পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সি.ভি. আনন্দ বোস (governor) সোমবার (২ জুন, ২০২৫) সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চাকরি হারানো শিক্ষকদের চলমান আন্দোলন নিয়ে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, তিনি আশাবাদী যে এই বিষয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে। এছাড়া, তাঁর রাজ্যপাল পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার জল্পনাকে উড়িয়ে দিয়ে তিনি জানিয়েছেন, রাজ্যের “হারানো সুনাম” পুনরুদ্ধার এবং হিংসা মুক্ত করার লক্ষ্যে তিনি নতুন উদ্যমে এগিয়ে যাবেন।
গত ২৯ মে হৃদরোগের কারণে প্রায় এক মাস হাসপাতালে থাকার পর রাজভবনে দায়িত্বে ফিরেছেন রাজ্যপাল বোস(governor)। তিনি ঘোষণা করেছেন, শীঘ্রই তিনি রাজ্যের গ্রামীণ এলাকায়, বিশেষ করে মুর্শিদাবাদ এবং মালদার মতো হিংসা-আক্রান্ত এলাকায় সফর করবেন। এই সফরের উদ্দেশ্য হল বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতির বোধ ফিরিয়ে আনা।
শিক্ষকদের আন্দোলন ও ন্যায়বিচারের প্রত্যাশা (governor)
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ২৫,৭৫৩ জন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল হওয়ার পর থেকে শিক্ষক সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও আন্দোলন চলছে। এই রায়ে রাজ্য সরকারের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল, যার ফলে হাজার হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী তাদের জীবিকা হারিয়েছেন। এই ঘটনা রাজ্যে ব্যাপক রাজনৈতিক ও সামাজিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
রাজ্যপাল বোস (governor)এই বিষয়ে বলেছেন, “আমি আশাবাদী যে এই বিষয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে। শিক্ষকদের যে অভিযোগ ও দাবি রয়েছে, তা যথাযথভাবে বিবেচনা করা উচিত।” তিনি আরও জানিয়েছেন যে, তিনি রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং শিক্ষকদের সমস্যা সমাধানে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে চান। তবে, তিনি এই বিষয়ে সরাসরি কোনো আইনি বা প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের কথা উল্লেখ করেননি, বরং বিষয়টি আদালত ও সরকারের উপর ছেড়ে দিয়েছেন।
পরমাণু হামলার পর বিকিরণের বিপদ এড়াতে দেশীয় প্রতিষেধক তৈরি করল DRDO
রাজ্যপাল পদ থেকে সরানোর জল্পনা
সাম্প্রতিক সময়ে রাজ্যপাল (governor)বোসের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে বিভিন্ন জল্পনা ছড়িয়েছিল। এই জল্পনার পিছনে রাজ্য সরকারের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং তাঁর সক্রিয় ভূমিকা নিয়ে বিতর্ককে দায়ী করা হচ্ছে। তবে, বোস এই জল্পনাকে স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেছেন, “আমি আমার দায়িত্ব পালনে আরও বেশি উৎসাহ নিয়ে এগিয়ে যাব। আমার লক্ষ্য হল পশ্চিমবঙ্গের হারানো সুনাম ফিরিয়ে আনা এবং এই রাজ্যকে হিংসা ও ভয়ের পরিবেশ থেকে মুক্ত করা।”
রাজ্যপাল (governor)হিসেবে বোসের কার্যকালে তিনি রাজ্যের বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক ইস্যুতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর এই সক্রিয়তা কখনো প্রশংসিত হয়েছে, আবার কখনো রাজ্য সরকারের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণ হয়েছে। বিশেষ করে, তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের টানাপোড়েন বারবার সংবাদ শিরোনামে এসেছে। তবে, বোস জোর দিয়ে বলেছেন যে তিনি রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান হিসেবে তাঁর দায়িত্ব পালনে অবিচল থাকবেন।
গ্রামীণ সফরের পরিকল্পনা
