গ্যাস থেকেই কি হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা? কী বললেন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ

আদিত্য ঘোষ, কলকাতা: সেদিন এক ব্যক্তি ট্রেনে তাঁর বাকি সহ যাত্রীদের বলতে শোনা গেল যে, “গ্যাস (Gastric Problem) থেকে হ্যার্ট অ্যাটাক করে আমার এক পরিচিত…

doctor-arijit-ghosh-said-that-heart-attack-can-not-be-linked-with-gastric-problem

আদিত্য ঘোষ, কলকাতা: সেদিন এক ব্যক্তি ট্রেনে তাঁর বাকি সহ যাত্রীদের বলতে শোনা গেল যে, “গ্যাস (Gastric Problem) থেকে হ্যার্ট অ্যাটাক করে আমার এক পরিচিত মারা গিয়েছে (Gastric Problem)। খুব কম বয়স ছিল ছেলেটির।” শুধু তিনি নন, পাড়ার চায়ের দোকানে সবজান্তা সমরেশদার গলায় একই সুর। তিনি সেদিন সন্ধে বেলায় সবাইকে বলছেন, ” আজকাল কিন্তু খাওয়াদাওয়া একটু বুঝে করবে। গ্যাস থেকে হার্টের সমস্যা হয়ে মারা যাওয়া ঘটনা কিন্তু বেড়ে গিয়েছে।”

এছাড়াও মাঝেমধ্যেই সমাজমাধ্যমে অনেকে এই বিষয় নিয়ে দীর্ঘ মতামত লিখে থাকেন। কিন্তু সত্যিই কি গ্যাস থেকে হার্টের সমস্যা হতে পারে? খোঁজ নিল কলকাতা ২৪x৭। বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অরিজিৎ ঘোষ কলকাতা ২৪x৭ ফোনে জানালেন যে, ” এই রকম ভ্রান্ত ধারণা দিনে দিনে ছড়িয়ে পড়ছে।”  শুধু তাই নয়, তিনি আরও জানালেন যে, ” হার্টের সঙ্গে গ্যাসের কোনও সম্পর্ক নেই। গ্যাস থেকে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে না।”

   

স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন জাগতেই পারে, তাহলে যে কথিত আছে গ্যাসের ব্যথা আর হৃদ রোগের ব্যথা অনেকটা এক। চিকিৎসক অরিজিৎ জানালেন যে, ” সেটা কিন্তু ঠিক। বুকে ব্যথা, বুক ঝিঁঝি করা, মাথা ঘোরা, বাঁ হাত অবশ হয়ে যাওয়া, প্রচন্ড ঘাম হওয়া, হৃদ স্পন্দন বেড়ে যাওয়া এইসব কিন্তু খুব সাধারণ ঘটনা। প্রসঙ্গত হ্যার্ট-এর কোনও সমস্যা বা গ্যাসের কোনও সমস্যায় ওই উপসর্গগুলো দেখা যায়। এবার আপনি প্রশ্ন করতেই পারেন, কী দেখে বুঝব? আমার মতে আপনার বোঝার কিছু (Gastric Problem) নেই। বেগতিক দেখলেই আপনি সোজা হাসপাতালে চলে যাবেন।”

অফিসে একটানা বসে কাজ করে পিঠ জুড়ে ব্যথা! ধরণ ধরে চিনুন রোগ, রইল বিশেষজ্ঞের পাঁচ টিপস

একটু থেমে তিনি আরও যুক্ত করলেন, ” বুকের মধ্যিখানে যদি একটা ক্রমাগত ব্যথা হয়, সেই ব্যথা কিন্তু ভয়ঙ্কর। তবে ওই যে বললাম, ঐভাবে বলা সম্ভব নয়।” উদাহরণ স্বরূপ তিনি জানিয়েছেন যে, গ্যাসের ব্যথাও যে ভয়ঙ্কর রূপ নেয় এমনটাও ঘটেছে। তবে তার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়ে কিছু পরীক্ষা প্রয়োজন। মনে হচ্ছে আপনার হৃদ যন্ত্রের সমস্যা, এমন বলে কিছু হয় না। মনে হওয়ার কোনো জায়গা নেই। তিনি জানালেন যে, ” সে ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে র‍্যাপিড ইসিজি পরীক্ষা করা হয়। বুকে ব্যথা হওয়ার চার ঘণ্টা পরে ক্রপটি পরীক্ষা করা হয়, এছাড়াও আরও পরীক্ষা নিরীক্ষা করে আমরা নিশ্চিত হতে পারে কোনটা কীসের ব্যথা।”

সাধারণ গ্যাস হলে ঘরোয়া টোটকা কিংবা গ্যাসের ওষুধ খেয়েই কমে যায় বলে জানালেন ডাক্তার অরিজিৎ ঘোষ। কিন্তু হৃদ যন্ত্রের কোনও গোলযোগ হলে সেই সমস্যা কিন্তু গ্যাসের ওষুধ খেয়ে কমবে। আর আমরা ঠিক এইখানেই সময় নষ্ট করে ফেলি। যাদের আগে থেকেই হার্টের সমস্যা আছে কিংবা উচ্চরক্তচাপ বা কোলেস্টেরলের সমস্যা আছে তাঁদের কিন্ত বুকে ব্যথা হলেই সতর্ক হবেন। গ্যাস ভেবে ভুল করবেন না। কারণ গ্যাসের ব্যথা এবং হৃদ যন্ত্রের সমস্যার ব্যথার ধরণ প্রায় এক।

Uric Acid: ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে গেলে সব শেষ, জেনে নিন মুক্তির উপায়

তিনি এও যুক্ত করলেন যে গ্যাস থেকে কিন্তু হার্ট অ্যাটাক হয় না। হতে পারে না। উপরন্তু যাদের হার্টের সমস্যা আছে, ব্লকেজ আছে ইত্যাদি ক্ষেত্রেও কিন্তু গ্যাস হয়ে কোনও দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে না। তবে তিনি সবশেষে যুক্ত করলেন যে হার্টের বিষয়টা খুব জটিল। অনেকক্ষেত্রে দেখা হয়েছে যাদের প্রায় ৯৫% ব্লকেজ আছে তাঁদের কিছু হয়নি আবার খুব সামান্য ব্লকেজ দিয়েও কেউ হঠাৎ মারা গিয়েছে। তাই সবটা লিখে বা বুঝিয়ে বলা সম্ভব নয়। তবে গ্যাস থেকে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে না।