৮০ শতাংশ ভারতীয় মহিলার মধ্যে মেলাসমা, পিআইএইচ সমস্যা: Report

ভারতে ত্বকের পিগমেন্টেশনের সমস্যা এখন দিন দিন গুরুতর আকার ধারণ করছে। ত্বকে কালো দাগ বা মেলাসমা (Melasma) এবং পোস্ট-ইনফ্লেমেটরি হাইপারপিগমেন্টেশন (PIH) সহ নানা ধরনের পিগমেন্টারি…

Indian woman's face with melasma and PIH

ভারতে ত্বকের পিগমেন্টেশনের সমস্যা এখন দিন দিন গুরুতর আকার ধারণ করছে। ত্বকে কালো দাগ বা মেলাসমা (Melasma) এবং পোস্ট-ইনফ্লেমেটরি হাইপারপিগমেন্টেশন (PIH) সহ নানা ধরনের পিগমেন্টারি সমস্যা এখন ভারতীয় নারীদের মধ্যে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে ভারতের বৈচিত্র্যময় জনসংখ্যার মধ্যে এই ধরনের ত্বকের সমস্যার পরিমাণ বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পিগমেন্টেশন সমস্যাগুলি কেবল একটি প্রসাধনী সমস্যা নয়, এটি আত্মবিশ্বাস এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উপরও গভীর প্রভাব ফেলে।

সম্প্রতি এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ভারতে প্রায় ৮০ শতাংশ মহিলা কোনো না কোনো পিগমেন্টেশনের সমস্যায় ভুগছেন। মেলাসমা বিশেষ করে ভারতীয় নারীদের মধ্যে খুবই সাধারণ একটি পিগমেন্টারি সমস্যা। সাধারণত ৪০ থেকে ৬৫ বছর বয়সের প্রায় ২০-৩০ শতাংশ মহিলা মেলাসমায় আক্রান্ত হন। মেলাসমার ক্ষেত্রে মুখে বাদামি থেকে ধূসর-বাদামি বর্ণের দাগ দেখা যায় এবং এই রোগে আক্রান্তদের প্রায় ৯০ শতাংশই মহিলা।

   

মেলাসমা ও পিআইএইচের কারণসমূহ
মেলাসমার প্রধান কারণগুলির মধ্যে রয়েছে অতিরিক্ত সূর্যালোকের সংস্পর্শ, হরমোনাল পরিবর্তন (যেমন গর্ভাবস্থা বা জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি ব্যবহার), এবং বংশগত প্রবণতা। আরেকটি সাধারণ সমস্যা হলো পোস্ট-ইনফ্লেমেটরি হাইপারপিগমেন্টেশন বা পিআইএইচ। ত্বকের কোনো আঘাত বা প্রদাহের পর ত্বকে গাঢ় দাগের সৃষ্টি হয়, যা প্রায়শই ভারতীয় জনসংখ্যার মধ্যে দেখা যায়। অনেক সময় পিআইএইচ অন্যান্য হাইপারপিগমেন্টারি সমস্যার সাথেও সহাবস্থান করে এবং এর ফলে ত্বকের মোট পিগমেন্টেশন সমস্যার বোঝা আরও বেড়ে যায়।

ভারতের চারটি বড় শহরে পরিচালিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ১,২০৪ জন মহিলার মধ্যে ৮০ শতাংশেরই ত্বকের রঙের অমসৃণতা রয়েছে এবং এই ধরনের ত্বকের সমস্যাগুলি তাঁদের মধ্যে খুবই সাধারণ।

উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা
ত্বকের পিগমেন্টেশন সমস্যার সমাধানে সম্প্রতি বেশ কিছু আধুনিক এবং নিরাপদ চিকিৎসা পদ্ধতি উদ্ভাবিত হয়েছে, যা প্রায়শই রোগীদের জন্য দীর্ঘস্থায়ী এবং কার্যকরী সমাধান প্রদান করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, নতুন প্রজন্মের লেজার থেরাপিগুলি বিশেষ করে মেলানিন বা রঙ উৎপাদনকারী কোষকে নির্দিষ্টভাবে লক্ষ্য করে, যার ফলে রোগীদের জন্য চিকিৎসার সময়কাল কম হয় এবং কার্যকারিতা অনেক বেড়ে যায়।

কসমেটিক কেয়ার থেকে চিকিৎসাগত প্রয়োজন
স্কাল্পট অ্যাসথেটিক ক্লিনিকের মেডিকেল ডিরেক্টর ডা. হেমা পান্ত বলেছেন, “পিগমেন্টেশন কেবলমাত্র একটি প্রসাধনী সমস্যা নয়; এটি এক গভীর ত্বকজনিত সমস্যা, যা আত্মবিশ্বাস, মানসিক স্বাস্থ্য এবং জীবনমানের উপর প্রভাব ফেলে।” তিনি আরও জানান, ত্বকের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে উদ্ভাবনী প্রযুক্তি অনেকটা এগিয়ে গেছে, যার ফলে বর্তমানে পিগমেন্টেশন সমস্যার জন্য আরও উন্নত সমাধান সম্ভব হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লেজার ট্রিটমেন্ট ছাড়াও বিভিন্ন টপিকাল থেরাপি, যেমন হাইড্রোকুইনোন, রেটিনয়েড, এবং ভিটামিন সি ব্যবহারে ত্বকের কালো দাগ হ্রাস, স্কিন টোন সমানকরণ, এবং আরও পিগমেন্টেশন প্রতিরোধ সম্ভব হচ্ছে।

প্রথমে ডাক্তারের পরামর্শ
ত্বকের সমস্যার জন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেমিক্যাল পিল এবং মাইক্রোডার্মাব্রেশনের মতো পদ্ধতিগুলিও সম্প্রতি জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। এই পদ্ধতিগুলি ত্বকের পুনর্জন্মে সহায়তা করে এবং রোগীদের ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। সিনিয়র কসমেটিক সার্জন ডা. ইতিশ্রী গুপ্তা বলেছেন, “যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে সূর্যালোক থেকে হওয়া ক্ষতি, পিআইএইচ, বা হরমোনজনিত পরিবর্তনের মতো সমস্যার মূল কারণগুলি আমরা এখন সমাধান করতে পারি, যা রোগীদের আত্মবিশ্বাস এবং জীবনমান বাড়ায়।”

সতর্কতা ও চিকিৎসার গুরুত্ব
বিশেষজ্ঞদের মতে, ত্বকের পিগমেন্টেশনের সমস্যা হওয়ার সাথে সাথে ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত। এটি দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবগুলোকে কমাতে সাহায্য করতে পারে এবং ভবিষ্যতে গুরুতর সমস্যা প্রতিরোধ করতে পারে।
ভারতে ত্বকের সমস্যা নিয়ে সচেতনতা বাড়ার সাথে সাথে এই ধরনের আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির চাহিদা বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা আশাবাদী যে, ত্বক

বিশেষজ্ঞদের গবেষণা এবং উদ্ভাবনের ফলে পিগমেন্টেশন সমস্যার সমাধান এখন আরও কার্যকরী হবে এবং এর ফলে রোগীরা একটি পরিষ্কার এবং স্বাস্থ্যকর ত্বক পেতে সক্ষম হবেন।