তিনবছর পরে মোহভঙ্গ! দিদির উপরে অভিমান করে দীর্ঘ পোস্ট বিধায়কের

তিন বছর পরে তিনি বুঝতে পারলেন যে তাঁর তৃণমূলে আসা ভুল হয়েছে! শুধু তাই নয়, রাজনীতির সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ঠিক হয়নি। এই বিষয়ে তিনি সমাজমাধ্যমে…

tmc

তিন বছর পরে তিনি বুঝতে পারলেন যে তাঁর তৃণমূলে আসা ভুল হয়েছে! শুধু তাই নয়, রাজনীতির সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ঠিক হয়নি। এই বিষয়ে তিনি সমাজমাধ্যমে লম্বা পোস্টে তাঁর অভিব্যক্তির কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি এও অভিযোগ করেছেন যে,তিনি যতবার মানুষের উপকার করার চেষ্টা করেছেন, ততবার তাঁকে টেনে নীচে নামানো হয়েছে। তাঁকে দলের তরফেই সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এইবার লোকসভা ভোটেও তাঁকে দলীয় নির্দেশেই থাকতে হয়েছে চুপ, এমনই অভিযোগ করেছেন বলাগড়ের সাহিত্যিক বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী।

তিনি সমাজমাধ্যমে দাবি করছেন বলাগড়ের সার্বিক উন্নয়নের জন্য তিনি প্রাণপাত চেষ্টা করেছেন। বালি মাফিয়া থেকে গাঁজার ঠেক,সামাজিক আবর্জনা দূর করতে তিনি শত চেষ্টা করলেও তাঁকে কেউই সাহায্য করেনি। উপরন্তু তাঁকে রোষের মুখে পড়তে হয়েছে। তিনি সমাজমাধ্যমে লেখেন, ” ‘আমি জয়ী হয়ে আমার প্রতিজ্ঞা মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম সামাজিক আবর্জনা সাফাইয়ের কাজে। এতে বলাগড়ের মাটি মাফিয়া, বালি মাফিয়া সহ সমস্ত ধরনের দুষ্কৃতী তটস্থ হয়ে গিয়েছিল। মজার কথা, আমি যেখানে যে অপরাধীকে রাত দুপুরে হানা দিয়ে হাতেনাতে ধরে ফেলতাম, দেখতাম তাদের পিছনে আছে তৃণমূলেরই কোনও না কোনও নেতা। তাঁরা আমার উপরে খুব ক্ষুব্ধ হচ্ছিল বটে তবে গোটা বলাগড় জুড়ে আমার জনসমর্থন ব্যাপক বেড়ে যাচ্ছিল।শত্রু বেড়ে যাচ্ছিল, কয়েকটি হামলাও হয়েছিল আমার উপর, এমন কি, প্রাণহানির আশঙ্কা দেখা দিচ্ছিল তবু আমি জনগণের ভালোবাসার লোভে নিজের মতপথ থেকে সরে আসতে পারছিলাম না। এইভাবেই কেটে গেছে তিন তিনটে বছর। এসে গিয়েছে ২৪-এর লোকসভার ভোট।”

   

আবার তিনি দুঃখ প্রকাশ করে লিখেছেন, ” বলাগড়ের তৃণমূল বিধায়ক সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, ‘আমার প্রিয় পরিচিত বন্ধু বর্গের অনেকের অভিমত, রাজনীতিতে আসা আমার ভুল হয়েছে। আজ আমারও তাই মনে হয়। এই তিন বছরে যেটা আমার নিজের জগত-লেখালিখির জগত, সেখান থেকে বিচ্যুত হয়ে অনেকটা পিছিয়ে পড়েছি। বইমেলা আসছে! অনেকের অনেক বই বের হবে, আমার হবে না। ”

তিনি তাঁর শুরুর দিনগুলির কথা মনে করে লেখেন, ” আমার নির্বাচনী বক্তব্যে মানুষকে বলেছিলাম, আমি জিতলে বলাগড়ের মাটি ,বালি মাফিয়াদের জঙ্গলের রাজত্ব চলতে দেব না।গাঁজা পাচার, জুয়ার ঠেক, গরু পাচার, রেশনের মাল পাচার, সবুজ দ্বীপের অরণ্য ধ্বংস বন্ধ করে দেবো। কোনও দল দেখব, না নেতা দেখব না, যে অপরাধী দুষ্কৃতী কেউ আমার হাত থেকে রেহাই পাবে না। আমার এই কথায় বলাগড়ের সাধারণ মানুষ আমাকে বিশ্বাস করে ছিলেন, ভোট দিয়েছিলেন।”

তিনি দলনেত্রীর উপর ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছেন, লাগড়ের এক সভায় হাজার হাজার মানুষের সামনে অত্যন্ত কঠোর ভাষায় আমাকে বলেছিলেন, আপনাকে আর নির্বাচনের প্রচার করতে হবে না। সেদিন যেন অপমানে মাটির মধ্যে সেঁধিয়ে গিয়েছিলাম আমি।দেখেছিলাম তখন ওই চল্লিশজনের চোখে মুখে কী পরিতৃপ্তির হাসি, কী দন্ত বিকসিত উল্লাস! ওঁরা যেমন আমার সঙ্গে চলতে চায় না, আমিও ওদের সঙ্গে চলতে চাই না।’

তাঁর এই পোস্টের পরেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। প্রশ্ন উঠেছে, তিনি কি দল ছাড়বেন নাকি মুখিয়ে থাকবেন তাঁর প্রিয় দিদি তাঁর উদ্দেশ্যে কী দিকনির্দেশ দেন। তিনি এই মর্মে লেখেন,” ভোটপর্ব মিটে গিয়েছে, দেখা যাক মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আমার বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেন।দলে থাকি বা না থাকি, ওনারা রাখেন বা না রাখেন, মানুষের মনের মণিকোঠায় আমি অমলিন একটা ছবি রেখে যেতে পারছি , এটাই আমার সবচেয়ে বড় সার্থকতা।”