রাজ্যের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন বিতর্ক। শিল্পীদের নিয়ে তৃণমূল নেতাদের নীতি নিয়ে তৃণমূলের অন্দরেই প্রশ্ন উঠছে। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের ঘটনায় বিচার চেয়ে আন্দোলনে নামা শিল্পী লগ্নজিতা (Lagnajita Chakraborty) এবং শিলাজিতকে ঘিরে দলীয় কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ক্রমশ বেড়ে চলেছে। একদিকে লগ্নজিতাকে ঘিরে বয়কটের ডাক, অন্যদিকে শিলাজিতের প্রতি সমর্থন—এই দ্বিচারিতা নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে মতভেদ স্পষ্ট।
Also Read | TMC কাউন্সিলরের অনুষ্ঠানে লগ্নজিতা, ক্ষোভে ফুটছে কর্মীরা
আর জি করের ঘটনা এবং শিল্পীদের প্রতিক্রিয়া
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে ঘটে যাওয়া ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় বিচার চেয়ে রাজ্যের একাধিক শিল্পী পথে নেমেছিলেন। এর মধ্যে অন্যতম ছিলেন জনপ্রিয় গায়িকা লগ্নজিতা চক্রবর্তী। তবে তাঁর প্রতিবাদ ছিল রাজ্য সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরাসরি আক্রমণ করে। এই বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হয় তৃণমূলের একাংশ। দলীয় কর্মীরা তাঁকে বয়কট করার দাবি তোলেন।
এর মধ্যেই নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে কলকাতার এক তৃণমূল কাউন্সিলরের বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে লগ্নজিতাকে প্রধান শিল্পী হিসেবে ডাক। এই অনুষ্ঠানের খবর প্রকাশ্যে আসতেই অনেকে সরব হন। দলের অনেকেই মনে করছেন, একদিকে তাঁকে বয়কটের ডাক, অন্যদিকে দলের কাউন্সিলরের আমন্ত্রণ—এটি তৃণমূলের দ্বিচারিতার পরিচয়।
অন্যদিকে শিলাজিৎ মজুমদারও আর জি কর ইস্যুতে পথে নামেন এবং বিচারের দাবি জানান। তবে তাঁর অবস্থান ছিল অপেক্ষাকৃত মৃদু। শিলাজিৎ সরাসরি রাজ্য সরকার বা মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করেননি। এই বিষয়টি ব্যবহার করে তৃণমূলের একাংশ শিলাজিতের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।
দলীয় নেতাদের যুক্তি ও দ্বন্দ্ব
তৃণমূলের একাংশের দাবি, শিল্পী লগ্নজিতার অবস্থান এবং বক্তব্য দলকে অস্বস্তিতে ফেলেছে। দলের এক নেতা বলেন, “শিল্পীদের পথে নামা গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু লগ্নজিতা যে ভাষায় রাজ্য সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করেছেন, তা মেনে নেওয়া যায় না। অন্যদিকে শিলাজিৎ বিচারের দাবি জানালেও কখনোই রাজ্যের বিরুদ্ধে সরাসরি কথা বলেননি।”
তবে দলের এই অবস্থান নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে একাংশ কর্মীর মধ্যে। তাঁদের মতে, শিল্পীদের মধ্যে ভেদাভেদ করা এবং রাজনৈতিক ফায়দা তোলার জন্য তাঁদের ব্যবহার করা উচিত নয়। দেবাংশু ভট্টাচার্যের মতো তৃণমূলের তরুণ নেতারা এই বিতর্কে সরব হয়েছেন। দেবাংশু স্পষ্টই জানিয়েছেন, “কর্মীদের আবেগকে গুরুত্ব দিতে হবে। শিল্পী এবং সংস্কৃতি কখনো রাজনীতির বলি হতে পারে না।”
তৃণমূলের অন্দরে ক্ষোভের আবহ
তৃণমূলের এই দ্বিচারিতা নিয়ে দলের অন্দরে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, দলীয় নীতি এবং অবস্থানের অভাবেই এমন বিতর্ক মাথাচাড়া দিচ্ছে। দলের এক কর্মী ক্ষোভের সুরে বলেন, “একদিকে শিলাজিতকে মঞ্চে ডাকা হয়, অন্যদিকে লগ্নজিতাকে বয়কটের কথা বলা হয়। তাহলে কি শিল্পীরাও রাজনৈতিক বিভাজনের শিকার হবেন?”
দলীয় ভবিষ্যৎ এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গন
এই বিতর্কের ফলে তৃণমূলের সাংগঠনিক শক্তি এবং দলের সংস্কৃতিমূলক অবস্থান প্রশ্নের মুখে পড়েছে। শিল্পী এবং সংস্কৃতির সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক বরাবরই সংবেদনশীল বিষয়। কিন্তু সম্প্রতি লগ্নজিতা এবং শিলাজিতকে ঘিরে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তা রাজনৈতিক মহলে নতুন সমীকরণ তৈরি করতে পারে।
তৃণমূল নেতৃত্ব এই বিষয়ে কী অবস্থান নেবে, তা দেখার বিষয়। তবে স্পষ্ট, শিল্পীদের নিয়ে এই দ্বিচারিতা দলের অভ্যন্তরীণ ক্ষোভ বাড়িয়ে তুলেছে।