সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্র, ১০০ দিনের কাজ নিয়ে চড়ছে রাজনীতি

কলকাতা: ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প নিয়ে ফের রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তাল। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে এবার সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) দ্বারস্থ হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। হাইকোর্টের…

Supreme Court Declares SSC Exams Will Be Held on 7th and 14th as Scheduled

কলকাতা: ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প নিয়ে ফের রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তাল। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে এবার সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) দ্বারস্থ হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ স্পষ্ট জানিয়েছিল, মানুষের কর্মসংস্থান অগ্রাধিকার পাবে। তাই ১ আগস্ট থেকেই বাংলায় ১০০ দিনের প্রকল্প চালু করতে হবে। কিন্তু সেই নির্দেশ মানতে নারাজ কেন্দ্র। তাই সোমবার শীর্ষ আদালতে বিশেষ আবেদন করে কেন্দ্রীয় সরকার।

এই পদক্ষেপ ঘিরে ফের রাজ্য-রাজনীতি উত্তাল। তৃণমূল কংগ্রেস অভিযোগ তুলেছে, কেন্দ্রের এই পদক্ষেপই প্রমাণ করে বিজেপি কতটা বাংলা-বিরোধী। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা লোকসভার দলনেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের দাবি ছিল বাংলাকে যেভাবে বঞ্চিত করা হয়েছে সেই পাওনা আগে মেটাতে হবে। আগের টাকা না মিটিয়ে মোদি সরকার সুপ্রিম কোর্টে চলে গেল।”

   

তিনি আরও দাবি করেন, গত তিন-চার বছর ধরে কেন্দ্রীয় সরকার ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে বাংলাকে বঞ্চিত করছে। যার ফলে কোটি কোটি গরিব মানুষের রোজগার বন্ধ হয়ে গিয়েছে। হাইকোর্টের রায় মানুষের পক্ষে গিয়েছিল। কিন্তু সেই রায়কে মানতে চাইছে না কেন্দ্র। বরং বাংলার উন্নয়নের পথে বাধা তৈরি করতে রাজনৈতিক কারণে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে তারা।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আরও জানান, বর্তমানে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। সেই টাকা অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। তৃণমূল সাংসদরা এ বিষয়ে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের সঙ্গে দেখা করার পরিকল্পনা করেছেন। অভিষেকের অভিযোগ, “বাংলার মানুষকে ভাতে মারতেই বিজেপি এই রাস্তায় হাঁটছে।”

অন্যদিকে, বিজেপির পাল্টা অভিযোগ—বাংলায় ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে ১০০ দিনের কাজের টাকায়। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “যতক্ষণ না ফেক জব কার্ড আর আসল জব কার্ড আলাদা করা হচ্ছে, ততক্ষণ টাকা দেওয়া উচিত নয়। টাকা নিয়ে দুর্নীতি করে অনেকেই পালিয়ে গিয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।”

Advertisements

রাজনৈতিক মহলের মতে, ১০০ দিনের কাজের টাকা নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্যের এই দ্বন্দ্ব আসন্ন ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটেরও বড় ইস্যু হয়ে উঠতে পারে। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের সময়ও তৃণমূল এই বঞ্চনার অভিযোগকে হাতিয়ার করেছিল। এবারও একই অভিযোগকে সামনে রেখে বিজেপিকে সরাসরি আক্রমণ করছে শাসকদল।

হাইকোর্টের রায়ে স্পষ্ট বলা হয়েছিল, গরিব মানুষের স্বার্থে অবিলম্বে কাজ শুরু করতে হবে। বিচারপতির বেঞ্চ কেন্দ্রকে তীব্র ভর্ৎসনা করে জানিয়েছিল, রাজনৈতিক মতাদর্শ যাই হোক না কেন, মানুষের কর্মসংস্থানই অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত। কিন্তু কেন্দ্র তার বিপরীত পথে হাঁটল। এই কারণে রাজনৈতিক চাপানউতোর আরও চড়তে শুরু করেছে।

সুপ্রিম কোর্ট ইতিমধ্যেই কেন্দ্রের আবেদন গ্রহণ করেছে। চলতি সপ্তাহেই এই মামলার শুনানি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এখন দেখার বিষয়, শীর্ষ আদালত কি হাইকোর্টের নির্দেশ বহাল রাখে, নাকি কেন্দ্রের যুক্তিকে গুরুত্ব দেয়।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, বাংলার জন্য এই মামলার ফলাফল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ এর ওপর নির্ভর করছে লক্ষাধিক পরিবারের ভবিষ্যৎ। আদালত কোন পথে যায়, সেটাই এখন রাজনৈতিক মহলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।