টলিউডের প্রথম সারির নায়ক, ঘাটালের তৃণমূল সাংসদ দেব সম্প্রতি লন্ডনে ছিলেন তাঁর আসন্ন সিনেমা ‘প্রজাপতি ২’-এর শুটিংয়ের কাজে। কাজ শেষ হওয়ার পর কয়েকটা দিন পরিবার নিয়ে বেড়াতে গিয়েছিলেন স্কটল্যান্ড। স্বাভাবিকভাবেই, সেখান থেকে ঘনঘন পোস্ট করছিলেন নিজের ঘোরার নানা মুহূর্ত — পাহাড়, হ্রদ, প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাওয়া ছবি, কখনও নিখাদ হাসি, কখনও ঝলমলে সাজ। দেবের ইনস্টাগ্রাম যেন হয়ে উঠেছিল এক রঙিন ভ্রমণ ডায়েরি।
তবে এই রঙিন মুহূর্তের মাঝেই উঁকি দিল কিছু তির্যক মন্তব্য। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই প্রশ্ন তোলেন — “সাংসদ দেব কোথায়?” “ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের কাজ কোথায় পৌঁছেছে?” কেউ কেউ তো সোজা অভিযোগ করেন, দেব সিনেমা ও ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে এতটাই ব্যস্ত যে তাঁর সাংসদপদের দায়িত্ব হয়তো উপেক্ষিত। আবার কেউ লিখেছেন, “রাজনীতি নয়, দেব বরং সিনেমার পর্দাতেই ভালো মানায়।”
এই সমস্ত প্রশ্ন-উৎক্ষেপের মধ্যে দেবের কোনও প্রতিক্রিয়া ছিল না। কিন্তু দেব বরাবরই নিজের কাজ দিয়ে জবাব দেন — এটাই তাঁর ভঙ্গি। তাই সোমবার, ২১ জুলাই শহিদ দিবসের সমাবেশে স্কটল্যান্ড থেকে সোজা কলকাতায় এসে হাজির হলেন দেব। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে সাড়া দিয়ে এক দায়িত্ববান ছাত্রের মতোই আন্তর্জাতিক ভ্রমণ ফেলে ধর্মতলার মঞ্চে এসে দাঁড়ালেন তিনি।
এই একটি মুহূর্তই যেন অনেক প্রশ্নের জবাব দিয়ে দিল। রাজনৈতিক দায়িত্ব থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখেননি দেব। বরং নিজের পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দলের প্রতি আনুগত্যও অটুট রেখেছেন। অভিনেতা দেব জানেন, তিনি একজন সাংসদও — আর সেই দায়িত্বের প্রতি কোনও গাফিলতি তাঁর নেই।
একুশে জুলাই তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে শুধুই এক মিছিল বা সভা নয়, এক ঐতিহাসিক আবেগ। সেই আবেগের অংশ হয়ে ওঠা প্রতিটি নেতার কর্তব্য। দেবও সেই আবেগের শরিক হয়েছেন প্রত্যেক বছরের মতো। অনেকে বলেন, দেবের মতো জনপ্রিয় মুখ এই সভায় এলে দলও উৎসাহ পায়। আবার দেব নিজেও দলের সঙ্গে নিজের বন্ধন আরও দৃঢ় করেন।
তবে শুধু রাজনীতি নয়, দেবের এই পদক্ষেপে উঠে আসে তাঁর ব্যক্তিত্বের আরেকটি দিক — শৃঙ্খলাবোধ ও প্রতিশ্রুতির গুরুত্ব। তিনি জানেন, জনপ্রিয়তা কেবল পর্দায় নয়, বাস্তব জীবনে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমেই স্থায়ী হয়। দেব তাঁর দায়িত্ব ভুলে যাননি — বরং নিঃশব্দে, ক্যামেরার ঝলকানি ছাড়াই নিজের কর্তব্য পালন করেছেন।
নিন্দুকদের জন্য তাঁর জবাব ছিল একটি উপস্থিতি — কোনও পাল্টা পোস্ট নয়, না কোনও বিতর্কে জড়ানো। স্কটল্যান্ডের হিমেল হাওয়া থেকে ফিরে কলকাতার রাজনৈতিক উষ্ণতায় এসে দেব প্রমাণ করে দিলেন, তিনি শুধু এক সুপারস্টার নন, একজন দায়িত্ববান প্রতিনিধি, একজন সংবেদনশীল রাজনীতিক।