SSC Scam: ৫০০ দিনের পরেও আর কত? ধর্মতলার ধর্নামঞ্চ উত্তর চায় মমতা সরকারের

শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি (SSC Scam) হয়েছে। প্রথম সরব হয়েছিলেন তাঁরাই৷ দীর্ঘ অপেক্ষার পর সর্বহারা চাকরি প্রার্থীদের ভরসা ছিল সরকারের কানে নিজেদের দাবি পৌঁছে দেওয়া। সেবিষয়ে…

শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি (SSC Scam) হয়েছে। প্রথম সরব হয়েছিলেন তাঁরাই৷ দীর্ঘ অপেক্ষার পর সর্বহারা চাকরি প্রার্থীদের ভরসা ছিল সরকারের কানে নিজেদের দাবি পৌঁছে দেওয়া। সেবিষয়ে অবিচল থেকেছেন তাঁরা। মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি শুধুমাত্র কয়েকটি শব্দ৷ সেটা বুঝতে পেরেই নিজেদের দাবি নিয়ে অটুট আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা৷ কেউ এসেছেন পরিবারের প্রতিকুলতাকে দূরে সরিয়ে, কেউ এসেছেন কোলের বাচ্ছাটাকে নিয়ে, নেই জলের ব্যবস্থা, নেই শৌচাগারের ব্যবস্থাও৷ ভরসা দুটি ত্রিপল। শব্দ একটাই, দাবি একটাই স্বচ্ছ নিয়োগ করুক সরকার৷

সম্প্রতি প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করেছে ইডি৷ তাঁরই এক ঘনিষ্ঠের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে বস্তা বস্তা টাকা। মন্ত্রীর বাড়ি থেকে মিলেছে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির একাধিক নথি৷ উদ্ধার হয়েছে শিক্ষা দফতরের খামে মোড়া টাকাও। কোথা থেকে এল এত টাকা? পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অর্পিতা মুখ্যোপাধ্যায়ের সম্পত্তি, সম্পর্ক নিয়ে কাটাছেঁড়া চলছে প্রতি ঘন্টায়। কিন্তু এখনও যারা উপেক্ষিত, যারা বঞ্চিত, যারা প্রতিনিয়ত নিজেদের অধিকারের দাবি করছে, তাঁদেরকে নিয়ে শব্দ খরচের অবকাশ সত্যিই কম। অথচ তিন দফায় ৫০০ দিন ধরে আন্দোলন করে চলেছেন তাঁরা৷ মহামারির ভয়াবহতা তাঁদেরকে ছুঁতে পারেনি। শহরে জ্বালাপোড়া গরমের থেকে বেশি উত্তাপ তাঁদের আন্দোলনে। বৃষ্টির জল আন্দোলন মঞ্চে ভরে গেলেও ভেসে যায়নি আন্দোলন৷

চলতি বছরেই ‘মানবিক’ মুখ্যমন্ত্রী ঈদের দিনে কথা বলেন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি নিজে বিষয়টি দেখবেন৷ কিন্তু সেটাও বাস্তবায়িত হয়নি৷ বরং দুর্নীতির কোপে চাকরি হারিয়েছেন মন্ত্রী পরেশ অধিকারীর কন্যা অঙ্কিতা অধিকারী৷ অধিকারের লড়াইয়ে জয়ী হয়েছেন ববিতা অধিকারী। ক্যান্সার আক্রান্ত সোমা দাসের চাকরি হলেও, তাঁর এই চাকরি অধিকার ছিল ক্যান্সার ধরা পড়ার আগেই। মারন রোগের সঙ্গে লড়ছেন অনুপ৷ বড় অপারেশনের পরে ফিরেছেন ধর্না মঞ্চে৷ সরকারের টনক নড়েনি। বরং পিঁয়াজের খোসার মতো বের হয়েছে দুর্নীতির প্রতিটি দৃশ্য।

যুব ছাত্র অধিকার মঞ্চের সভাপতি মহিদুল ইসলামের বক্তব্য, ৫০০ দিন ধরে যোগ্যরা কখনও রাস্তায় ঘুরছে তো কখনও গান্ধীমূর্তিতে অবস্থান করছে আর অযোগ্যরা স্কুলে রয়েছে, এই অযোগ্যদের যারা স্কুলে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে তারা এখন বিচারাধীন৷আইনের কাজ আইন করুক আমাদের অবিলম্বে নিয়োগ করে স্কুলে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হোক ৷ এই অন্যায়ের জন্য অনেকের প্রাণ গিয়েছে, আর সতীর্থদের হারাতে চান না তিনি।

