কলকাতাসহ সারাবাংলায় আজ ভারী বৃষ্টি-ঝড়ের পূর্বাভাস

West Bengal weather: পশ্চিমবঙ্গ বিশেষ করে কলকাতা আজ ২৫ জুলাই, ২০২৫-এ ভারী বৃষ্টি এবং বজ্রপাত-সহ ঝড়ের কবলে পড়তে চলেছে। আলিপুর আবহাওয়া দফতর এবং অন্যান্য আবহাওয়া…

Heavy Rain and Thunderstorms to Hit West Bengal and Kolkata

West Bengal weather: পশ্চিমবঙ্গ বিশেষ করে কলকাতা আজ ২৫ জুলাই, ২০২৫-এ ভারী বৃষ্টি এবং বজ্রপাত-সহ ঝড়ের কবলে পড়তে চলেছে। আলিপুর আবহাওয়া দফতর এবং অন্যান্য আবহাওয়া সংস্থার পূর্বাভাস অনুযায়ী, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট একটি শক্তিশালী নিম্নচাপের কারণে রাজ্য জুড়ে ব্যাপক বৃষ্টিপাত এবং বিচ্ছিন্নভাবে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এই আবহাওয়া পরিস্থিতি কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে, যার ফলে শহরাঞ্চলে জলজমা, যানজট এবং অন্যান্য অসুবিধার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতেও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এই প্রতিবেদনে আমরা আজকের আবহাওয়ার বিস্তারিত পূর্বাভাস, সম্ভাব্য প্রভাব এবং সতর্কতার বিষয়ে আলোচনা করব।

আজকের আবহাওয়ার পূর্বাভাস
আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরের উত্তরাঞ্চলে একটি সুস্পষ্ট নিম্নচাপ ক্ষেত্র সক্রিয় হয়েছে, যা পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের সীমান্তের কাছাকাছি অঞ্চলে প্রভাব ফেলতে পারে। এই নিম্নচাপের ফলে কলকাতায় সকাল থেকে আংশিক মেঘলা আকাশের সঙ্গে ঝিরঝিরে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বিকেলের দিকে বিচ্ছিন্নভাবে ভারী বৃষ্টি এবং বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ঝড়ের সম্ভাবনা রয়েছে। দিনের তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৩০° সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ২৫° সেলসিয়াসের কাছাকাছি থাকবে। আর্দ্রতার মাত্রা ৯৪-১০০% পর্যন্ত হতে পারে, যা ভ্যাপসা গরমের অনুভূতি বাড়াবে। বাতাসের গতি ঘণ্টায় ৮-১২ কিলোমিটার হবে, তবে উপকূলীয় অঞ্চলে বাতাসের গতি ৫০-৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।

   

দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলির মধ্যে উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, পূর্ব মেদিনীপুর এবং পশ্চিম মেদিনীপুরে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। আবহাওয়া দফতর এই জেলাগুলির জন্য হলুদ সতর্কতা জারি করেছে। কিছু এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে অতি ভারী বৃষ্টির (৭-১১ সেন্টিমিটার) সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। উত্তরবঙ্গে, বিশেষ করে দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ারে ব্যাপক বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, এবং কিছু এলাকায় ভারী বৃষ্টির জন্য সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

সম্ভাব্য প্রভাব
ভারী বৃষ্টির ফলে কলকাতার নিম্নাঞ্চল, যেমন বেলেঘাটা, মানিকতলা, কলেজ স্ট্রিট এবং বউবাজারে জলজমার সম্ভাবনা রয়েছে। শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা প্রায়ই ভারী বৃষ্টির চাপ সামলাতে ব্যর্থ হয়, যার ফলে রাস্তায় জল জমে যানজট সৃষ্টি হয়। বজ্রবিদ্যুৎ এবং ঝোড়ো হাওয়ার কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটতে পারে। উপকূলীয় জেলাগুলিতে, যেমন পূর্ব মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা, উচ্চ গতির বাতাস এবং ভারী বৃষ্টির কারণে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।

কৃষি ক্ষেত্রেও এই আবহাওয়ার প্রভাব পড়তে পারে। পেঁয়াজ, ধান এবং অন্যান্য ফসলের চাষিরা অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে ফসলের ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন। বিশেষ করে পেঁয়াজ চাষিরা, যাঁরা ইতিমধ্যে কোল্ড স্টোরেজের ঘাটতির সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের জন্য এই অতিরিক্ত বৃষ্টি আরও ক্ষতির কারণ হতে পারে। গ্রামীণ এলাকায়, বিশেষ করে নদীতীরবর্তী অঞ্চলে, বন্যার আশঙ্কা বাড়ছে। উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের ঝুঁকি বাড়তে পারে, বিশেষ করে দার্জিলিং এবং কালিম্পং-এ।

সতর্কতা ও প্রস্তুতি
আবহাওয়া দফতর সকলকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে। বাসিন্দাদের বাইরে বের হওয়ার সময় ছাতা বা রেইনকোট ব্যবহার করতে এবং বজ্রপাতের সময় খোলা জায়গায় থাকা এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ড্রাইভিংয়ের সময় সতর্কতা অবলম্বন করুন এবং জলাবদ্ধ এলাকা এড়িয়ে চলুন। কৃষকদের ফসল সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যেমন ফসলের জন্য অস্থায়ী আচ্ছাদন ব্যবহার করা। স্থানীয় প্রশাসনকে নদীতীরবর্তী এলাকায় নজরদারি বাড়াতে এবং জল নিষ্কাশন ব্যবস্থা পরিষ্কার রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

Advertisements

কলকাতা পুরসভা এবং অন্যান্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জলজমা রোধে পাম্প এবং অন্যান্য জরুরি ব্যবস্থা প্রস্তুত রেখেছে। তবে, শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতার কারণে বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে হবে। উপকূলীয় এলাকার জেলে সম্প্রদায়কে সমুদ্রে যাওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, কারণ উচ্চ গতির বাতাস এবং উত্তাল সমুদ্র বিপজ্জনক হতে পারে।

আগামী দিনগুলির পূর্বাভাস
আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আগামী দুই দিন, অর্থাৎ ২৬ এবং ২৭ জুলাই, পশ্চিমবঙ্গে ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে। কলকাতায় ২৬ জুলাই শনিবার সারা দিন বৃষ্টি এবং বিচ্ছিন্ন ঝড়ের সম্ভাবনা রয়েছে, যার সঙ্গে তাপমাত্রা ২৯-৩১° সেলসিয়াসের মধ্যে থাকবে। দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা বেশি থাকবে, বিশেষ করে পূর্ব মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। উত্তরবঙ্গে, জলপাইগুড়ি এবং দার্জিলিং-এ ভারী বৃষ্টির পাশাপাশি ভূমিধসের ঝুঁকি থাকতে পারে। ২৮ জুলাই থেকে বৃষ্টির তীব্রতা কিছুটা কমতে পারে, তবে মাঝারি বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে।

জনজীবনে প্রভাব
কলকাতার বাসিন্দাদের জন্য এই ভারী বৃষ্টি দৈনন্দিন জীবনে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। স্কুল, কলেজ এবং অফিসে যাতায়াতকারীদের অতিরিক্ত সময় নিয়ে বের হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বাজার এবং ব্যবসায়িক কার্যক্রমও প্রভাবিত হতে পারে। গ্রামীণ এলাকায়, কৃষকদের ফসল রক্ষার জন্য অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বিশেষ করে পেঁয়াজ চাষিরা, যাঁরা ইতিমধ্যে কোল্ড স্টোরেজের অভাবে সমস্যায় রয়েছেন, তাঁদের জন্য এই বৃষ্টি আরও ক্ষতির কারণ হতে পারে।

এই আবহাওয়া পরিস্থিতি পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন শিল্পকেও প্রভাবিত করতে পারে। দার্জিলিং এবং কালিম্পং-এর মতো পাহাড়ি এলাকায় ভ্রমণকারীদের সতর্ক থাকতে হবে, কারণ ভূমিধসের ঝুঁকি বাড়ছে। সমুদ্র সৈকত এলাকা যেমন দীঘা এবং মন্দারমণিতে ভ্রমণকারীদেরও সমুদ্রের উত্তাল অবস্থার কারণে সতর্ক থাকতে হবে।

পশ্চিমবঙ্গ ও কলকাতায় আজকের ভারী বৃষ্টি এবং ঝড় জনজীবনে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। আবহাওয়া দফতর এবং স্থানীয় প্রশাসনের সতর্কতা মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাসিন্দাদের প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত এবং জরুরি পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকা উচিত। স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে জল নিষ্কাশন ব্যবস্থা পরিষ্কার রাখতে এবং জরুরি পরিষেবা প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। এই আবহাওয়া পরিস্থিতি সাময়িক হলেও, এর প্রভাব দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে, বিশেষ করে কৃষি এবং পর্যটন খাতে।