শারদীয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের (Sharodiya Charitable Trust) উদ্যোগে এবং রামকৃষ্ণ মিশন সেবা প্রতিষ্ঠান (শিশুমঙ্গল)-এর সহযোগিতায় সম্প্রতি কলকাতায় একটি সাফল্যমণ্ডিত রক্তদান শিবির অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই শিবিরে মোট ৫০ জন স্বেচ্ছাসেবী রক্তদাতা অংশগ্রহণ করেন, যা সমাজসেবার প্রতি তাদের নিষ্ঠা ও মানবতার প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করে। এই শিবিরের উদ্বোধন করেন শ্রদ্ধেয় স্বামী গুণময়ানন্দ (উত্তম) মহারাজ, যাঁর উপস্থিতি ও আশীর্বাদ সকলকে উৎসাহিত করেছে। তাঁর প্রেরণাদায়ী বক্তব্য রক্তদাতা ও স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা সঞ্চার করেছে।
এই রক্তদান শিবিরে মহিলা ও নবীন রক্তদাতাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। অনেকেই জীবনে প্রথমবার রক্তদান করেছেন এবং এই অভিজ্ঞতাকে তারা মানবিক ও আধ্যাত্মিক দিক থেকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। একজন নবীন রক্তদাতা বলেন, “রক্তদানের মাধ্যমে আমি অনুভব করেছি যে আমি একটি জীবন বাঁচাতে সাহায্য করতে পারি। এটি আমার জন্য অত্যন্ত গর্বের মুহূর্ত।”
এই শিবিরের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল এর সরলতা। কোনো উপহার বা বাহুল্যের আয়োজন ছাড়াই এই কর্মসূচি সম্পন্ন হয়েছে, যা মানবতার প্রতি দায়বদ্ধতা এবং নিঃস্বার্থ সেবার মানসিকতাকে প্রতিফলিত করে। শারদীয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের এই উদ্যোগ সমাজে রক্তদানের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়িয়েছে এবং আরও মানুষকে এই মানবিক কাজে অংশ নিতে উৎসাহিত করেছে।
শারদীয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট গত ১২ বছরেরও বেশি সময় ধরে সমাজের প্রান্তিক মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে রক্তদান, শিক্ষা, এবং অন্যান্য সমাজসেবামূলক কাজে নিযুক্ত রয়েছে। প্রতি বছর দু’বার রক্তদান শিবির আয়োজন এবং জরুরি প্রয়োজনে সারা বছর রক্ত সরবরাহের ব্যবস্থা এই ট্রাস্টের অন্যতম প্রধান কার্যক্রম। এই শিবিরের মাধ্যমে সংগৃহীত রক্ত হাসপাতালে জরুরি রোগীদের জন্য ব্যবহৃত হবে, যা অনেক জীবন বাঁচাতে সহায়ক হবে।
ট্রাস্টের পক্ষে শ্রী জয়ন্ত মন্ডল সকল রক্তদাতা, সদস্য, স্বেচ্ছাসেবক এবং শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “এই ধরনের মানবিক উদ্যোগ আপনাদের ভালোবাসা, সহযোগিতা এবং পাশে থাকার জন্যই সফল হয়। শারদীয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট আপনাদের এই অকুণ্ঠ সমর্থনের জন্য চিরকৃতজ্ঞ।” তিনি আরও জানান, ভবিষ্যতেও এই ধরনের উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে এবং আরও বেশি মানুষকে এই মহৎ কাজে যুক্ত করার প্রচেষ্টা চলবে।
এই রক্তদান শিবিরে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিল বিভিন্ন বয়সের এবং পেশার মানুষ। তরুণ ছাত্র, গৃহিণী, এবং পেশাদার কর্মীদের এই স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ প্রমাণ করে যে সমাজে মানবিক মূল্যবোধ এখনও জীবন্ত। একজন মহিলা রক্তদাতা বলেন, “আমি প্রথমবার রক্ত দিয়েছি এবং এটি আমার জন্য একটি অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা। আমি ভবিষ্যতেও এই ধরনের কর্মসূচিতে অংশ নেব।”
রক্তদান শিবিরে রক্ত সংগ্রহের পাশাপাশি স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থাও ছিল, যা রক্তদাতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। রামকৃষ্ণ মিশন সেবা প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসক এবং স্বেচ্ছাসেবক দল এই প্রক্রিয়াকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করেছে। শিবিরে অংশগ্রহণকারীদের জন্য পানীয় এবং হালকা নাস্তার ব্যবস্থাও করা হয়েছিল, যা তাদের শারীরিক শক্তি পুনরুদ্ধারে সহায়ক ছিল।
শারদীয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের এই উদ্যোগ সমাজে রক্তদানের প্রতি সচেতনতা বাড়াতে এবং মানবিক কাজে আরও মানুষকে উৎসাহিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই ধরনের কর্মসূচি কেবল রক্তের চাহিদা মেটায় না, বরং সমাজে ঐক্য ও সহযোগিতার বার্তা ছড়িয়ে দেয়।