উত্তর ২৪ পরগনার উত্তর ব্যারাকপুর পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের (TMC Councillor Mystery Death) রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে নতুন এক চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে। শনিবার সকালে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার হওয়ার পর একটি ‘সুইসাইড নোট’ পাওয়া গেছে, যা দেখে তদন্তকারীদের সন্দেহ আরও গভীর হতে শুরু করেছে। চিলেকোঠা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেহ উদ্ধারের সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ একটি আড়াই পাতার চিঠি পায়, যা আত্মহত্যার পূর্বে লেখা ‘সুইসাইড নোট’ বলে মনে করা হচ্ছে।
চিঠি থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে। জানা যাচ্ছে, সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ব্ল্যাকমেলিংয়ের শিকার হয়েছিলেন। তাঁর পরিবার এবং স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব সূত্রে দাবি করা হয়েছে, ভুয়ো ভিডিও দেখিয়ে তাঁকে ব্ল্যাকমেল করা হয়েছিল। সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছেলে সার্থক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, চিঠিতে ওই ব্ল্যাকমেলিংয়ের ঘটনা বিস্তারিতভাবে লেখা ছিল।
অমিত শাহের পর এবার রাহুলের হেলিকপ্টারে তল্লাশি কমিশনের
চিঠিতে চারজনের নাম উল্লেখ রয়েছে, যাদের মধ্যে দু’জনকে তাঁর পরিবার চেনে। সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, ওই ব্ল্যাকমেলিংয়ের ভিডিওটির মধ্যে জনৈকা জয়শ্রী দাস এবং তাঁর স্বামী সঞ্জয় দাসের নাম উল্লেখ রয়েছে। তবে এই ভিডিওটি আসল নাকি ভুয়ো তা নিশ্চিত করতে পুলিশ ভিডিওটি পরীক্ষা করে দেখবে। পুলিশ ইতিমধ্যেই পুরো ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু করেছে।
সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ১২ নভেম্বর, বৃহস্পতিবার থেকে নিখোঁজ ছিলেন। তিনি শুক্রবার রাতে বাড়ি ফিরেছিলেন। তবে কিছু সময় পর আবার বাইরে চলে যান। এই সময়ের মধ্যে তিনি পরিবারের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি এবং মোবাইলও বাড়িতে রেখে গিয়েছিলেন। গভীর রাতে বাড়ি ফিরে এসে শনিবার সকালে তাঁর গলায় দড়ি দেওয়া অবস্থায় মৃতদেহ পাওয়া যায়।
দুদিন নিখোঁজের পর বাড়ির চিলেকোঠা থেকে উদ্ধার উত্তর ব্যারাকপুর পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যানের দেহ
ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (উত্তর) গণেশ বিশ্বাস জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে তদন্ত শুরু করা হয়েছে এবং পুলিশ ঘটনাটির সমস্ত দিক খতিয়ে দেখছে। তিনি জানিয়েছেন, “এখনই বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়, তবে তদন্তের মাধ্যমে পুরো বিষয়টি পরিষ্কার হবে।” ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে। সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যু নিয়ে একাধিক দিক থেকে তদন্ত চলছে।
যদিও তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ জানানো হয়নি। তবে স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন উঠেছে, তাঁর মৃত্যু রাজনৈতিক বা পারিবারিক কোন্দলের ফল হতে পারে। তৃণমূল নেতা হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকার কারণে বিভিন্ন শত্রু তৈরি হওয়াও অস্বাভাবিক নয়। এছাড়া, গত কয়েকদিনে উত্তর ২৪ পরগনার এলাকায় বেশ কিছু রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল।
চা-বাগানের নালায় পড়ে মৃত্যু হস্তিশাবকের, ক্ষিপ্ত মা হাতির তান্ডব
তবে, সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আত্মহত্যার ঘটনা কী রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের ফল নাকি তার ব্যক্তিগত জীবনের কোনো চাপের কারণে এই ঘটনা ঘটল তা তদন্তের পরে স্পষ্ট হবে। এই ঘটনার পর এলাকার তৃণমূল নেতৃত্বে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্থানীয় কাউন্সিলররা জানিয়েছেন, “এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। সত্যজিৎ ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে এলাকার উন্নয়ন নিয়ে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যু কোনওভাবেই মেনে নেওয়া যাচ্ছে না।”
এই মৃত্যুর পেছনে আসল কারণ কী ছিল তা নির্ধারণ করতে পুলিশ ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এবং চিঠির বিশদ পর্যালোচনা করবে। এদিকে এই ঘটনাটি উত্তর ব্যারাকপুর এবং পুরো রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। তবে সেই সুইসাইট নোট থেকে আর কী কী তথ্য বেরিয়ে আসে এখন সেটাই দেখার।