যুব ছাত্র অধিকার মঞ্চের স্টেট কো-অর্ডিনেটর সুদীপ মন্ডল জানিয়েছেন, মেধাতালিকা ভুক্ত অথচ চাকরি থেকে বঞ্চিত শিক্ষক-শিক্ষিকা পদপ্রার্থীদের অতি দ্রুত নিয়োগের জন্য জরুরিকালীন ব্যবস্হা গ্রহণ করা হোক। প্রয়োজনে মহামান্য হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি সহ অন্যান্য বিচারপতি এবং সর্বদলীয় নেতৃত্বদের নিয়ে একটি বৈঠকের ব্যবস্থা করে যারা গান্ধীমূর্তির পাদদেশে যোগ্য চাকরি প্রার্থী হয়েও ৫০০ দিন ধরে চোখের জল ফেলছেন তাদের প্রতি মানবিকতা দেখিয়ে নবম থেকে দ্বাদশের শিক্ষক পদের মেধাতালিকা ভুক্ত অথচ চাকরি থেকে বঞ্চিত সকল শিক্ষক-্শিক্ষিকা পদপ্রার্থীদের অতি দ্রুত নিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হোক।

কলকাতার কংগ্রেস নেতা আশুতোষ মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ৫০০ দিন হয়ে গেল আর কত দিন যোগ্য চাকরি প্রার্থীদের অসহায় হয়ে ধর্ণায় বসে থাকতে হবে? এদের আগে অবিলম্বে নিয়োগ করা হোক। যুব বিপ্লবী অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রনজয় সেনগুপ্ত জানিয়েছেন যে দুর্নীতির কারণে বঞ্চিত হয়ে যোগ্য চাকরি প্রার্থীদের ধর্ণায় বসতে হয়েছে এটি খুবই দুঃখজনক। মেধাতালিকায় ভুক্ত অথচ দুর্নীতির কারণে বঞ্চিত সকল শিক্ষক-্শিক্ষিকা পদপ্রার্থীদের অবিলম্বে নিয়োগ করা হোক।

দিল্লির কৃষক আন্দোলনের নেতৃত্ব কার্তিক পাল জানিয়েছেন, ধর্মতলায় গান্ধীমূর্তির পাদদেশে ৫০০ দিন ধরে বঞ্চিত চাকরি প্রার্থীগণ ধর্ণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এদের কথা মানবিকতার সাথে ভাবা হোক। সকল মেধাতালিকা ভুক্ত অথচ চাকরিতে নিয়োগপত্র না পাওয়া হবু শিক্ষক-শিক্ষিকা পদপ্রার্থীদের অতি দ্রুত চাকরিতে নিয়োগ করা হোক।

ধর্নামঞ্চে উপস্থিত হয়েছে বিশিষ্ট সমাজসেবক অশ্বিনী কুমার সিং৷ তাঁর কথায়, ধর্ণারত চাকরি প্রার্থীদের বুকভরা যন্ত্রণার কথা সরাসরি নিজে চোখে দেখেও বাক্যে প্রকাশ করা খুবই কঠিন। প্রচন্ড বৃষ্টির মধ্যে নীল রঙের পাতলা ত্রিপল ধরে দাঁড়িয়ে চাকরি প্রার্থীগণ তাঁদের ন্যায্য চাকরি ফিরিয়ে আনতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।বেশ কয়েকটি মহিলা চাকরি প্রার্থী তাদের ছোট্ট শিশুকে বুকে ধরে নীরবে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। আবার কয়েকজন পুরুষ চাকরি প্রার্থী ট্রিপল ধরে অন্যদের বৃষ্টির ভেজা থেকে রক্ষা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সেই দুঃখের কথা না দেখলে সহজে বোঝা যাবে না।

তিনি আরও বলেন, ৫০০ দিন ধরে বঞ্চিত চাকরি প্রার্থীরা কলকাতার বুকে ধর্ণা চালিয়ে যাচ্ছেন।উক্ত চাকরি প্রার্থীরা মেধাতালিকা ভুক্ত হয়েও চাকরিতে নিয়োগপত্র পাননি।তাই তাদের অতি দ্রুত চাকরিতে নিয়োগ করা হোক। এবিষয়ে তিনি রাজ্যের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী এবং হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি, বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় মহাশয়ের কাছে দ্রুত হস্তক্ষেপ চেয়ে এবং বঞ্চিত শিক্ষক-শিক্ষিকা পদপ্রার্থীদের অতি দ্রুত নিয়োগের জন্য আবেদন রেখেছেন।