‘সত্যি গল্প’ লিখে বিজেপির অন্দরে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন দলটির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথাগত রায় (Tathagata Roy)। ওই সত্যি গল্পে তিনি তুলে ধরেছেন বিএসএফকে ঘুষ দিয়ে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের ভারতে ঢুকে পড়ার একটি ঘটনা। রোমাঞ্চকর সেই গল্পটি তথাগতবাবু তার ফেসবুকে পোস্ট করার পরেই প্রশ্ন উঠছে, অনুপ্রবেশ ইস্যুতে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে বিএসএফের ভূমিকা সমালোচনা করেন সেটাই সমর্থন করেছেন তথাগত রায়।
উল্লেখ্য বিজেপির অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গে লাগাতার বাংলাদেশি মুসলিম নাগরিকদের অনুপ্রবেশকে রাজনৈতিক সুবিধার জন্য ব্যবহার করে হিন্দুদের সংখ্যালঘু করে দিচ্ছেন মমতা। আর তৃণমূল কংগ্রেসের অভিযোগ, সীমান্তে পাহারা দেয় বিএসএফ। এটি সরাসরি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নিয়ন্ত্রণাধীন। সেই মন্ত্রকের মন্ত্রী অমিত শাহ।
বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ ইস্যুতে বিজেপি ও কট্টর হিন্দুত্ববাদী নেতাদের অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গের পূর্বতন শাসকদল সিপিআইএম ভোট ব্যাংকের কারণে এ বিষয়ে চোখ বন্ধ করেছিল। আর সিপিআইএমের পাল্টা দাবি, সীমান্ত সুরক্ষা ও অনুপ্রবেশ রোখার দায়িত্ব রাজ্য সরকারের নয়, কেন্দ্রীয় সরকারের। কেন্দ্রে বিভিন্ন সময়ে বিজেপি নেতৃত্বে এনডিএ সরকার এসেছে। তাহলে তাদেরই জবাব দিতে হবে। এই একই যুক্তি রাজ্যের বর্তমান শাসকদল তৃণমূলেরও।
বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ ইস্যুতে বিএসএফ কর্মীদের স্ত্রীদের একাউন্টে টাকা পৌঁছে যাওয়ার ‘সত্যি গল্প’ লিখে বিজেপিকে বিড়ম্বনায় ফেলেছেন দলটির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথাগত রায়।
তিনি বাংলাদেশ থেকে ইছামতি নদী পেরিয়ে উত্তর ২৪ পরগনার টাকি হয়ে ভারতে অনুপ্রবেশের ‘সত্যি গল্প’-তে লিখেছেন, “চলুন এমন একটি সত্য গল্প বলি যা আপনাকে ভিতর থেকে নাড়িয়ে দেবে — একসাথে গর্ব এবং লজ্জায় ভরে তুলবে।” গল্পের একাংশে তিনি লিখেছেন, “IB এক সিদ্ধান্ত নেয় — তারা স্থানীয় BSF (সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনী)-কে জানাবে না। কারণ গোটা এলাকা জুড়ে BSF-এর অনেক জওয়ান ঘুষ খেয়ে অনুপ্রবেশকারীদের ঢুকতে দিচ্ছে বলে অভিযোগ ছিল।তাই IB একা নামল এই অপারেশনে।”
তথাগত রায় লিখেছেন, “IB এখানেই থেমে থাকেনি। তারা ট্র্যাক করে ৩০টি UPI অ্যাকাউন্ট — সবই ঘুষ নেওয়া BSF জওয়ানদের স্ত্রীর নামে খোলা। প্রতিবার ছোট অঙ্কে লেনদেন — ₹১১৩০, ₹২৩৫০, ₹৬২৭০ — যেন সন্দেহ না হয়।.কিন্তু এই লেনদেনগুলি ঠিক সেই সময়েই হত, যখন অনুপ্রবেশকারীরা ভাটার সময় নদী পেরোত।”
সত্যি গল্পে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর অধীনে থাকা বিসিএফ বাহিনী সম্পর্কে এমনই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তথাগত রায়ের। এই পোস্ট সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল।
বিজেপি পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় বর্তমান বিরোধী দল। দলটির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য, প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, দিলীপ ঘোষ ও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ ইস্যুতে সরব। তারা কীভাবে তাদেরই দলের আরও এক প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি ও প্রাক্তন রাজ্যপাল তথাগত রায়ের সত্যি গল্পকে মিথ্যা বলবেন তা নিয়ে সামাজিক মাধ্যম ও রাজনৈতিক মহল তোলপাড়।