বৃষ্টিকে ভিলেন বানিয়ে বাংলার জিনিস ঘুরিয়ে বাংলাকেই বিক্রি? জানুন মূল্যবৃদ্ধির আসল সত্যি!

চাল থেকে শুরু করে আলু, পেঁয়াজ, তেল, সবজি (Vegetable Price)। মূল্যবৃদ্ধির আগুনে পুড়ছে আমজনতার পকেট। এমনিতেই প্রতিদিনই বাজার থেকে ফিরে আমাদের মুখে একটা কথাই থাকে-“দিনকে…

market-price-hike

চাল থেকে শুরু করে আলু, পেঁয়াজ, তেল, সবজি (Vegetable Price)। মূল্যবৃদ্ধির আগুনে পুড়ছে আমজনতার পকেট। এমনিতেই প্রতিদিনই বাজার থেকে ফিরে আমাদের মুখে একটা কথাই থাকে-“দিনকে দিন যা হাল হচ্ছে কোন কিছুতে হাত দেওয়া যাচ্ছে না” (Vegetable Price)। কিন্তু এবার যেন আম-বাঙালির সকালের সাধের বাজার করাটা একটা বিভীষিকা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রতিদিনই দাম (Vegetable Price) বেড়ে চলেছে। কিন্তু কিছু বললেই আপনার দোকানদার ভিলেন বানায় বৃষ্টিকে। হয় অনাবৃষ্টি নইলে অতিবৃষ্টি। যত দোষ নন্দ ঘোষের মত যত দোষ যেন বেচারা বৃষ্টির। কিন্তু সত্যিই কি বৃষ্টির জন্য দাম বাড়ে? নাকি সত্যিই মহারাষ্ট্র থেকে পেঁয়াজ আসার জন্য দাম বাড়ছে? আসুন জেনে নেওয়া যাক বাজারের কিছু না জানা তথ্য যা সবজির দোকানদার কখনও আপনাকে বলবে না। হয়তো তারা নিজেরাও জানেনা।

   

নাসিকের পেঁয়াজে এত পেয়ার কেন? দামের ঝাঁজে অতিষ্ঠ মমতার বড় নির্দেশ!

প্রথমেই আসা যাক আলুর বিষয়ে। এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গে যে ৫৮৮টি কোল্ড স্টোরেজ আছে তাতে প্রায় ৬০ লক্ষ মেট্রিক টন আলু মজুত করা যায়। উৎপাদিত হয়েছে প্রায় ১১০ লক্ষ মেট্রিক টন এর কাছাকাছি আলু। কিন্তু তা সত্ত্বেও দাম বেড়েই চলে আলুর। বিশেষ করে পুজো যত এগোয় ততই যেন আলুর দাম বাড়তে থাকে। এই বছরও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। মজার বিষয় হল বাজারের চাহিদা আছে জেনেও আলু ব্যবসায়ীরা হিমঘরে আলু মজুত রাখার জন্য বারংবার এক্সটেনশন টাইম চাইছে।

অনেক বিশেষজ্ঞের মতেই এই ভাবেই আলুর দাম কৃত্রিমভাবে বাড়ানো হয়। আর ওদিকে বাইরে রপ্তানি করার বিষয়টি তো আছেই। বাধ্য হয়ে এক সময় উড়িষ্যা এবং অন্যান্য প্রতিবেশী রাজ্যগুলিতে আলুর রপ্তানি বেআইনিও ঘোষণা করতে হয়েছিল রাজ্য সরকারকে। কিন্তু আবারও পরিস্থিতি যেই কে সেই। আলুর দাম এখন ৪০ টাকার ঘর ছুঁয়েছে।

এবার আসা যাক পেঁয়াজের ব্যাপারে। পেঁয়াজের দামের ঝাঁজে অতিষ্ঠ মুখ্যমন্ত্রী এ নিয়ে নবান্নে বিশেষ মিটিং ডেকেছেন। অথচ আপনি জানেন কি পশ্চিমবঙ্গ পেঁয়াজ উৎপাদনে শীর্ষ সারিতে রয়েছে? কিন্তু তবুও আমরা মহারাষ্ট্রের নাসিক কিংবা অন্যান্য রাজ্যগুলোর উপরে পেঁয়াজের জন্য ভরসা করি। এর সব থেকে বড় কারণ পশ্চিমবঙ্গে পেঁয়াজ সংরক্ষণের মতো উপযুক্ত ব্যবস্থাই নাকি নেই। এমনটাই দাবি কৃষকদের।

পশ্চিমবঙ্গের প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৮ লক্ষ মেট্রিক টন পেঁয়াজ লাগে। যার বেশ বড় অংশটাই পশ্চিমবঙ্গের উৎপাদন দিয়েই চালিয়ে নেওয়া যায়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের পেঁয়াজ মাঠ থেকে তোলার পরেই চলে যায় অন্যান্য রাজ্যগুলোতে। তার কারণ হলো পশ্চিমবঙ্গে নাকি পেঁয়াজ সংরক্ষণের উপযুক্ত ব্যবস্থাই নেই। এদিকে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি প্রায় ৪০০০টি মজুতের জায়গা তৈরি করা হয়েছে পেঁয়াজের। তা সত্ত্বেও কেন পেঁয়াজের এই হাল, হতবাক খোদ মুখ্যমন্ত্রীও। আমাদের ফলানো পেঁয়াজই আমাদেরকে ঘুরিয়ে অন্য রাজ্য থেকে কিনতে হয়। মাঝখানে মুনাফা লোটে কিছু ব্যবসায়ীরা।

তেলাপিয়া মাছ খেলে ক্যান্সার হয়! এতদিন জানতেন মমতা, ভুল ভাঙতেই চমকে উঠলেন নবান্নে

চালের ক্ষেত্রেও গল্পটা অনেকটা একরকম। প্রতিবছর চালের দাম বাড়ছে। চালের দোকানদারকে জিজ্ঞাসা করলেই তিনি বৃষ্টি বা বন্যার গল্প বলেন। কিন্তু প্রতিবছরই অন্যান্য দেশে বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভিয়েতনা্‌ মায়ানমারে চালের রপ্তানির পরিমাণ বেড়েই চলেছে। বেশি দাম পাওয়ার আশায় রপ্তানি পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে । এদিকে আভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে দাম বাড়ানোর জন্য ফলন ঠিকঠাক না হওয়ার দাবি করা হচ্ছে।

গত ৬ মাসে চালের দাম বেড়েছে একলাফে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ। আটা ময়দার দামও বেড়েছে প্রায় সমপরিমাণে। ফল থেকে শুরু করে সবজির মূল্যবৃদ্ধি ২০ থেকে ৪০ শতাংশ, তেলের দাম বেড়েছে ঘরে ১০ থেকে ২০ শতাংশ! নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী বৈঠক করেছেন ঠিকই। কিন্তু গোটা বাজারের এই সিস্টেমের পরিবর্তন একেবারে গোড়া থেকে দরকার। এই মজুতদার এবং অসাধু ব্যবসায়ীদর নিজেদের ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া যদি বন্ধ না হয় তাহলে কোনও মিটিংয়েই কোনও কাজের কাজ হবে না।