গণধর্ষণে মদতদাতাদের সমর্থন করছে তৃণমূল? প্রশ্ন তুললেন কল্যাণ

কলকাতার সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজে (South Calcutta Law College) এক ছাত্রীর উপর গণধর্ষণের অভিযোগে তৃণমূল কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠনের তিন নেতার গ্রেফতারির পর রাজনৈতিক বিতর্ক তুঙ্গে…

Trinamool Faces Backlash Over Leaders’ Remarks on South Calcutta Law College

কলকাতার সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজে (South Calcutta Law College) এক ছাত্রীর উপর গণধর্ষণের অভিযোগে তৃণমূল কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠনের তিন নেতার গ্রেফতারির পর রাজনৈতিক বিতর্ক তুঙ্গে উঠেছে। এই ঘটনায় তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতিক্রিয়া এবং দলের দুই জনপ্রতিনিধি—শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্রের বিতর্কিত মন্তব্য নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। দল তাদের বক্তব্যের সঙ্গে নিজেদের সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন করেছে এবং কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছে। তবে, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় দলের এই অবস্থানের বিরুদ্ধে পালটা প্রশ্ন তুলে সোশাল মিডিয়ায় সরব হয়েছেন।

গত ২৫ জুন কসবার সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজে এক ২৪ বছর বয়সী প্রথম বর্ষের ছাত্রী গণধর্ষণের শিকার হন। অভিযোগ অনুযায়ী, তিনজন অভিযুক্ত—মনোজিৎ মিশ্র (৩১), জয়েব আহমেদ (১৯) এবং প্রমিত মুখোপাধ্যায় (২০)—কলেজের গার্ড রুমে তাকে আটকে রেখে এই জঘন্য অপরাধ করে। মনোজিৎ মিশ্র তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দক্ষিণ কলকাতা জেলার সাধারণ সম্পাদক এবং প্রাক্তন ছাত্র। অভিযোগকারিণী জানিয়েছেন, মনোজিৎ তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যা তিনি প্রত্যাখ্যান করায় তিনি ক্ষিপ্ত হন এবং তার সঙ্গে আরও দুজন মিলে এই অপরাধ করেন। অভিযুক্তরা এই ঘটনার ভিডিও ধারণ করে তাকে হুমকি দেয় এবং তার পরিবারের ক্ষতি করার ভয় দেখায়।

   

এই ঘটনার পর পুলিশ দ্রুত তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে এবং তাদের ১ জুলাই পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয় আদালত। কলকাতা পুলিশ এই মামলার তদন্তের জন্য পাঁচ সদস্যের একটি বিশেষ তদন্ত দল (SIT) গঠন করেছে। জাতীয় মহিলা কমিশন (NCW) এই ঘটনার স্বতঃপ্রণোদিতভাবে নজর রেখেছে এবং কলকাতা পুলিশ কমিশনারের কাছে তিন দিনের মধ্যে বিস্তারিত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

তৃণমূলের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এই ঘটনায় বিতর্কিত মন্তব্য করে বলেন, “বন্ধু যদি বান্ধবীকে ধর্ষণ করে, তাহলে সরকার কীভাবে সুরক্ষা দেবে? কলেজে কি পুলিশ মোতায়েন করা হবে?” তিনি আরও বলেন, পুরুষদের মানসিকতা পরিবর্তন না হলে এমন ঘটনা ঠেকানো সম্ভব নয়। এই মন্তব্যের জন্য তিনি বিরোধী দল বিজেপি এবং সামাজিক মাধ্যমে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন। বিজেপি নেতা অমিত মালভিয়া এই মন্তব্যকে “ধর্ষকদের পক্ষে” বলে অভিহিত করেন এবং তৃণমূলের উপর “ধর্ষকদের আশ্রয় দেওয়ার” অভিযোগ তোলেন।

অন্যদিকে, তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র বলেন, “মেয়েটি যদি কলেজে না যেতেন, তাহলে এই ঘটনা ঘটত না। তিনি যাওয়ার আগে কাউকে জানাননি কেন? বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে যাওয়া উচিত ছিল।” এই মন্তব্যও ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়, কারণ এটি ভুক্তভোগীর উপর দোষ চাপানোর মতো শোনায়। তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব এই দুই নেতার মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করে এবং এক্স হ্যান্ডেলে জানায় যে, এই মন্তব্য তাদের ব্যক্তিগত মতামত এবং দলের অবস্থানের সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, “আমরা ভুক্তভোগী এবং তার পরিবারের পাশে আছি এবং অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির দাবি জানাই।”

Advertisements

কিন্তু কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় দলের এই অবস্থানের বিরুদ্ধে সরব হয়ে এক্স-এ লেখেন, তৃণমূল কি পরোক্ষভাবে অপরাধীদের আশ্রয় দেওয়া নেতাদের সমর্থন করছে? তিনি আরও বলেন, “২০১১-এর পর উঠে আসা কিছু নেতা নিজেরাই এমন অপরাধে জড়িত। আমি অপরাধীদের প্রশ্রয় দেওয়া বা রক্ষা করা নেতাদের থেকে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন করছি।” এই মন্তব্য তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ইঙ্গিত দেয় এবং রাজনৈতিক মহলে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

বিজেপি এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সরকারের উপর তীব্র আক্রমণ শানিয়েছে। বিজেপি নেতা সম্বিত পাত্র দাবি করেন, “এই গণধর্ষণ রাষ্ট্র-পৃষ্ঠপোষিত” এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ দাবি করেন। বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডা একটি চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন এই ঘটনার তদন্তের জন্য। এদিকে, বামপন্থী ও কংগ্রেস সমর্থিত ছাত্র সংগঠনগুলোও কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিবাদে নেমেছে।

এই ঘটনা পশ্চিমবঙ্গে নারী নিরাপত্তা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক প্রভাব নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে অভিযুক্তদের যোগাযোগ এবং দলের নেতাদের বিতর্কিত মন্তব্য এই ঘটনাকে আরও জটিল করে তুলেছে।