কলকাতা পুরনিগমে ২৪ ফেব্রুয়ারি, সোমবার ছিল বাজেট আলোচনা পর্ব, কিন্তু তা হয়ে উঠল একেবারে অন্য বিষয়ের কেন্দ্রবিন্দু। যেখানে নাগরিকদের উন্নয়ন এবং শহরের অবকাঠামো নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা, সেখানে পুরনিগমের এক অধিবেশন হয়ে গেল প্রয়াগরাজ, গঙ্গাসাগর এবং কুম্ভমেলা নিয়ে তুমুল রাজনৈতিক বাকবিতণ্ডার মঞ্চ।
কলকাতা থেকে প্রয়াগরাজের দূরত্ব ৭৯৪ কিলোমিটার, আর গঙ্গাসাগরের দূরত্ব মাত্র ১১৭ কিলোমিটার। কিন্তু কলকাতা পুরনিগমের বাজেট আলোচনা পর্বে এই বিষয়গুলিই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। সঠিকভাবে নাগরিকদের উন্নয়ন ও শহরের অবকাঠামো সংক্রান্ত আলোচনা না হওয়া, এবং বদলে কুম্ভমেলা ও গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে রাজনীতি করতে দেখা গেল দুই দলের কাউন্সিলরদের মধ্যে।
বাজেট আলোচনায় বিজেপি এবং তৃণমূল কাউন্সিলরদের মধ্যে একদম তুমুল বাগবিতণ্ডা শুরু হয়, যখন বিজেপির পরিষদীয় দলনেত্রী এবং ২২ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি কাউন্সিলর মীনা দেবী পুরোহিত কুম্ভমেলার প্রসঙ্গ তুলে নেন। তিনি বলেন, “উত্তরপ্রদেশ সরকারের কুম্ভমেলা আয়োজন শান্তিপূর্ণ এবং সুচারু ভাবে হয়েছে। তাদের রাস্তাঘাটের অবকাঠামো এবং নাগরিক পরিষেবার পরিকাঠামো কলকাতার তুলনায় অনেক ভালো।” তিনি এও বলেন, কুম্ভমেলা আয়োজনের ক্ষেত্রে উত্তরপ্রদেশ সরকার এমন উন্নত পরিষেবা দিয়েছে, যা কলকাতার পুরনিগমের কাছে পৌঁছানো অসম্ভব। তিনি শহরের রাস্তাঘাটের অবস্থাও তুলে ধরেন এবং কলকাতা পুর প্রশাসনকে একেবারে খোঁচা দেন।
এদিকে, তৃণমূল কাউন্সিলররা মীনা দেবী পুরোহিতের এই বক্তব্যের বিরোধিতা করতে শুরু করেন। তৃণমূলের একাধিক কাউন্সিলর দাবি করেন, গঙ্গাসাগর মেলা রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথভাবে শান্তিপূর্ণভাবে আয়োজিত হয়েছে এবং কোনও ধরনের বিশৃঙ্খলা হয়নি। তাদের মতে, রাজ্য সরকার গঙ্গাসাগরের মতো বড় মেলা সুচারু ভাবে আয়োজন করতে সক্ষম হয়েছে এবং গঙ্গাসাগর মেলা শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হচ্ছে।
তৃণমূলের দাবি, বিজেপির রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য কুম্ভমেলা এবং গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে বাজে মন্তব্য করা হচ্ছে, যা কোনওভাবেই ঠিক নয়। তারা বলেন, “যে দল ক্ষমতায় এসে দেশের গুরুত্বপূর্ণ মেলা ও অনুষ্ঠানগুলোর সঙ্গে তুলনা করে, তারা কীভাবে শহরের উন্নয়ন নিয়ে কথা বলবে?” তৃণমূল কাউন্সিলররা মনে করেন, এই ধরনের রাজনৈতিক বাকবিতণ্ডা শুধু জনসাধারণের অস্থিরতা বাড়াতে সাহায্য করবে, কিন্তু তা নগর উন্নয়নের বাস্তব পরিস্থিতি থেকে একদম বিচ্যুত।
এদিকে, সিপিএম এবং কংগ্রেসের কাউন্সিলররাও এই রাজনীতির তীব্র বিরোধিতা করেন। তারা বলেন, “পুরনিগমের বাজেট আলোচনায় শহরের উন্নয়নই মুখ্য বিষয় হওয়া উচিত। কিন্তু এখানে আবার রাজনীতি শুরু হয়ে গেল। এই ধরনের বাগবিতণ্ডা শহরের মানুষের স্বার্থের বিরুদ্ধে।”
কলকাতা পুরনিগমের বাজেট আলোচনা অস্থির হয়ে ওঠে, যখন বাজেটের প্রকৃত আলোচনা প্রায় অনুপস্থিত ছিল। কুম্ভমেলা এবং গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ায়, একদিকে যেমন নাগরিকদের উন্নয়ন ও শহরের প্রকৃত চাহিদা অনুধাবন করা সম্ভব হয়নি, তেমনই রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে ক্ষোভ এবং বিদ্বেষ বৃদ্ধি পায়।
এমন পরিস্থিতিতে, অনেকেরই প্রশ্ন উঠছে, কবে শহরের উন্নয়ন এবং নাগরিকদের জন্য কাজের মূল উদ্দেশ্যে বাজেট আলোচনায় ফিরে আসবে কলকাতা পুরনিগম?