তামার পাত্রে হলুদ জল পান স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, জানুন এর গুণাগুণ

Drinking water in Copper Vessel: তামার পাত্রে রান্না করা খাবার হোক বা এতে সংরক্ষিত জল, উভয়ই স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মানুষ…

Health Benefits Drinking Copper Vessel girl

Drinking water in Copper Vessel: তামার পাত্রে রান্না করা খাবার হোক বা এতে সংরক্ষিত জল, উভয়ই স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মানুষ তামার পাত্র ব্যবহার করে আসছে। বিশেষজ্ঞরাও বলেন, তামার পাত্রে সংরক্ষিত জল স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এই জল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং হজম প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করে। তামার পাত্রে রাখা জল হৃদয়, কিডনি এবং চোখের জন্যও উপকারী। এছাড়াও, এটির অ্যান্টি-এজিং প্রভাব রয়েছে, যা আপনাকে দীর্ঘদিন যুবক রাখতে সাহায্য করে। তবে, তামার পাত্রে হলুদ জল পান করার উপকারিতা আরও বেশি। হলুদের প্রাকৃতিক গুণাগুণ এবং তামার পাত্রের স্বাস্থ্যকর বৈশিষ্ট্য একত্রিত হয়ে এটি একটি অত্যন্ত উপকারী পানীয়ে পরিণত হয়। আসুন, তামার পাত্রে হলুদ জল পানের স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং এটি সঠিকভাবে পান করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানি।

তামার পাত্রে (Copper Vessel)হলুদ জল পানের উপকারিতা

১. হজম শক্তি উন্নত করে
তামার পাত্রে সংরক্ষিত জল পান করলে হজম প্রক্রিয়া উন্নত হয় এবং পেটের বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তামা হজম এনজাইম উৎপাদনে সহায়তা করে, যা খাবার হজমে সহায়ক। এটি ফোলাভাব, গ্যাস এবং অম্বলের মতো সমস্যা প্রতিরোধ করে। হলুদের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল গুণ পাকস্থলীর প্রদাহ কমায় এবং হজম প্রক্রিয়াকে আরও মসৃণ করে। হলুদ জল পান করলে পেটের অস্বস্তি দূর হয় এবং খাবারের পুষ্টি শোষণের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

   

২. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
তামা একটি অপরিহার্য খনিজ, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করতে সহায়তা করে। তামার অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ভাইরাল বৈশিষ্ট্য শরীরকে বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। অন্যদিকে, হলুদে থাকা কারকিউমিন নামক যৌগ শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক। তামার পাত্রে হলুদ জল পান করলে শরীরের ইমিউন সিস্টেম আরও শক্তিশালী হয়, যা ঠান্ডা, জ্বর এবং অন্যান্য ভাইরাল সংক্রমণের ঝুঁকি কমায়।

৩. ত্বকের জন্য উপকারী
তামার পাত্রে হলুদ জল পান করলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে এবং বলিরেখা কমে। তামা শরীরে ফ্রি র‌্যাডিক্যালের ক্ষতি প্রতিরোধ করে, যা ত্বকের বার্ধক্য রোধে সহায়তা করে। এটি কোলাজেন উৎপাদনকে উৎসাহিত করে, যা ত্বককে মসৃণ ও স্থিতিস্থাপক রাখে। হলুদের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ ত্বকের প্রদাহ, ব্রণ এবং কালো দাগ কমাতে সহায়তা করে। নিয়মিত এই জল পান করলে ত্বকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায় এবং ত্বক সুস্থ থাকে।

৪. সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা
তামার অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য জলকে বিশুদ্ধ করে এবং এতে থাকা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ও জীবাণু ধ্বংস করে। তামার পাত্রে রাখা জল পান করলে শরীর সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত থাকে। এছাড়াও, হলুদের অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল গুণ শরীরের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে। এই জল পান করলে জয়েন্টে ব্যথা এবং প্রদাহ কমে, বিশেষ করে বাতের সমস্যায় এটি উপকারী।

