পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির ময়দানে ছটি বিধানসভা কেন্দ্রে নির্বাচনে (West Bengal By Election 2024) প্রচারের শেষ লগ্নে শুরু হয়েছে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা। রাজ্যের বিরোধী দলগুলো তাদের নির্বাচনী প্রচারের জন্য কেন্দ্রবিন্দু করেছে নারী নির্যাতন, স্থানীয় উন্নয়ন, আরজি কর সহ শাসক দলের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ এনেছে তারা। এই সময়ে আরজি কর কাণ্ডসহ বিভিন্ন ঘটনাকে সামনে রেখে বিরোধী দলগুলো তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছে।
অন্যদিকে শাসক দলও পাল্টা কড়া জবাব দিয়েছে। রবিবার বিজেপির দখলে থাকা মাদারিহাট যেখানে উপনির্বাচন রয়েছে সেই বিধানসভা এলাকায় প্রচারে গিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এদিন বীরপাড়ায় গিয়ে বন্ধ চা-বাগান, চা-শ্রমিকদের অবস্থা, মেডিক্যাল কলেজ তৈরির প্রতিশ্রুতি-সহ নানা স্থানীয় বিষয় তুলে ধরেছেন তিনি।
সেখান থেকে শুভেন্দু আরজি করের প্রসঙ্গ তুলে সকলকে ভোট দেওয়ার আবেদন জানিয়ে বলেন, “অভয়ার মা-বাবাকে দেখে সকলে জেগে উঠেছেন। কেউ ভয় পাবেন না, সকলে নির্ভয়ে ভোট দেবেন।” এদিকে বালুরঘাটে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার কোচবিহারে ‘গুন্ডারাজের’ অভিযোগ তুলেছেন। উল্লেখ্য, কোচবিহারের সিতাইয়ে কংগ্রেস এবং বামেদের প্রচার-সভায় হামলার অভিযোগ উঠেছিল।
এ প্রসঙ্গে সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, “গুন্ডাদের রাজা হচ্ছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহ। ভোট হচ্ছে না, গণতন্ত্র বলে কিছু নেই। তোলাবাজি, টাকা চুরি চলছে।” অন্যদিকে রবিবার বাঁকুড়ার তালড্যাংরায় আরজি কর কাণ্ডে তৃণমূলের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের বিঁধে বিদায়ী প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়কে কটাক্ষ করে বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, “যাঁরা আরজি কর নিয়ে ‘জাস্টিস জাস্টিস’ বলে আন্দোলন করলেন, একবারও তাঁদের কারও মুখে শুনেছেন, মমতার পদত্যাগ চাই?
হাই কোর্টে কেস চলছিল। মাঝখান থেকে সুপ্রিম কোর্টের ওই ব্যক্তি অবসর নেবেন, সেই চন্দ্রচূড় ঝাঁপ দিয়ে জলটাকে ঘোলা করে দিলেন!” এর পাশাপাশি নৈহাটী এলাকার চটকল-শিল্পের অবস্থার কথা তুলে প্রার্থী রূপক মিত্রের প্রচারে এসে বিজেপি নেতা অর্জুন সিংহ দাবি করেছেন, “কোনও শিল্প নেই, যেগুলো ছিল, বন্ধ করিয়েছে।” এদিন নৈহাটির পঞ্চায়েত এলাকায় সভা করার সময় সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, “এখানে প্রার্থী দেবজ্যোতি মজুমদার শুধু সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের নন, বামফ্রন্টেরও নন।
তিনি আমাদের সকলের প্রার্থী। বামফ্রন্টকে হারিয়ে তৃণমূলকে আনলে সব সমস্যার সমাধান হবে যাঁরা মনে করেছিলেন, তাঁরা ঠকেছেন। আর যাঁরা মনে করেছিলেন বিজেপি পারবে তৃণমূলকে শিক্ষা দিতে, তাঁরা ডাবল ঠকেছেন! বিকল্প একটাই।” অন্যদিকে হাড়োয়ায় প্রচারে বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে একসঙ্গে সরব হয়েছেন সিপিএম সাংসদ বিকাশ ভট্টাচার্য এবং আইএসএফের চেয়ারম্যান নওসাদ সিদ্দিকী। তবে বিরোধীরা প্রচারে এসব বিষয় টেনে আনলেও শাসকদল তৃণমূল কিন্তু বেশি জোর দিচ্ছে স্থানীয় বিষয়েই।
নৈহাটিতে তাঁদের প্রার্থী সনৎ দে আগামীদিনেও সব সময় মানুষের পাশে থাকবেন ঠিক এমন বার্তা দিয়েই রোড-শো করেছেন সাংসদ পার্থ ভৌমিক, রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, বিধায়ক-অভিনেত্রী সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়েরা। এদিকে বিরোধীদের বিভ্রান্তি তৈরির অভিযোগে পাল্টা সরব হয়ে আরজি করের ঘটনার তদন্তের গতিপ্রকৃতির কথা তুলে তালড্যাংরায় প্রচারে গিয়ে রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, “কোথাও ধর্ষণ হলে লাফিয়ে চলে যাচ্ছে সিপিএম, বিজেপি।
একজন নারীর প্রতি অন্যায় হলে, তার বিচার চাই। মমতার পুলিশ একজনকে ধরল। আদালত তদন্ত সিবিআইকে দিল। কিন্তু ওই এক জনের পরে আর কাউকে ধরতে পারল না। মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা হচ্ছে।”