নিশ্বাস ভেঙে আসা গলায়, চোখে জল, মুখে একটাই কথা— “আমার মেয়েকে খুঁজে দিন… আমার মেয়েকে খুঁজে দিন…”। বুধবার ঘাটালে সাংসদ দেব যখন তাঁর সংসদীয় এলাকা পরিদর্শনে বেরিয়েছিলেন, তখনই সামনে এল এই হৃদয়বিদারক দৃশ্য। এক অসহায় মা, হাতজোড় করে দাঁড়িয়ে, সাংসদের সামনে গলে পড়লেন। মেয়ের খোঁজে দিনের পর দিন ঘুরে বেড়ানো সেই মায়ের আশা যেন এখন শুধু একজন— দেব।
দেব ওরফে দীপক অধিকারী এই মুহূর্তে শুধু একজন জনপ্রিয় অভিনেতা নন, একজন সাংসদও বটে। তাঁর ঘাটাল সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রশাসনিক ও জনসংযোগমূলক কিছু কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ। কিন্তু সব পরিকল্পনার মাঝখানে হঠাৎ আবির্ভাব এক অসহায় মায়ের — যিনি কান্নাজড়ানো গলায় বললেন, “দাদা, আমার মেয়েটা হারিয়ে গেছে। আমি কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছি না। আপনি দয়া করে কিছু একটা করুন। আমি আপনার পায়ে পড়ি, ওকে খুঁজে দিন।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই মহিলার মেয়ে নাবালিকা। কয়েকদিন আগে হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যায় সে। পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় ডায়েরি করা হলেও এখনও পর্যন্ত তার কোনও খোঁজ মেলেনি। মেয়ের ফিরে আসার জন্য রোজ প্রার্থনা করেন মা। কিন্তু এদিন দেবকে কাছে পেয়ে যেন আর ধরে রাখতে পারলেন না নিজেকে। সামনে এসেই কেঁদে পড়েন তিনি।
দেব সেই মুহূর্তে থেমে যান। তিনি মন দিয়ে শোনেন মহিলার কথা। আশ্বাস দেন, “আপনি চিন্তা করবেন না। আমি পুলিশ সুপার এবং সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলব। আপনার মেয়েকে খুঁজে বার করার জন্য যা যা করা প্রয়োজন, সব করব।”
এই দৃশ্য দেখে আশেপাশের লোকজনের চোখেও জল এসে যায়। দেব নিজেও মুহূর্তের জন্য আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। তিনি জানান, শুধুমাত্র একজন সাংসদ নয়, একজন মানুষ হিসেবে এ ধরনের ঘটনাগুলি তাঁকে ব্যথিত করে। “একটা মা তার সন্তান হারিয়ে ফেলেছে — এটা শুধু একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে নয়, একজন সাধারণ মানুষের মনেও গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করে,” বলেন দেব।
এরপর দেব প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং ওই মেয়েটির খোঁজে তদন্তের গতি বাড়ানোর নির্দেশ দেন। ঘাটাল থানার পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আগে থেকেই একটি নিখোঁজ ডায়েরি রয়েছে, তবে দেবের হস্তক্ষেপে এখন বিষয়টিকে আরও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।
এই ঘটনার পরে দেব একটি বার্তা দেন সবার উদ্দেশ্যে — “আমরা অনেক সময় উন্নয়ন, সড়ক, পানীয় জল, বাঁধ বা মাস্টার প্ল্যান নিয়ে কথা বলি। কিন্তু একটা মায়ের চোখের জল, একটা মেয়ের নিরাপত্তা, ওর জীবন — এইসবই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমি চাই, প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নিক। এবং মেয়েটিকে সুস্থভাবে মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিক।”
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে স্থানীয় মানুষেরা বলছেন, রাজনীতি, তারকাখ্যাতি বা উন্নয়ন প্রকল্পের বাইরেও একজন প্রতিনিধির কাছে এই মানবিক দিকটাই সবচেয়ে বড়। একজন মা আজ তাঁর মেয়ের খোঁজে কাঁদলেন, একজন সাংসদ হাত বাড়িয়ে দিলেন। এটাই আজকের দিনে আশার আলো।