প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee), যিনি প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় প্রধান অভিযুক্ত, ফের জামিনের (Bail) আবেদন (Application) করেছেন। ৬ নভেম্বর, মঙ্গলবার, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জামিন আবেদনটি বিশেষ সিবিআই আদালতে (CBI Court) দাখিল করা হয়। আদালত আগামী ১৩ নভেম্বর এই মামলার শুনানি (Hearing) নির্ধারণ করেছে। সিবিআই এবং ইডি (ইনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট) একাধিকবার পার্থের বিরুদ্ধে তদন্ত চালিয়েছে, এখন এই মামলার আইনি প্রক্রিয়া এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে আগামী শুনানি আদালতের সিদ্ধান্তের উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে।
২০২২ সালের জুলাই মাসে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করে ইডি, যখন তার নাকতলা এলাকার বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়। ইডি এবং সিবিআইয়ের তদন্তে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ নগদ টাকা, বিদেশি মুদ্রা, সোনার গয়না এবং মূল্যবান দ্রব্য উদ্ধার হয়। টালিগঞ্জের ‘ডায়মন্ড সিটি’ আবাসনে অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাট থেকে ২১ কোটি ৯০ লাখ টাকা উদ্ধার হয়, যা এই মামলার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু। একই সময়, বেলঘরিয়ার অন্য একটি ফ্ল্যাট থেকে ৪৯ কোটি ৮০ লাখ টাকার নগদ, সোনার গয়না এবং বিদেশি মুদ্রা উদ্ধার হয়। এই ঘটনাগুলি প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতির ঘটনায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জড়িত থাকার গুরুতর প্রমাণ মিলেছে।
ইডি এবং সিবিআই উভয়ই একযোগে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তদন্ত চালিয়ে আসছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, রাজ্যে বিভিন্ন সরকারি চাকরির নিয়োগে অবৈধভাবে টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে। এই নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হওয়া অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছে সুবীরেশ ভট্টাচার্য, কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়, এবং রাজ্য শিক্ষাদফতরের একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। সিবিআই এর তদন্তে এখনও অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদ্ধৃত হতে পারে, যা মামলার প্রকৃতি আরও জটিল করতে পারে।
পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে জামিনের আবেদন আগেও খারিজ হয়েছে। গত এপ্রিল মাসে, কলকাতা হাই কোর্টে ইডি’র দায়ের করা মামলায় জামিনের আবেদন করেছিলেন পার্থ। তবে, ইডি জামিনের বিরোধিতা করে এবং বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ তার জামিনের আবেদন খারিজ করেন। এরপর, সিবিআইয়ের দায়ের করা নিয়োগ দুর্নীতি মামলায়ও পার্থের জামিন আবেদন খারিজ হয়েছে। কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিচারপতি অপূর্ব সিংহ রায়ের বেঞ্চ পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জামিন আবেদন খারিজ করে দেয়।
এই সমস্ত ঘটনায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আইনজীবীরা বারবার জামিনের জন্য আবেদন করেছেন, কিন্তু সেগুলি এখনও মঞ্জুর হয়নি। আদালত ইতিমধ্যে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে, জামিন প্রদান করা হলে তদন্তে বিঘ্ন সৃষ্টি হতে পারে এবং এই কারণে তাকে কারাগারে বন্দী রাখা হবে।
পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের “ঘনিষ্ঠ” সহযোগী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের নামও এই মামলায় গুরুত্বপূর্ণ। তার ফ্ল্যাট থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা এবং অন্যান্য সামগ্রী উদ্ধার হয়েছে, যা সরাসরি এই দুর্নীতির চিত্রকে প্রকাশ করে। অর্পিতার সঙ্গে পার্থের সম্পর্কের মাধ্যমে এই দুর্নীতি মামলার জটিলতা বাড়ছে, কারণ তার কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থের উৎস এখনও পুরোপুরি উদঘাটিত হয়নি।
এছাড়া, অর্পিতার আরও একাধিক সম্পত্তির সন্ধান মিলেছে, এবং সেখান থেকেও নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। এমনকি, সিবিআই এবং ইডি বিশ্বাস করে যে, পার্থ এবং অর্পিতার মধ্যে এক গভীর আর্থিক সম্পর্ক রয়েছে, যা এই দুষ্কৃতিকারী কর্মকাণ্ডে তাদের সম্পৃক্ততাকে আরও জোরালো করে।
পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জামিনের আবেদন খারিজ হওয়া এবং তাকে কারাগারে রাখার সিদ্ধান্তের পর, এখন তার আইনজীবীরা অন্য রকমভাবে জামিনের জন্য চেষ্টা করবেন। যদিও এখনও পর্যন্ত তার জামিনের কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না, তবে ১৩ নভেম্বর বিশেষ সিবিআই আদালতের শুনানি আদালতের পরবর্তী সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করবে।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্ত এবং আদালতের প্রক্রিয়া এখন গুরুত্বপূর্ণ একটি বাঁক নিতে চলেছে। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জামিনের আবেদন এবং সিবিআই ও ইডির তদন্তের সামনে রাজ্যের ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে আরও বিস্তারিত অভিযোগ উঠে আসতে পারে। ভবিষ্যতে এই মামলার ফলাফল রাজ্যের প্রশাসনিক সংস্কার এবং রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে।