কলকাতা: দক্ষিণ কলকাতার ল (South Kolkata Law College) কলেজের ভেতর সম্প্রতি ঘটে গেল এক ভয়াবহ ঘটনা। এক প্রথম বর্ষের ছাত্রী কলেজ ক্যাম্পাসের মধ্যেই শিকার হল পাশবিক নির্যাতনের। এই ঘটনায় অভিযুক্ত প্রধান নাম মনোজিৎ মিশ্র। তার সঙ্গে ছিল দুই সঙ্গী— জ়ইব আহমেদ ও প্রমিত মুখোপাধ্যায়।
সূত্রের খবর, ঘটনার রাতে নির্যাতিতা কোনও মতে নিরাপত্তারক্ষীর সাহায্য পাওয়ার আশায় কলেজের (South Kolkata Law College) গেট পর্যন্ত পৌঁছেছিলেন। কিন্তু সেই আশাও ব্যর্থ হয়। নিরাপত্তারক্ষীর সামনেই তাঁকে ফের টেনে নিয়ে যায় অভিযুক্তরা। তারপরেই কলেজের (South Kolkata Law College) গার্ড রুমেই ঘটে গণধর্ষণের নৃশংস ঘটনা।
এই ঘটনা জানাজানি হতেই পুলিশের তৎপরতা বাড়ে। ইতিমধ্যেই চারজন গ্রেফতার। তিন মূল অভিযুক্তের সঙ্গে গ্রেপ্তার হয়েছেন কলেজের (South Kolkata Law College) নিরাপত্তারক্ষী পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়ও। অভিযোগ, তিনি সব জেনেও নির্যাতিতাকে সাহায্য করেননি। পুলিশ সূত্রে দাবি, তার বয়ানে রয়েছে অসঙ্গতি।
‘খারাপ হয়েছে আমার সঙ্গে’, কি নাটক সাজাচ্ছিল মনোজিৎ?
ঘটনার পরে থেকেই মনোজিৎ ছিল গা ঢাকা। পুলিশ সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার দুপুরে সে একমাত্র এক ব্যক্তির ফোন রিসিভ করেছিল। সেখানেই মনোজিৎ বলে, ‘‘আমার শরীর খারাপ… আমার সঙ্গে খুব খারাপ হয়েছে!’’ এরপর আর কারও ফোন ধরেনি সে।
পুলিশ তদন্তকারীদের মতে, এটা ছিল সচেতনভাবে নাটক সাজানোর চেষ্টা। নিজেকে অসুস্থ বা অসহায় প্রমাণ করে সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টা করছিল মনোজিৎ। ঘটনার রাতে তার আচরণ এবং পরবর্তী সময়ের পালিয়ে বেড়ানোই সেটার প্রমাণ।
কলেজ ক্যাম্পাস থেকে উদ্ধার বোতল, রড, ছেঁড়া চুল!
ফরেনসিক টিম ইতিমধ্যেই কলেজ (South Kolkata Law College) ক্যাম্পাস থেকে বহু প্রমাণ সংগ্রহ করেছে। গার্ড রুম ও ইউনিয়ন রুম থেকে পাওয়া গেছে একাধিক ফাঁকা বোতল, লোহার রড, হকি স্টিক এবং ছেঁড়া চুলের নমুনা। নির্যাতিতার বয়ানে উল্লেখ ছিল, তাঁকে হকি স্টিক দিয়ে মারার চেষ্টা হয়েছিল।
পুলিশ ফুটেজ পরীক্ষা করে দেখেছে, কীভাবে টেনে হিঁচড়ে নির্যাতিতাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এমনকি, অভিযুক্তরা কোন দোকান থেকে ইনহেলার কিনেছিল তাও সিসিটিভি ফুটেজে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
নিরাপত্তা রক্ষীর ভূমিকায় গাফিলতি, তাই গ্রেফতার
গার্ড পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে উঠেছে গুরুতর অভিযোগ। নির্যাতিতা তাঁর লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, নিরাপত্তারক্ষী সবকিছু জেনেও চুপ করে ছিলেন। এমনকী অভিযুক্তদের নির্দেশেই তিনি বাইরে বসেছিলেন, দরজা বাইরে থেকে আটকানো ছিল। তাই কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
কলেজ (South Kolkata Law College) প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন!
পুরো ঘটনায় কলেজ (South Kolkata Law College) কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়েও ক্ষোভ ছড়িয়েছে। বহুদিন ধরেই মনোজিৎ এবং তার সঙ্গীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল বলে জানিয়েছেন কলেজের সিকিউরিটি সংস্থার মালিক। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
তদন্তে SIT, শিক্ষামন্ত্রীর ক্ষোভ
লালবাজার ইতিমধ্যেই বিশেষ তদন্তকারী দল (SIT) গঠন করেছে। অভিযুক্তদের কড়া জেরা চলছে। আলিপুর কোর্টে নির্যাতিতার গোপন জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে।
ক্যাম্পাসে বাড়ছে নজরদারি
ঘটনার পর দক্ষিণ কলকাতার ওই কলেজ (South Kolkata Law College) ক্যাম্পাসে বাড়ানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরার সংখ্যা। পুলিশ এবং প্রশাসন এখন চাইছে, প্রমাণ নষ্ট হওয়ার কোনও সুযোগ না থাকে।
পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘এই নৃশংস অপরাধে যারা যুক্ত, কেউ রেহাই পাবে না।’’
আরজি করের ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় অকুস্থলে তথ্যপ্রমাণ নষ্টের অভিযোগ ওঠায় পুলিশকে যথেষ্ট বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছিল। সেই বিতর্ক এড়াতেই এ বার সতর্ক লালবাজার। পাশাপাশি উচ্চশিক্ষা দপ্তরও এ ব্যাপারে একটি বিস্তারিত রিপোর্ট তলব করেছে কলেজ (South Kolkata Law College) কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে।
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়েছেন এই ঘটনায় তিনি মর্মাহত। কলেজের (South Kolkata Law College) নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে কোথায় কোথায় খামতি ছিল, কী কী পরিকাঠামো উন্নয়ন প্রয়োজন, সে বিষয়ে খতিয়ে দেখার কাজ শুরু করেছে শিক্ষা দপ্তর।