মধ্যরাত্রে রাত দখলের ডাকে আর জি করের (R G Kar) সামনেও বিস্তর জমায়েত হয়েছিল। কিন্তু সেই জমায়েতের (R G Kar) মধ্যেই লুকিয়ে ছিল আক্রমণকারীরা? আবেগের স্বতঃস্ফূর্ত বহিঃপ্রকাশ নাকি পরিকল্পিত প্ল্যানে আক্রমণ (R G Kar)? ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে তা নিয়ে। সব থেকে বড় প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে।
গোটা হাসপাতাল জুড়ে তান্ডবের ধ্বংসলীলা চলেছে। সংবাদ মাধ্যম থেকে শুরু করে অ্যাম্বুলেন্স উল্টে ফেলা হয়েছে অনেক গাড়িই। পুলিশের গার্ডরেল, ব্যারিকেড কার্যত খড়কুটোর মত উড়িয়ে হাসপাতাল চত্বরে ঢুকে পড়ে বহিরাগতরা। প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকের বয়ানে তাদের উন্মত্ততার ছবি ধরা পড়েছে। অনেক প্রত্যক্ষদর্শীর মতেই বেশিরভাগ এই উন্মত্ত আন্দোলনকারীদের হাতে ছিল লোহার রড বা লাঠির মতো অস্ত্র। ইমারজেন্সি বিভাগের গেট ভাঙা থেকে শুরু করে করিডরের মধ্যে ঢুকে যাবার চেষ্টা করেছে উন্মত্ত এই জনতা।
এমনকি যে কার্ডিয়োলজি ডিপার্টমেন্টের চারতলার সেমিনার হলে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনাটি ঘটেছে, সেই বিল্ডিং এর নিচের তলাতেও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে বলে সূত্র মারফৎ জানা যাচ্ছে। হাসপাতাল চত্বরে যে সমস্ত ডাক্তারেরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালাচ্ছিলেন তাদের উপরও আক্রমণ হয়েছে। ডাক্তারদের আন্দোলনের মঞ্চ থেকে শুরু করে পুলিশের কিয়স্ক, ভাঙচুরের হাত থেকে রেহাই পায়নি কোনও কিছুই।
এমনকি সংবাদ মাধ্যমকেও লক্ষ্য করে নেমে এসেছে আক্রমণ। আর জি করের ভিতরে ইমার্জেন্সি ওয়াড কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। একাধিক দরজা ভাঙ্গা হয়েছে। কার্যত পুলিশের সামনে চলে অবাধে ভাঙচুর। স্বাধীনতার মধ্যরাত্রে দুষ্কৃতীদের অবাধ তাণ্ডবের স্বাধীনতা দেখল মহানগর।
কেন প্রথমেই ‘অস্বাভাবিক মৃত্যু’? ধর্ষণ-কাণ্ডের কেস ডায়েরিতে চরম ক্ষুব্ধ প্রধান বিচারপতি!
আরজিকর হসপিটালের আন্দোলনকারী ডাক্তাররা প্রথম দফায় হতচকিত হয়ে যান এই হঠাৎ আক্রমণে। তারপরেই তারা পাল্টা প্রতিরোধের চেষ্টা করলেও পেরে উঠতে পারেননি আন্দোলনকারীদের হিংস্রতার সামনে। এমনকি পুলিশও কার্যত নীরব দর্শকের ভূমিকায় ছিল বলে অভিযোগ করছেন ছাত্র-ছাত্রীরা। পরবর্তীকালে পুলিশের বিশাল বাহিনী এলেও গোটা হাসপাতাল চত্বরজুড়ে রীতিমতো হিংস্রতা উন্মত্ততার চিহ্ন ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।
আর এখানেই উঠছে প্রশ্ন। রাত জাগার ডাক তো মহিলারা দিয়েছিলেন। হামলাকারীদের বেশিরভাগই পুরুষ বলেই জানা যাচ্ছে। তাদের পোশাক থেকে শুরু করে হাভভাবেও যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। কোন আক্রোশে হসপিটাল চত্বরে উপরে ভাঙচুর? সেই উত্তরই হন্যে হয়ে খুঁজছে আর জি কর হাসপিটালের ইন্টার্ন ছাত্র ছাত্রীরা। তাহলে কি কোনও বিশেষ রাজনৈতিক দলের মদতপুষ্ট এই হামলা?
