CAA-NRC কর‌তে দেব না, হুঁশিয়ারি মুখ্যমন্ত্রী মমতার

সোমবারই দেশ জুড়ে সিএএ অর্থাৎ নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইনের বিজ্ঞপ্তি জারি হতে পারে। এই খবরে রীতিমত চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে চারিদিকে। খবরের আঁচ পড়েছে বাংলায়ও। জরুরী বৈঠকে বসেন…

সোমবারই দেশ জুড়ে সিএএ অর্থাৎ নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইনের বিজ্ঞপ্তি জারি হতে পারে। এই খবরে রীতিমত চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে চারিদিকে। খবরের আঁচ পড়েছে বাংলায়ও। জরুরী বৈঠকে বসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপরই নবান্ন থেকে প্রেস মিট করে তীব্র প্রতিবাদ জানান সিএএ-র বিজ্ঞপ্তি জারির সম্ভাবনা নিয়ে। ‘ক্যা ক্যা’ বলে এই সিএএকে সাংবাদিক সম্মেলনে কটাক্ষও করেন মুখ্যমন্ত্রী।

সোমবার বিকেলে সাংবাদিক সম্মেলন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মনে করা হচ্ছে লোকসভার আগে সিএএ বা সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন কার্যকর নরেন্দ্র মোদীর ‘মাস্টারস্ট্রোক’। সিএএ নিয়ে তীব্র বিরোধীতায় বিরোধীদের একটি একাংশ। তার মধ্যে প্রথম থেকেই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিএএ-র বিরোধিতা করে এসেছেন। আজ ফের সাংবাদিক সম্মেলন থেকে তীব্র প্রতিবাদ জানান তিনি। সকল নাগরিককে ভয় না পাওয়ার আশ্বাস দেন।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আজকে যাদের বলা হচ্ছে, ছেলের হাতে মোয়া। বলবেন আপনারা পোর্টালে নাম লিখুন। পোর্টালে তো সব ধর্মের মানুষই নাম লেখাবে। কিন্তু সেই নাম আদৌ কার্যকরি হবে। আর যদি ক্যা করে বলে আপনারা নাগরিক। তাহলে এতদিন কি তারা নাগরিক ছিল না? সেই জন্যই নমঃশূদ্র ও মতুয়া ভাইবোনকে আধার কার্ড বাতিলের চক্রান্ত হয়েছিল?”

এদিন কড়া ভাষায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “যদি কোনও বৈষম্য হয় সে জিনিস আমরা মানি না। ধর্ম বৈষম্য, বর্ণ বৈষম্য বা লিঙ্গ বৈষম্য হোক।” মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন যে, “আমি প্রথমেই বলে রাখি পুরো রিপোর্ট দেখার পর কাগজ হাতে পাওয়ার পর কাল হাবড়ার মিটিং থেকে সবটা বলব। আমি বিস্তারিত দেখার পর মঙ্গলবার বলব। তবে ক্যা দেখিয়ে এনআরসি নিয়ে এসে কারও যারা এখানকার নাগরিক, তাদের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয় আমরা কিন্তু চুপ থাকব না?”

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “তার মানে নতুন কিছু করবে, পুরনোটার কোনও গুরুত্ব থাকবে না। আমাদের থিওরি, আমরা সবসময় বলি সবাই নাগরিক। আজ কেউ চাকরি করছে, কেউ স্কুলে পড়ছে, কেউ জমিজমা কিনে দীর্ঘদিন ধরে বসতি তৈরি করেছে। তার মানে সেগুলি ভ্যালিড নয়? আইনি প্রশ্ন হবে না তো? আগে যে সুযোগ সুবিধা পেতেন, সব অবৈধ হয়ে যাবে? তাদের ভোটেই তো মুখ্যমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী, গ্রামসভা, পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদ, কর্পোরেশন হয়েছে। সেই ভোটের, সেই নাগরিকত্বের কোনও মূল্য নেই? নাগরিকত্ব ভোটের আগে নতুন করে চিন্তা করতে হচ্ছে?”

এনআরসি নিয়েও সুর চড়ান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “আমরা স্ট্রংলি এটার প্রতিবাদ করব। আমরা আগেই জানিয়ে গেলাম। দ্বিতীয়ত, নো এনআরসি। এনআরসি মানতেই পারি না। আর ক্যা-এর নাম করে কাউকে ডিটেনশন ক্যাম্পে রেখে দেবে এই চালাকিও আমরা করতে দেব না।”

“ভোট আজকে আছে, কাল ফুরিয়ে যাবে। এসব লোক দেখানো, প্রতারণা, ছলনা। এতে যদি কেউ খুশি হয়, আমি খুশি হব। কিন্তু কেউ দুঃখ পায় আমি দুঃখ পাব। তাই অপেক্ষা করছি টোটাল আইনটা দেখার জন্য। এখনও মনে করি আমাদের এখানে যারা আছেন, সারা ভারতবর্ষে, যারা ভারবর্ষে বসবাস করে, বাংলায় বসবাস করে, প্রত্যেকে নাগরিক। তাঁদের নাগরিক অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার, সামাজিক অধিকার, ব্যক্তিগত অধিকার সবই থাকবে। এই নতুন আইন কারও আগের অধিকার বাতিল করে দেবে না তো? আমার মাথায় এটা আসছে তার কারণ, আগের আইনটায় তাই বলা ছিল। এবারের আইনটা কী করছে আমাকে দেখতে হবে।”