Tension Erupts at Netaji Indoor: সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক রায়ে এক কলমের আঁচড়ে রাজ্যের প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মী চাকরি হারিয়েছেন। এই রায় যেন তাঁদের জীবনের ভিত্তি কেঁড়ে নিয়েছে। যাঁরা এতদিন ধরে রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, আজ তাঁরা পরিচয়হীন, অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমাবেশে যোগ দিতে চলেছেন, যেখানে তিনি এই চাকরিহারাদের সামনে কী বার্তা দেন, তা নিয়ে রাজ্যবাসীর মধ্যে প্রবল কৌতূহল।
আজ সকাল থেকেই নেতাজি ইন্ডোরের সামনে ভিড় জমাতে শুরু করেন চাকরিহারা কর্মীরা। তাঁদের অনেকেই এসেছেন বিভিন্ন জেলা থেকে। কেউ কেউ দীর্ঘ পথ হেঁটে এসে হাজির হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর সামনে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরতে। তাঁরা বলছেন, “আমরা চুরি করে চাকরি পাইনি। যোগ্যতাতেই পেয়েছি। এখন আদালতের এক রায়ে আমাদের জীবন তছনছ হয়ে গেল।” একাংশের দাবি, রাজ্য সরকার তাঁদের পাশে না দাঁড়ালে ভবিষ্যৎ চরম অনিশ্চয়তায় পড়বে।
সমাবেশ শুরুর আগেই নেতাজি ইন্ডোর চত্বরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ‘যোগ্য’ ও ‘অযোগ্য’ শব্দদুটি ঘিরে তীব্র মতবিরোধ শুরু হয় উপস্থিত চাকরিহারাদের একাংশের মধ্যে। অশান্তি চরমে পৌঁছায় যখন প্রাক্তন শিক্ষক আবুল বাশারকে সমাবেশস্থলে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। তাঁকে ঘিরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে, এবং পুলিশকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। শান্তি বজায় রাখতে মাইকিং শুরু করে কলকাতা পুলিশ। পরিস্থিতি সামাল দিতে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান কলকাতা পুলিশের নগরপাল মনোজ ভার্মা। তিনি নিজে পরিস্থিতি পরিদর্শন করে বিক্ষোভকারীদের শান্ত রাখার আহ্বান জানান।
চাকরি হারানোর যন্ত্রণায় অসুস্থ হয়ে পড়েন কয়েকজন প্রাক্তন শিক্ষক-শিক্ষিকা। তাঁদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন অন্য সহকর্মীরা। কেউ কেউ অজ্ঞান হয়ে পড়ায় অ্যাম্বুলেন্স ডাকা হয়। পরিস্থিতি এতটাই সংকটজনক হয়ে পড়ে যে আয়োজকদের রীতিমতো বেগ পেতে হয় সমাবেশ পরিচালনায়।
চাকরিহারা কর্মীদের দাবি, তাঁরা আবার স্কুলে ফিরে যেতে চান, তাঁরা চান তাঁদের সম্মান ও পরিচয় ফিরিয়ে দেওয়া হোক। মুখ্যমন্ত্রীর দিকে তাঁদের একমাত্র ভরসা। সমাবেশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ থেকে কী বার্তা আসে, সেটাই স্থির করবে আগামী দিনের দিশা। মুখ্যমন্ত্রী কি বিকল্প কর্মসংস্থানের ঘোষণা করবেন, নাকি আইনি পথে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার আশ্বাস দেবেন—এই প্রশ্নই এখন সবার মুখে মুখে।
এই সমাবেশ যেন রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রে একটি নতুন মোড়ের সূচনা হতে চলেছে। আশার আলো দেখছেন অনেকে, আবার অনেকে সন্দিহান। তবে নিশ্চিতভাবে বলা যায়, নেতাজি ইন্ডোর আজ শুধু একটি স্থানে সীমাবদ্ধ নয়—এটি আজ হাজার হাজার জীবনের আশা-নিরাশার কেন্দ্রবিন্দু।