আরজি কর মেডিকেল কলেজে চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার এক বছর পূর্তিতে নবান্ন অভিযানের ডাক দেওয়া হয়েছিল (Suvendu)। কিন্তু পার্কস্ট্রিটে পুলিশের লাঠিচার্জে নির্যাতিতার মা গুরুতর আহত হওয়ার পর পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা করেছেন।
শনিবার তিনি নির্যাতিতার মাকে দেখতে হাসপাতালে ছুটে যান এবং সাংবাদিকদের সামনে বলেন, “আমি ওঁকে মিছিলে অংশ নিতে রাজি করিয়েছিলাম। তাই ওঁর সুস্থতা আমার দায়িত্ব।” এই ঘটনা রাজ্য রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে এবং শুভেন্দুর এই পদক্ষেপ জনমনে সাড়া ফেলেছে।
নবান্ন অভিযান ও সংঘর্ষ
আরজি কর কাণ্ডে ন্যায়বিচারের দাবিতে পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজের ডাকে নির্যাতিতার পরিবার, সাধারণ মানুষ এবং বিজেপি সমর্থকরা নবান্ন অভিযানে অংশ নেন। ডোরিনা ক্রসিং থেকে পার্ক স্ট্রিটে পৌঁছালে পুলিশের ব্যারিকেডের মুখে পড়ে। আন্দোলনকারীরা গার্ডরেল টপকানোর চেষ্টা করলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে।
এই ঘটনায় নির্যাতিতার মা কপালে গভীর চোট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁর হাতের শাঁখা ভেঙে যায়। এছাড়া, বিজেপি নেতা অর্জুন সিং সহ প্রায় ১০০ জন আন্দোলনকারী আহত হন। পুলিশের দাবি, আন্দোলনকারীরা পাথর ছুঁড়ে এবং ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করে, যার ফলে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হয়।
শুভেন্দুর হাসপাতালে যাওয়া ও মন্তব্য
নির্যাতিতার মা আহত হওয়ার খবর পাওয়ার পর শুভেন্দু অধিকারী তৎক্ষণাৎ আন্দোলন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেন। তিনি হাসপাতালে গিয়ে নির্যাতিতার মায়ের সঙ্গে দেখা করেন এবং তাঁর চিকিৎসার খোঁজখবর নেন। হাসপাতালের বাইরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, “আমি ওঁকে মিছিলে অংশ নিতে উৎসাহ দিয়েছিলাম।
তাই ওঁর এই অবস্থার জন্য আমি নিজেকে দায়ী মনে করছি। ওঁর সুস্থতা আমার দায়িত্ব। আমরা নিশ্চিত করব যে উনি দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন।” তিনি আরও বলেন, “এই ঘটনায় আমরা ন্যায়বিচারের দাবি থেকে পিছু হটছি না। আমরা আইনি পথে লড়াই চালিয়ে যাব।”
বিজেপির অবস্থান
বিজেপি নেতা সুকান্ত মজুমদার বলেন, “শুভেন্দু অধিকারীর হাসপাতালে যাওয়া নির্যাতিতার পরিবারের প্রতি আমাদের সমর্থনের প্রমাণ। আমরা ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই চালিয়ে যাব।” তিনি পুলিশের লাঠিচার্জকে ‘বর্বর’ বলে সমালোচনা করেন এবং আটক কর্মীদের মুক্তির দাবি জানান।
বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা পাল বলেন, “নির্যাতিতার মায়ের উপর হামলা রাজ্য সরকারের নৈতিক দেউলিয়াত্বের প্রমাণ। শুভেন্দুদার এই পদক্ষেপ দেখায়, আমরা নির্যাতিতার পরিবারের পাশে আছি।”
চেন্নাই ছেড়ে কোন দলে অশ্বিন? জানালেন নিজেই, দেখুন ভিডিও
আইনি পদক্ষেপ
কলকাতা হাইকোর্টে নবান্ন অভিযান বন্ধ করার জন্য জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়েছিল, এবং আদালত পুলিশের অনুমতি ছাড়া জমায়েত নিষিদ্ধ করেছিল। শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “আমরা আইনি পথে লড়াই চালিয়ে যাব। নির্যাতিতার মায়ের চিকিৎসার জন্য আমরা সব ধরনের সাহায্য করব।” পুলিশ আটক কর্মীদের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে।
শুভেন্দু অধিকারীর আন্দোলন প্রত্যাহার এবং নির্যাতিতার মাকে হাসপাতালে দেখতে যাওয়ার ঘটনা রাজ্য রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তাঁর এই পদক্ষেপ নির্যাতিতার পরিবারের প্রতি বিজেপির সমর্থনের ইঙ্গিত দেয়।
তবে তৃণমূলের সমালোচনা এবং পুলিশের ব্যবস্থা এই ঘটনাকে আরও জটিল করেছে। আরজি কর কাণ্ডে ন্যায়বিচারের দাবি এখনও অব্যাহত রয়েছে, এবং এই ঘটনা ভবিষ্যতে আরও বড় আন্দোলনের পথ প্রশস্ত করতে পারে।