বিধানসভায় (Bengal-Assembly) আজ এক ঐতিহাসিক মুহূর্তে ‘নেতাজি সুভাষ ইউনিভার্সিটি অফ স্পোর্টস অ্যান্ড এন্ট্রেপ্রেনারশিপ বিল, ২০২৫’ পাশ হয়েছে। মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রবল প্রেরণা ও দূরদর্শী উদ্যোগের ফলে এই বিলটি গত শুক্রবার (২০ জুন) রাজ্যের উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু বিধানসভায় পেশ করেন। এই বিলের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গে দেশের প্রথম বেসরকারি ক্রীড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত হলো, যা ক্রীড়া ও উদ্যোক্তা শিক্ষার ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
বিলটি পাশ হওয়ার পর বিধানসভায় (Bengal-Assembly) উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, “এটি পশ্চিমবঙ্গের জন্য একটি গর্বের মুহূর্ত। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্ন ছিল ক্রীড়া ও উদ্যোক্তা শিক্ষার ক্ষেত্রে একটি বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। এই বিশ্ববিদ্যালয়টি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর আদর্শে অনুপ্রাণিত এবং তরুণ প্রজন্মের ক্রীড়া প্রতিভা ও উদ্যোক্তা মনোভাবকে বিকশিত করবে।” তিনি আরও জানান, এই বিশ্ববিদ্যালয়টি কেবল পশ্চিমবঙ্গ নয়, গোটা দেশের ক্রীড়া শিক্ষার ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হয়ে উঠবে।
‘নেতাজি সুভাষ ইউনিভার্সিটি অফ স্পোর্টস অ্যান্ড এন্ট্রেপ্রেনারশিপ’ পশ্চিমবঙ্গের ক্রীড়া ও উদ্যোক্তা শিক্ষার ক্ষেত্রে একটি অভূতপূর্ব উদ্যোগ (Bengal-Assembly)। এটি দেশের প্রথম বেসরকারি ক্রীড়া বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে, যেখানে ক্রীড়া বিজ্ঞান, ক্রীড়া ব্যবস্থাপনা, ক্রীড়া প্রশিক্ষণ, এবং উদ্যোক্তা উন্নয়নের উপর বিশেষ জোর দেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয়টি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর নামে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, যিনি স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর নেতৃত্ব এবং তরুণদের প্রেরণার জন্য বিখ্যাত।
বিলের বিবরণ অনুযায়ী, এই বিশ্ববিদ্যালয়টি ক্রীড়া শিক্ষার পাশাপাশি উদ্যোক্তা মানসিকতা গড়ে তোলার জন্য বিশেষ কোর্স প্রদান করবে। ফুটবল, ক্রিকেট, অ্যাথলেটিক্স, সাঁতার, ব্যাডমিন্টনের মতো বিভিন্ন খেলার পাশাপাশি ক্রীড়া চিকিৎসা, ক্রীড়া মনোবিজ্ঞান, এবং ক্রীড়া প্রযুক্তির উপর উচ্চমানের শিক্ষা দেওয়া হবে। এছাড়া, উদ্যোক্তা শিক্ষার মাধ্যমে তরুণরা ক্রীড়া শিল্পে নতুন ব্যবসায়িক সুযোগ তৈরি করতে শিখবে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Bengal-Assembly) এই উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, “ক্রীড়া শুধু শারীরিক ক্ষমতার বিষয় নয়, এটি একটি জীবনদর্শন। আমরা চাই আমাদের রাজ্যের তরুণরা ক্রীড়ার মাধ্যমে বিশ্বমঞ্চে ভারতের নাম উজ্জ্বল করুক। এই বিশ্ববিদ্যালয় তাদের সেই স্বপ্ন পূরণের পথ দেখাবে।” তিনি আরও বলেন, “নেতাজির আদর্শ আমাদের অনুপ্রাণিত করে। তাঁর নামে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমরা তরুণদের মধ্যে দেশপ্রেম ও উৎকর্ষের চেতনা জাগ্রত করতে চাই।”
বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রাথমিকভাবে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ডায়মন্ড হারবারে প্রতিষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে। এটি আধুনিক অবকাঠামো, বিশ্বমানের ক্রীড়া সুবিধা, এবং অভিজ্ঞ শিক্ষকদের সমন্বয়ে গড়ে উঠবে। বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি ও আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করবে, যাতে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারের প্রতিভাবান ক্রীড়াবিদরাও এখানে শিক্ষার সুযোগ পান।
বিধানসভায় (Bengal-Assembly) বিলটি পেশের সময় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এই উদ্যোগের প্রশংসা করলেও কিছু প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, “ক্রীড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ স্বাগতযোগ্য, তবে এটি যেন শুধু কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ না থাকে। সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে যে এটি বিশ্বমানের হয় এবং স্বচ্ছভাবে পরিচালিত হয়।” এর জবাবে মন্ত্রী ব্রাত্য বসু আশ্বাস দেন যে, বিশ্ববিদ্যালয়টি সরকারি তত্ত্বাবধানে স্বচ্ছ ও কার্যকরভাবে পরিচালিত হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গ ক্রীড়া শিক্ষার ক্ষেত্রে দেশের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় এগিয়ে যাবে। এটি শুধু ক্রীড়াবিদ তৈরি নয়, ক্রীড়া শিল্পে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগও সৃষ্টি করবে। বিশেষ করে, ক্রীড়া ব্যবস্থাপনা এবং উদ্যোক্তা শিক্ষার উপর গুরুত্ব দেওয়ায় তরুণরা ক্রীড়া-সংশ্লিষ্ট স্টার্টআপ গড়ে তুলতে উৎসাহিত হবে।
নজরে বিএসএফ! সীমান্তে কী করছে বাংলাদেশ? চাঞ্চল্যকর তথ্য গোয়েন্দা রিপোর্টে
ক্রীড়া জগতের ব্যক্তিত্বরাও এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। প্রাক্তন ভারতীয় ফুটবলার বাইচুং ভুটিয়া বলেন, “এটি একটি দুর্দান্ত উদ্যোগ। পশ্চিমবঙ্গে ক্রীড়ার প্রতি আগ্রহ সবসময়ই ছিল। এই বিশ্ববিদ্যালয় নতুন প্রজন্মের ক্রীড়াবিদদের জন্য একটি বড় প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠবে।” অন্যদিকে, অলিম্পিক পদকজয়ী কুস্তিগীর সাক্ষী মালিক বলেন, “ক্রীড়া শিক্ষার এই ধরনের উদ্যোগ ভারতের ক্রীড়া সংস্কৃতিকে আরও শক্তিশালী করবে।”
এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Bengal-Assembly) ক্রীড়া উন্নয়নের প্রতি দীর্ঘদিনের প্রতিশ্রুতির একটি অংশ। তিনি ইতিমধ্যেই রাজ্যে খেলো ইন্ডিয়া প্রকল্প, মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গলের মতো ক্রীড়া সংস্থার উন্নয়ন, এবং গ্রামীণ ক্রীড়া প্রতিভা খুঁজে বের করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়টি তারই একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
আগামী দিনে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি কীভাবে গড়ে ওঠে এবং ক্রীড়া ও উদ্যোক্তা শিক্ষার ক্ষেত্রে কতটা অবদান রাখে, তা নিয়ে সকলের নজর রয়েছে। তবে, এই বিল পাশের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গ ক্রীড়া শিক্ষার ক্ষেত্রে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে, যা দেশের অন্যান্য রাজ্যের জন্যও অনুকরণীয় হতে পারে।