রাজ্যপাল(governor) বোস ঘোষণা করেছেন যে, তিনি শীঘ্রই রাজ্যের গ্রামীণ এলাকায় সফর শুরু করবেন। তিনি বিশেষভাবে মুর্শিদাবাদ এবং মালদার মতো সহিংসতা-আক্রান্ত এলাকাগুলোর উপর জোর দিয়েছেন। এই এলাকাগুলোতে সাম্প্রতিক সময়ে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা এবং সহিংস ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। বোস বলেছেন, “আমি গ্রামীণ এলাকায় যাব এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্বের বোধ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করব। আমি চাই পশ্চিমবঙ্গ শান্তি ও সমৃদ্ধির রাজ্য হিসেবে পরিচিত হোক।”
তাঁর এই সফরের উদ্দেশ্য হল স্থানীয় মানুষের সমস্যা সরাসরি শোনা এবং স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে সমাধানের পথ খুঁজে বের করা। মুর্শিদাবাদ ও মালদায় সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনাগুলো রাজ্যের শান্তি বজায় রাখার ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। রাজ্যপালের এই উদ্যোগকে অনেকে ইতিবাচক হিসেবে দেখলেও, রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে এটি রাজ্য সরকারের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ককে আরও জটিল করতে পারে।
রাজ্যপালের স্বাস্থ্য ও দায়িত্বে ফিরে আসা
গত এপ্রিল মাসে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর রাজ্যপাল (governor)বোস দীর্ঘদিন হাসপাতালে ছিলেন। তাঁর অসুস্থতার সময় রাজ্যপালের পদ শূন্য থাকার জল্পনা এবং তাঁর উত্তরসূরি নিয়োগের গুঞ্জন ছড়িয়েছিল। তবে, ২৯ মে রাজভবনে ফিরে তিনি তাঁর দায়িত্ব পালনে পুনরায় সক্রিয় হয়েছেন। তিনি বলেছেন, “আমি সুস্থ হয়ে ফিরেছি এবং আমার দায়িত্ব পালনে আরও বেশি মনোযোগী হব। আমার লক্ষ্য হল রাজ্যের মানুষের জন্য কাজ করা এবং তাদের সমস্যার সমাধানে সহায়তা করা।”
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
পশ্চিমবঙ্গে রাজ্যপাল (governor)এবং রাজ্য সরকারের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন দীর্ঘদিনের। বোসের আগেও পূর্ববর্তী রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে তৃণমূল সরকারের দ্বন্দ্ব ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছিল। বোসের কার্যকালেও এই টানাপোড়েন অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে, রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা, নির্বাচনী সহিংসতা এবং সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার মতো বিষয়ে তিনি সরব হয়েছেন, যা রাজ্য সরকারের সমালোচনার কারণ হয়েছে।
শিক্ষকদের চাকরি বাতিলের ঘটনা রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করেছে। তৃণমূল কংগ্রেস এই রায়ের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিচার বিভাগের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছে, যখন বিরোধী দল বিজেপি এবং সিপিআই(এম) এই বিষয়ে রাজ্য সরকারের নিয়োগ নীতির সমালোচনা করেছে। এই প্রেক্ষাপটে রাজ্যপালের মন্তব্য এবং তাঁর গ্রামীণ সফরের পরিকল্পনা রাজনৈতিক মহলে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
রাজ্যপাল সি.ভি. আনন্দ বোসের সাম্প্রতিক মন্তব্য এবং তাঁর গ্রামীণ সফরের পরিকল্পনা পশ্চিমবঙ্গের জটিল রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির প্রতিফলন। শিক্ষকদের আন্দোলন, সহিংসতা-আক্রান্ত এলাকায় সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা এবং রাজ্যের সুনাম পুনরুদ্ধারের লক্ষ্য তাঁর কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দু। তবে, রাজ্য সরকারের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের গতিপথ এবং এই উদ্যোগগুলোর ফলাফল রাজ্যের ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।