প্রশ্ন উঠছে তাহলে এই হামলাটা হল কেন? শুধু আরজি কর চত্বরে নয় রীতিমতো আশেপাশের রাস্তা থেকে শুরু করে বাইলেন বা গলিতেও পুলিশ এবং আক্রমণকারীদের খন্ডযুদ্ধের চিত্র উঠে এসেছে। বিশাল পুলিশ বাহিনী আসার পরেও আক্রমণকারীদের ঢিল পাটকেল ছড়া থেকে বিরত হতে দেখা যায়নি। প্রশ্ন উঠছে রাতের কলকাতায় জনসমুদ্র থেকে নজর এড়াতেই কী পরিকল্পিতভাবেই আক্রমণ? নাকি পরিকল্পিতভাবে সরকারপক্ষকে বদনাম করবার জন্য কোনও বিশেষ গোষ্ঠীর এই আক্রমণ?
“পুলিশ একজনকে অন্তত..”! আরজিকরের অধ্যক্ষের আর্জিতে কোন ভয়ংকর ইঙ্গিত?
পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল এসে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। তবে তাঁর ক্ষোভ পাল্টা সংবাদ মাধ্যমের দিকেই। সংবাদমাধ্যমের জন্যই ছড়াচ্ছে এবং তার জেরেই এহেন ঘটনা ঘটছে, দাবি কলকাতার পুলিশ কমিশনারের। এমনকি পুলিশ কমিশনার ঘটনাস্থল ছেড়ে চলে যাওয়ার পরেও চলছে সংঘর্ষ। একাধিক জায়গাতে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট বৃষ্টি চলছে।
বেলগাছিয়া এলাকাতে রীতিমতো খন্ডযুদ্ধের পরিস্থিতি। বিভিন্ন ট্রাক, গাড়ির আড়াল থেকে দুষ্কৃতীর দল পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি চালাচ্ছে। আক্রমণের পাল্টা হিসাবে পুলিশ চার্জ করছে কাঁদানে গ্যাস। রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে বেলগাছিয়া-শ্যামবাজার চত্বর। একাধিক পুলিশ আহত রক্তাক্ত। বাধ্য হয়ে পুলিশও হাতের লাঠি ছেড়ে ইট তুলে নিতে বাধ্য হয়েছে। আক্রমণকারীদের ইটের পাল্টা হাতের কাছে পড়ে থাকা ইট-পাটকেলই ছুড়ছেন পুলিশকর্মীরা।
পরের দিকে পুলিশ লাঠিচার্জ করলেও প্রথমে কেন পুলিশ চুপচাপ ছিল সেই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কলকাতার বুকে মেয়েদের রাত দখলের অভিযানের এপিসেন্টারেই কার্যত বেনজির দৃশ্য। যে দৃশ্য দেখে আমাদের পড়শীদেশ বাংলাদেশের অশান্ত সময়ের স্মৃতি আমাদের মনে ফিরে আসছে বারবার! ধর্ষণের বিচার চাইবার অরাজনৈতিক আন্দোলনে এটা কি কোনও পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের রাজনীতি?
এতদিন ধরে ধর্ষণ রহস্যের উত্তর এবং সুবিচার খুজছিল কলকাতা, তথা রাজ্য। আজকের পর সুবিচারের দাবির লিস্টে আরও একটা দাবি হয়ত যুক্ত হতে চলেছে। আরজিকরে আক্রমণ করলটা কে? কেন করল? আর তাতে কার কী লাভ হল? প্রশ্ন অনেক উত্তর আপাতত অজানা।