দমদম: ২০২৫-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে বাংলার রাজনীতিতে ফের নতুন মোড়। শুক্রবার দমদমে বিজেপির এক বিশাল জনসভা থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাজ্যের মানুষের উদ্দেশে তুললেন এক নতুন স্লোগান— ‘বাঁচতে চাই, বিজেপি তাই (Bachte Chai BJP Tai)।’ তাঁর দাবি, বাংলার মানুষ আজ দুর্নীতি, রাজনৈতিক সন্ত্রাস, কর্মসংস্থানের অভাব ও আইনের শাসনহীনতায় জর্জরিত। তাই রাজ্যকে বাঁচাতে হলে বিজেপিকে ক্ষমতায় আনা ছাড়া আর কোনও পথ খোলা নেই।
প্রধানমন্ত্রীর এই জনসভা ঘিরে সকাল থেকেই উত্তেজনা ছিল তুঙ্গে। সভাস্থলে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের ভিড় চোখে পড়ার মতো। মোদীর বক্তৃতা শোনার জন্য হাজার হাজার মানুষ এদিন দমদমে জমায়েত হন। বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব দাবি করছে, এই ভিড়ই প্রমাণ করছে বাংলার মানুষ এবার পরিবর্তনের পক্ষে।
মোদী এদিন সরাসরি রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসকে আক্রমণ করেন। তাঁর অভিযোগ, “তৃণমূল সরকারের আমলে সাধারণ মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। নারীদের উপর অত্যাচার বাড়ছে, যুবকরা পাচ্ছে না কাজ, আর দুর্নীতির জালে আটকে যাচ্ছে রাজ্যের উন্নয়ন।” তিনি আরও বলেন, “বাংলার মানুষ আজ বাঁচতে চাইছে। তাই তারা বলছে—বাঁচতে চাই, বিজেপি তাই।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মোদীর এই নতুন স্লোগান ২০২৫-এর নির্বাচনী লড়াইয়ে বিজেপির অন্যতম প্রধান হাতিয়ার হয়ে উঠতে চলেছে। ২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘পরিবর্তন চাই’ স্লোগান দিয়ে ক্ষমতায় আসেন। বিজেপি এবার ‘বাঁচতে চাই’ স্লোগানের মাধ্যমে বাংলার মানুষের আবেগকে ধরতে চাইছে।
এক বিশ্লেষকের কথায়, “বাংলার রাজনীতি সবসময় আবেগ নির্ভর। একসময় ‘পরিবর্তন’ স্লোগান মানুষের মনে দাগ কেটেছিল। এখন মোদী ‘বাঁচতে চাই’ বলে আসলে মানুষের জীবনযাত্রার অনিশ্চয়তাকে সামনে আনতে চাইছেন।”
প্রধানমন্ত্রী এদিন আরও প্রতিশ্রুতি দেন, বিজেপি ক্ষমতায় এলে বাংলায় দুর্নীতি ও সিন্ডিকেট রাজের অবসান ঘটবে। কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলি বাধাহীনভাবে মানুষের কাছে পৌঁছবে। বিশেষ করে মহিলা ও যুবকদের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের প্রকল্প আনার কথা ঘোষণা করেন তিনি।
মোদীর কথায়, “বাংলার প্রতিটি মা-বোনের নিরাপত্তা আমরা নিশ্চিত করব। বাংলার প্রতিটি যুবককে নতুন ভবিষ্যতের দিশা দেব। বাংলাকে আবার উন্নয়নের পথে নিয়ে যাওয়া হবে।”
তৃণমূল অবশ্য মোদীর এই মন্তব্যকে ‘রাজনৈতিক নাটক’ বলে কটাক্ষ করেছে। রাজ্যের মন্ত্রীদের বক্তব্য, “মোদীজি নিজের ব্যর্থতা ঢাকতে বাংলার মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছেন। বাংলার মানুষ বিজেপিকে চেনে, তারা কোনওদিন এই দলকে গ্রহণ করবে না।”
তবে বিজেপি নেতারা বলছেন, বাংলার মানুষ পরিবর্তনের জন্য তৈরি। তাঁদের মতে, “যেভাবে মানুষ আজ দমদমে মোদীর সভায় ভিড় করেছে, তাতে পরিষ্কার যে মানুষ নতুন দিশা চাইছে।”
‘বাঁচতে চাই, বিজেপি তাই’—এই স্লোগান ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতে শুরু করেছে। বিজেপির পক্ষ থেকে এই স্লোগানকে সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আগামী দিনে নির্বাচনী লড়াই আরও তীব্র হবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
বাংলার রাজনীতিতে ‘পরিবর্তন চাই’ থেকে ‘বাঁচতে চাই’—এই রূপান্তর আসন্ন নির্বাচনের হাওয়া কোন দিকে বইছে, তা স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, মোদীর নতুন স্লোগান কতটা প্রভাব ফেলতে পারে বাংলার ভোটারদের মনে।