সিবিআই পশ্চিমবঙ্গ আঞ্চলিক দফতর কলকাতার (Nizam Palace) নিজাম প্যালেস। বিশাল এই ভবন রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের কাছে আতঙ্কের কারণ। এই ভবনে ঢোকা ও বের হওয়ার জন্য মন্ত্রী, হেভিওয়েট নেতাদের মিছিল চলছে। নারদা কেলেঙ্কারি, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি, গোরু পাচার মামলায় অভিযুক্তদের তালিকায় সরকারের তাবড় তাবড় ব্যক্তিরা এই ভবনে সিবিআই জেরার মুখে পড়েন।
বিরোধীদের কটাক্ষ, ভবিষ্যতে নিজাম প্যালেসের ফটক দিয়ে আরও অনেক হেভিওয়েটদের মিছিল হবে। তবে রাজ্য সরকারে থাকা তৃণমূল কংগ্রেসের অভিযোগ, সিবিআই তৎপরতা আসলে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের নির্দেশে চলছে। কেন্দ্র বনাম রাজ্য এই বিতর্কের মাঝে নিজাম প্যালেস বারবার আলোচিত হচ্ছে।
বিশাল এই ভবনটির প্রতিটি খিলান, জানালা ও অলিন্দে মিশে আছে ইতিহাস। এখন সিবিআই কার্যালয় সূত্রে নিজাম প্যালেস বহুল আলোচিত। তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা মন্ত্রীদের দুর্নীতি তদন্তের জেরা মানেই নিজাম প্যালেসের নেমতন্ন। পুরো ভবনটি নিরাপত্তায় মোড়া থাকে।
ঐতিহ্যবাহী এই নিজাম প্যালেসের একটি পুরনো দুটি নাম আছে গালস্টৌন পার্ক ও সাবা প্যালেস। এই নাম দুচি থেকেই ভবনটির ইতিহাস খোঁজা শুরু হয়। নয় দশক আগে ভবনটি তৈরি হয়। তখনও ভারতে ছোট বড় নবাব, রাজাদের দাপট প্রবল। ব্রিটিশ আনুগত্য প্রশ্নাতীত। তেমলই বিশ্ববিখ্যাত নবাব বংশ হায়দরাবাদের নিজামশাহী।
নিজামশাহীর উত্তরাধিকারী ছিলেন উসমান আলি খান। বিপুল সম্পত্তিতে বিশ্বকে চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়া নিজামদের কাছে একটি ভবন কেনা কোনও ব্যাপারই নয়। কিন্তু সেই ভবন যদি কলকাতার কোনও চকমিলান প্রাসাদ হয় তাহলে তো লোভনীয়। ফলে কলকাতার গালস্টৌন পার্ক কিনে নেন হায়দরাবাদের নিজাম উসমান আলি। ১৯৩৩ সালে তিনি এটি কেনেন আর্মেনীয় বংশোদ্ভূত জোহানেস ক্যারাপির কাছ থেকে।তিনি জে.সি গালস্টৌন নামে পরিচিত।
ভবনটির অতুলনীয় স্থাপত্য দেখে মুগ্ধ হন নিজাম উসমান আলি। তৎকালীন ভবনটির মালিক গালস্টৌন এই প্রাসাদটি তাঁর স্ত্রীকে ভালোবাসার প্রমাণস্বরূপ নির্মাণ করান। তিনিই ভবনটির নাম দিয়েছিলেন গালস্টৌন পার্ক। পরে ১৯৩৩ সালে এটি হায়দরাবাদের নিজামের কাছে বিক্রয় করা হয়। ভবনটি কেনার পর নিজাম এই প্রাসাদের নাম দেন সাবা প্যালেস। সেই নাম পাল্টে এই ভবন হয় নিজাম প্যালেস।
ঐতিহ্যবাহী এই নিজাম প্যালেসের পুরনো দলিল দস্তাবেজ তেমন নেই। এর মলিকানা হস্তান্তর নিয়ে জটিলতা ছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর নিজামশাহী অবসান হয়। ভারত সরকারে সঙ্গে রক্তাক্ত সংঘর্ষের পর হায়দরাবাদের নিজামশাহী আত্মসমর্পণ করে। হায়দরাবাদ ভারতের অন্তর্ভুক্ত হলে কলকাতার নিজাম প্যালেস সরকারের সম্পত্তি হয়।
ভবনটির মালিকানা হস্তান্তরের নথি অমিল থাকায় সেই পর্বটি থেকে গেছে রহস্যের আড়ালে। কোনও নথিই নেই কলকাতা পুরসভার কাছে। পুরাতাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞ বা কলকাতার ইতিহাসবিদরাও হাতড়েছেন অনেক। তবে নথি রয়ে গেছে আড়ালেই। ভবনটির ইতিহাসে জড়িয়ে আছে আরও একটি ঘটনা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তৎকালীন গালস্টৌন পার্ক হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল।