স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী হতে পারে, যার মধ্যে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং হৃদরোগের সুরক্ষা অন্তর্ভুক্ত। গবেষকরা জানিয়েছেন, যারা স্ট্রেসের সময় চর্বিযুক্ত খাবারের দিকে আকৃষ্ট হন বা যেহেতু তা সহজে পাওয়া যায়, তাদের জন্য কোকো বা সবুজ চা খাওয়া অনেকটা উপকারি হতে পারে।
গবেষণার ফলাফল
গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন বর্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. ক্যাটরিনা রেনডেইরো। তিনি বলেছেন, “আমরা জানি যে, স্ট্রেসের সময় মানুষ সাধারণত চর্বিযুক্ত খাবারের দিকে ঝুঁকে পড়ে। আমরা আগে দেখেছি যে, চর্বিযুক্ত খাবার শরীরের ভাস্কুলার (রক্তনালীর) পুনরুদ্ধারে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। এই গবেষণায় আমরা দেখতে চেয়েছিলাম, ফ্ল্যাভানলসমৃদ্ধ খাবার যদি চর্বিযুক্ত খাবারের সঙ্গে খাওয়া হয়, তাহলে তা শরীরের উপর স্ট্রেসের নেতিবাচক প্রভাব কমিয়ে দিতে পারে কিনা।”
পূর্ববর্তী এক গবেষণায়, বর্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা দেখেছিলেন, চর্বিযুক্ত খাবার রক্তনালীর কার্যকারিতা এবং মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, যখন ফ্ল্যাভানলসমৃদ্ধ খাবার এই কাজটি করতে পারে এবং স্ট্রেসের সময় রক্তনালীর কার্যকারিতা সুরক্ষিত রাখতে পারে।
গবেষণার পদ্ধতি
গবেষণাটি ২৩ জন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক অংশগ্রহণকারীর উপর পরিচালিত হয়েছিল। তাদেরকে প্রাতঃরাশে ২টি বাটার ক্রোইসান্ট, ১০ গ্রাম লবণ মাখন, ১.৫ টুকরো চেডার চিজ এবং ২৫০ মিলি সম্পূর্ণ দুধ খেতে দেওয়া হয়েছিল। এর পর তাদের মধ্যে এক দলকে ফ্ল্যাভানলসমৃদ্ধ কোকো পানীয় এবং অন্য দলকে ফ্ল্যাভানল কম কোকো পানীয় খাওয়ানো হয়।
এরপর, তাদের একটি মানসিক গাণিতিক পরীক্ষা করতে বলা হয়, যাতে তাদের দ্রুততার সাথে উত্তর দিতে হয় এবং ভুল হলে জানিয়ে দেওয়া হয়। এই পরীক্ষার সময়, বিজ্ঞানীরা তাদের বাহুতে রক্তপ্রবাহ, হৃদস্পন্দন এবং শরীরের অক্সিজেনের পরিমাণ পরিমাপ করেন।
গবেষণার ফলাফল থেকে জানা গেছে, স্ট্রেসের সময় চর্বিযুক্ত খাবার এবং কম ফ্ল্যাভানলযুক্ত পানীয় খাওয়ার পর রক্তনালীর কার্যকারিতা কমে যায় এবং তা ৯০ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। তবে, ফ্ল্যাভানলসমৃদ্ধ কোকো পানীয় খাওয়ার ফলে এই নেতিবাচক প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়া যায় এবং রক্তনালীর কার্যকারিতা সুরক্ষিত থাকে।
ফ্ল্যাভানলসমৃদ্ধ খাবারের গুরুত্ব
গবেষকরা বলেছেন, বাজারে আমরা যা কোকো পাই তা সাধারণত প্রক্রিয়াজাত হয়ে থাকে। তবে যদি আমরা অল্প প্রক্রিয়াজাত কোকো খাই, তবে তা আমাদের জন্য অনেক উপকারী হতে পারে। এবং যাদের কোকো পানীয় খাওয়া পছন্দ নয়, তারা ফ্ল্যাভানল পাওয়ার জন্য অন্যান্য খাবারও খেতে পারেন, যেমন সবুজ চা, কালো চা এবং বেরি।
ড. ক্যাটরিনা রেনডেইরো আরও বলেন, “যারা স্ট্রেসের সময় তাড়াহুড়ো করে চর্বিযুক্ত খাবারের দিকে ঝুঁকেন, অথবা যারা উচ্চ চাপের কাজ করেন এবং সময়ের অভাবে সুস্থ খাবার খেতে পারেন না, তারা যদি এই ছোট পরিবর্তনগুলি করেন, তবে তাদের স্বাস্থ্য উপকারিত হতে পারে।”
এই গবেষণাটি আমাদের জানিয়ে দিয়েছে যে, স্ট্রেসের সময় যদি আমরা চর্বিযুক্ত খাবার খেতে চাই, তবে তা কেবল আমাদের শরীরের ক্ষতির কারণ হতে পারে। তবে, যদি আমরা সেই খাবারের সঙ্গে ফ্ল্যাভানলসমৃদ্ধ কোকো বা সবুজ চা খাই, তাহলে তা শরীরের উপর নেতিবাচক প্রভাব কমিয়ে দেবে এবং আমাদের হৃদরোগ ও রক্তচাপের স্বাস্থ্যে সহায়ক হতে পারে।
এটি আমাদের সচেতন করে যে, স্ট্রেসের সময় আমাদের খাদ্যাভ্যাসে সামান্য পরিবর্তন এনে বড় ধরনের স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া সম্ভব।