৫. হৃদয় ও কিডনির জন্য উপকারী
তামার পাত্রে রাখা জল হৃদয়ের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। হলুদের কারকিউমিন হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে। এছাড়াও, তামার জল কিডনির কার্যকারিতা উন্নত করে এবং শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়। নিয়মিত এই জল পান করলে কিডনি সুস্থ থাকে এবং ইউরিনারি ইনফেকশনের ঝুঁকি কমে।

Advertisements

৬. অ্যান্টি-এজিং প্রভাব
তামার পাত্রে হলুদ জল পান করলে শরীরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা বার্ধক্যের লক্ষণগুলো কমায়। তামা এবং হলুদ উভয়ই শরীরের কোষের ক্ষতি প্রতিরোধ করে এবং ত্বক, চুল এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। এটি শরীরকে দীর্ঘদিন যুবক ও সতেজ রাখতে সহায়তা করে।
তামার পাত্রে হলুদ জল পানের সঠিক নিয়ম

তামার পাত্রে হলুদ জল পান করা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হলেও এটি সঠিক নিয়মে পান করা অত্যন্ত জরুরি। অতিরিক্ত তামা শরীরে জমা হলে তা ক্ষতিকর হতে পারে। তাই নিম্নলিখিত নিয়মগুলো মেনে চলা উচিত:

  • পাত্র পরিষ্কার রাখুন: তামার পাত্র নিয়মিত পরিষ্কার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। লেবুর রস বা ভিনেগার দিয়ে পাত্র পরিষ্কার করলে তামার মরিচা পড়ার সম্ভাবনা কমে।
  • সময়সীমা মেনে চলুন: জল তামার পাত্রে বেশিক্ষণ রাখা উচিত নয়। সাধারণত ৬-৮ ঘণ্টা জল রাখার পর তা পান করা উপযুক্ত। রাতে জল রেখে সকালে খালি পেটে পান করা সবচেয়ে ভালো।
  • হলুদের পরিমাণ: এক গ্লাস জলে এক চিমটি হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে পান করুন। অতিরিক্ত হলুদ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
  • বিরতি নিন: টানা ১৫-২০ দিন তামার পাত্রে হলুদ জল পান করার পর ২-৩ দিনের বিরতি নিন। এটি শরীরে তামার অতিরিক্ত জমা হওয়া প্রতিরোধ করবে।
  • সারাদিন পান নয়: তামার পাত্রের জল সারাদিন পান করা উচিত নয়। দিনে একবার, বিশেষ করে সকালে খালি পেটে পান করাই যথেষ্ট।

সতর্কতা

  • যাদের তামার প্রতি অ্যালার্জি আছে, তাদের এই জল পান করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
  • তামার পাত্রে অ্যাসিডিক পদার্থ যেমন লেবুর জল বা ভিনেগার রাখা উচিত নয়, কারণ এটি তামার সঙ্গে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটাতে পারে।
  • নিম্নমানের তামার পাত্র ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। সর্বদা খাঁটি তামার পাত্র ব্যবহার করুন।

তামার পাত্রে হলুদ জল পান করা স্বাস্থ্যের জন্য একটি প্রাকৃতিক এবং কার্যকরী উপায়। এটি হজম শক্তি বাড়ায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে, ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে এবং সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা দেয়। তবে, এর উপকারিতা পেতে সঠিক নিয়ম মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তামার পাত্রে হলুদ জল পানের অভ্যাস গড়ে তুলে আপনি সুস্থ ও সতেজ জীবনযাপন করতে পারেন। তবে, যেকোনো নতুন অভ্যাস শুরু করার আগে ডাক্তার বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া উচিত, বিশেষ করে যদি আপনার কোনো বিশেষ স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে।

আমাদের Google News এ ফলো করুন

২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।

Google News Follow on Google News