বিদেশি ডিগ্রি রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই ব্যবহার! তলব শান্তনুকে সেনকে

সম্প্রতি রাজ্য রাজনীতির পাশাপাশি চিকিৎসা মহলেও আলোড়ন ফেলেছে এক বিতর্ক। প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ ও বিশিষ্ট চিকিৎসক শান্তনু সেনের (Santanu Sen) বিরুদ্ধে উঠেছে বিদেশি ডিগ্রি ব্যবহারের…

Santanu Sen doctor

সম্প্রতি রাজ্য রাজনীতির পাশাপাশি চিকিৎসা মহলেও আলোড়ন ফেলেছে এক বিতর্ক। প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ ও বিশিষ্ট চিকিৎসক শান্তনু সেনের (Santanu Sen) বিরুদ্ধে উঠেছে বিদেশি ডিগ্রি ব্যবহারের অভিযোগ। মূলত, রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের অনুমতি বা নথিভুক্তি ছাড়াই ‘এফআরসিপি গ্লাসগো’ (FRCP Glasgow) ডিগ্রি ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই বুধবার (২০ মে) তাঁকে ডেকে পাঠায় পশ্চিমবঙ্গ মেডিক্যাল কাউন্সিল (WBMC)। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে এদিন তিনি হাজিরাও দেন, কিন্তু সেখান থেকে বেরিয়ে অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং পাল্টা কাউন্সিলকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করান।

চিকিৎসক শান্তনু সেন একাধারে রাজনৈতিক ও চিকিৎসাক্ষেত্রের পরিচিত মুখ। তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে রাজ্যসভার সদস্য ছিলেন তিনি। তবে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক টানাপোড়েনে দলের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব তৈরি হয়েছে। বর্তমানে তিনি ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (IMA)-এর পশ্চিমবঙ্গ শাখার সম্পাদক পদে রয়েছেন। ঠিক এই সময়েই তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ।

   

রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের তরফে দাবি করা হয়েছে, চিকিৎসক সেন ‘এফআরসিপি গ্লাসগো’ ডিগ্রি ব্যবহার করছেন অথচ তা ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল কাউন্সিল বা রাজ্য কাউন্সিলে নথিভুক্ত নয়। নিয়ম অনুযায়ী, কোনও বিদেশি মেডিক্যাল ডিগ্রি ভারতে ব্যবহার করতে হলে তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে যাচাই করিয়ে অনুমোদন নিতে হয়। তবে শান্তনু সেনের বক্তব্য সম্পূর্ণ বিপরীত।

কাউন্সিল অফিস থেকে বেরিয়ে শান্তনু সেন বলেন, “আমি একাধিকবার ডিগ্রিটি রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন করেছি, যথাযথ ফি জমা দিয়েছি। এমনকি, তথ্য জানার অধিকার আইনের (RTI) আওতায় দু’বার প্রশ্নও তুলেছি, কিন্তু কোনও জবাব আসেনি।” তাঁর আরও দাবি, “আমি নিয়ম মেনে সব কিছু করেছি, কাউন্সিলের কাছেই বারবার চিঠি পাঠিয়েছি। তাহলে এখন কেন আমায় তলব করা হল?” তাঁর কথায়, গোটা বিষয়টি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেই মনে হচ্ছে।

Advertisements

এই ঘটনার জেরে চিকিৎসক সমাজে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। একাংশের মত, যদি শান্তনু সেন সত্যিই সব নিয়ম মেনে আবেদন করে থাকেন, তবে কাউন্সিলের জবাব না দেওয়াটা প্রশাসনিক গাফিলতি। অন্যদিকে, কেউ কেউ মনে করছেন, প্রভাবশালী পদে থাকার সুবাদে তিনি নিয়মকে পাশ কাটিয়ে চলার চেষ্টা করেছেন।

এই বিতর্ক সামনে আসতেই আবার নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে, কীভাবে বিদেশি ডিগ্রিগুলো ভারতে স্বীকৃত হয়, এবং এই প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা কতটা আছে। সাধারণ চিকিৎসকদের একাংশ বলছে, বহু চিকিৎসকই কোনও না কোনও বিদেশি ফেলোশিপ বা ডিগ্রি অর্জন করেন। কিন্তু তার স্বীকৃতি নিয়ে জটিলতা ও আমলাতান্ত্রিক বাধা আজও থেকে গেছে।

এই বিতর্কের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা এখনই বলা কঠিন। তবে চিকিৎসা ও প্রশাসনের স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হলে এই ধরনের ঘটনাগুলিকে যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে সামনে আনা এবং নিয়ম অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। শান্তনু সেনের ক্ষেত্রেও বিষয়টি একইভাবে আইন মেনে মীমাংসার দিকেই এগোবে, সেটাই প্রত্যাশা।