পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশন (SSC) নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে টনক নড়ল কমিশনের। গতকাল, ২৮ আগস্ট, সুপ্রিম কোর্ট পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশনকে (এসএসসি) স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছিল যে, ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জড়িত অযোগ্য প্রার্থীদের তালিকা আগামী সাত দিনের মধ্যে প্রকাশ করতে হবে।
তবে, আজ এসএসসি সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়েছে যে, সাত দিনের পরিবর্তে তারা আগামী দুদিনের মধ্যেই এই তালিকা প্রকাশ করবে। এই ঘোষণা রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থায় দীর্ঘদিন ধরে চলা নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় নিয়ে এসেছে ।২০১৬ সালের স্টেট লেভেল সিলেকশন টেস্ট (এসএলএসটি) এর মাধ্যমে শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মী নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল।
এই মামলায় কলকাতা হাইকোর্ট ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে ২৫,৭৫৩ জন শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীর নিয়োগ বাতিল করার নির্দেশ দেয়। হাইকোর্টের এই রায়কে সমর্থন করে সুপ্রিম কোর্ট এপ্রিল ২০২৫-এ রায় দিয়েছিল যে, নিয়োগ প্রক্রিয়াটি ‘ব্যাপক কারচুপি ও জালিয়াতির’ কারণে দূষিত হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ উল্লেখ করেছিল, “এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার বৈধতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পূর্ণভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে।” তবে, আদালত এও বলেছিল যে, যেসব প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট দুর্নীতির অভিযোগ নেই, তাদের নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে।
এই মামলায় সিবিআই তদন্তে প্রকাশ পায় যে, ওএমআর শিটে কারচুপি, প্যানেলের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নিয়োগ, এবং অযোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগের জন্য ঘুষের লেনদেনের মতো গুরুতর দুর্নীতি হয়েছে। সিবিআইয়ের চার্জশীটে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, এসএসসির প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবিরেশ ভট্টাচার্য, উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিনহা সহ বেশ কয়েকজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
চার্জশীটে জমা দেওয়া ভিডিও ফুটেজে এই দুর্নীতির প্রক্রিয়া স্পষ্টভাবে ধরা পড়েছে, যা আদালতে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে গৃহীত হয়েছে।সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে অযোগ্য প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশের বিষয়টি এই মামলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়। এসএসসি জানিয়েছে, তারা দুদিনের মধ্যে এই তালিকা প্রকাশ করবে, যাতে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত প্রার্থীদের চিহ্নিত করা যায়।
এই তালিকায় প্রায় ৬,২৭৬ জন প্রার্থীর নাম থাকতে পারে, যাদের মধ্যে ১,৪৯৮ জন প্যানেলের বাইরে থেকে নিয়োগ পেয়েছেন, ৯২৬ জন র্যাঙ্ক জাম্পিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছেন, এবং ৪,০৯১ জনের ওএমআর শিটে অসঙ্গতি পাওয়া গেছে।
অনেকে মনে করছেন, অযোগ্য প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশের ফলে যোগ্য প্রার্থীরা তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবেন। তবে, নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষকের ঘাটতি একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
অনলাইন মানি গেম নিষিদ্ধকরণে আজ ব্যাংক-ফিনটেকের সঙ্গে প্রথম বৈঠক
সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে যে, নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে, এবং এর জন্য বিজ্ঞাপন ২০২৫ সালের ৩১ মে-র মধ্যে প্রকাশ করতে হবে।