দুর্গায় এবার অশেষ দুর্গতি? ২৪ শে পুজো করাটাই বড় চ্যালেঞ্জ পুরোহিতদের!

দুর্গাপূজো (Durga Puja 2024) আসতে আর এখন মেরে কেটে ৯০ দিন মত বাকি। এখনই দুশ্চিন্তায় ঘুম উড়েছে পুজো কমিটির উদ্যোক্তাদের। উদ্যোক্তাদের বলা ভুল, আদতে কপালে…

দুর্গাপূজো (Durga Puja 2024) আসতে আর এখন মেরে কেটে ৯০ দিন মত বাকি। এখনই দুশ্চিন্তায় ঘুম উড়েছে পুজো কমিটির উদ্যোক্তাদের। উদ্যোক্তাদের বলা ভুল, আদতে কপালে দুশ্চিন্তায় ভাজ যাঁরা পূজোর (Durga Puja 2024) জোগাড় করেন সেই মহিলা-মহল এবং পূজোর পুরোহিতদের। আর হবে নাই বা কেন, দুর্গাপুজোর (Durga Puja 2024) আয়োজনে এবার অশেষ দুর্গতি হতে চলেছে তাঁদের। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে দৌড়ানো নয়, রীতিমতো উড়তে হবে তাঁদের। তবেই ঠিক সময়ে পুজো শেষ করা যাবে।

পঞ্জিকা মতে ২০২৪ সালের দুর্গাপুজোর (Durga Puja 2024) যে তিথি পড়েছে,তা দেখে মাথায় হাতপড়েছে পুরোহিতদের। বাড়ির পুজো হোক বা বারোয়ারি, থিম পুজো হোক বা সাবেকি পুজো, ঠিকমতো পূজা প্রকরণ মেনে সময়ের মধ্যে পুজো শেষ করাটাই যেন এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

   

মমতার আদরের ‘জল’শোভনই আবার ফিরছেন কলকাতার মেয়র হয়ে ?

দুর্গাপুজোর ক্ষেত্রে পন্ডিতরা বলেন, পূজোর তিথি যেন অবশ্যই সূর্যোদয়ের মুহূর্ত পায়। অর্থাৎ সূর্যোদয়ের মুহূর্ত যে সময়কালে থাকবে, সেই দিনই সেই দিনের পুজোটা সম্পন্ন করা শাস্ত্রসম্মত। অর্থাৎ উদাহরণ হিসেবে আজ যদি সপ্তমী হয়, তাহলে অবশ্যই সপ্তমী তিথি যেন আজ ভোরবেলায় সূর্যোদয়ের মুহূর্ততেও থাকে। কিন্তু এবছর যা পরিস্থিতি তাতে সূর্যোদয়ের মুহূর্তের কিছুক্ষণ পরপরই তিথি শেষ হয়ে যাচ্ছে। আর এটা দেখেই মাথায় হাত পুজোর আয়োজনকারী মহিলা থেকে শুরু করে পুরোহিতদের। এত অল্প সময়ের মধ্যে কি করে পুজোর আয়োজন হবে? তা নিয়ে রীতিমতো দুশ্চিন্তার ভাঁজ তাদের সবার কপালে।

এবছর ষষ্ঠীর বোধন করতে হবে পঞ্চমীর দিন। কারণ দুর্গাপুজোর (Durga Puja 2024) নিয়ম মতে সায়ংকালে দেবীর বোধন। অথচ ষষ্ঠীর দিন বিকেল বেলার অনেক আগেই শেষ হয়ে যাচ্ছে ষষ্ঠীর তিথি। ফলে পঞ্চমীর দিনই বেলতলাতে মা দুর্গার অধিবাস করতেই হবে। যদিও আবার পঞ্চমীর দিন এই ষষ্ঠীর তিথি সূর্যোদয়ের মুহূর্ত পায়নি।

কলকাতায় খেলা চরমে! জগন্নাথ মন্দিরকে বলে বলে চ্যালেঞ্জ তিরুপতি মন্দিরের

এবার আসা যাক সপ্তমীর দিকে। সপ্তমীর অন্যতম বড় কার্যই হলো কলাবউ স্নান। সাধারণত আমরা বেলা সাড়ে সাতটা, আটটার সময় দেখি সমস্ত পুজো কমিটি বা বাড়ির পুজোর কর্তা-মহিলারা রীতিমতন শোভাযাত্রা করে ঢাক বাজিয়ে পুকুর ঘাটে বা গঙ্গার ঘাটে কলাবউকে স্নান করাতে নিয়ে যান। কিন্তু এবার পঞ্জিকা মতে সকাল ৭:২৩ মিনিটের মধ্যেই সপ্তমী শেষ হয়ে যাচ্ছে। ফলে কখন কলা বউ স্নান হবে, আর কখনই বা সপ্তমী পূজো শেষ হবে তাই নিয়ে রীতিমতো ধন্দ্বে সবাই।

তবে সব থেকে বড় গোলযোগ হতে চলেছে অষ্টমীর দিন। ওই দিন শাড়ি পাঞ্জাবি পরিহিত হয়ে সেজেগুজে অঞ্জলি দেওয়াটাই আমাদের ঐতিহ্য। ঐতিহ্য যদি এবারও মানতে চান তাহলে একেবারে সূর্য ওঠার আগেই আপনাকে স্নান করে একেবারে তৈরি হয়ে নিতে হবে। কারণ সকাল ৬:৪৬ মিনিটের মধ্যে অষ্টমীর লগ্ন শেষ হয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে আবার শেষের ২৪ মিনিট সন্ধি পুজোর জন্য বরাদ্দ। অষ্টমী পূজো থেকে শুরু করে পুষ্পাঞ্জলি পর্ব সমস্ত কিছু শেষ করতে হবে তার আগেই। তারপরে সন্ধি পূজোর মাহেন্দ্রক্ষণে একেবারে ঘড়ি ধরে শেষ করতে হবে সন্ধিপুজো। যা কিনা আপাতদৃষ্টিতে প্রায় অসম্ভব ঠেকছে। আবার তিথির ফেরে নবমী দশমী একই দিনে পড়ে গিয়েছে। তার থেকেও আশ্চর্যের বিষয়ে দশমীর দিন নাকি কোন সূর্যোদয়ের মুহূর্তই নেই। সব মিলিয়ে একেবারে দিশাহারা অবস্থা।

তবে অনেকে বলছেন যে ‘আরভ্য’ পদ্ধতিতে আগে তিথি থাকা অবস্থাতেই পুজোর সংকল্প করে তারপর নিজের মতো করে পূজো চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার একটা রাস্তা আছে। কিন্তু অষ্টমী সন্ধিপূজা কোনওভাবেই আরভ্য পদ্ধতিতে সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে এবার পন্ডিতরা কী বিধান দেন সেদিকেই তাকিয়ে আছেন অনেকে। অনেক পন্ডিতের মতে ১৯৭৮ সালের পর আবারও এরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। মা দুর্গা এবার কী নিজেই তিথির দুর্গতি তৈরি করে চরম পরীক্ষার মুখে ফেললেন উদ্যোক্তাদের? দুর্গা-দুর্গা বলে সেই দুর্গতি কতটা কাটিয়ে ওঠেন উদ্যোক্তা বা পুরোহিতরা সেটাই এখন দেখার বিষয়।