পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata) বেঙ্গল সিলিকন ভ্যালির নিউ টাউনে টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস (টিসিএস)-এর নতুন অফিস ক্যাম্পাসের প্রথম পর্যায়ের নির্মাণ পরিকল্পনা অনুমোদনের ঘোষণা করে গর্ব প্রকাশ করেছেন। নিউ টাউন কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (এনকেডিএ) ২০ একর জমির উপর এই বিশ্বমানের ক্যাম্পাসের ফেস-১ বিল্ডিং প্ল্যান অনুমোদন করেছে।
প্রথম পর্যায়ে ৯ লক্ষ বর্গফুট অত্যাধুনিক পরিকাঠামো, (Mamata) যার মধ্যে একটি ১১ তলা অফিস টাওয়ার রয়েছে, নির্মাণ করা হবে, যা ৫,০০০ ব্যক্তির জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও ১৫ লক্ষ বর্গফুট স্থান তৈরি হবে, যা অতিরিক্ত ২০,০০০ কর্মসংস্থানের সুযোগ দেবে। পুরো প্রকল্প সম্পন্ন হলে এই ক্যাম্পাসে মোট ২৪ লক্ষ বর্গফুট নির্মিত স্থান থাকবে এবং ২৫,০০০ প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata) এক্স প্ল্যাটফর্মে এই ঘোষণা করে বলেন, “যারা বাংলাকে নিরন্তর কলঙ্কিত করে এবং আমাদের অগ্রগতিকে ইচ্ছাকৃতভাবে উপেক্ষা করে, তাদের জন্য এটি একটি স্মারক। বাংলা উদ্ভাবন, বিনিয়োগ এবং সমন্বিত উন্নয়নের কেন্দ্র হিসেবে উঠে আসছে। বেঙ্গল মিনস বিজনেস, এবং বিশ্ব এটি লক্ষ্য করছে।” এই প্রকল্প বাংলার অর্থনৈতিক সম্ভাবনা এবং তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) খাতে রাজ্যের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের প্রমাণ।
I am pleased to share that the New Town Kolkata Development Authority (NKDA) has sanctioned the Phase-I building plan for the TCS office campus at Bengal Silicon Valley, spread over 20 acres.
In this first phase, 9 lakh sq. ft. of world-class infrastructure, including an…
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) June 24, 2025
প্রকল্পের বিবরণ
বেঙ্গল সিলিকন ভ্যালি, নিউ টাউনে অবস্থিত, পশ্চিমবঙ্গের আইটি ও ইলেকট্রনিক্স খাতের জন্য একটি মেগা হাব হিসেবে গড়ে উঠছে। এই ২০০ একরের প্রযুক্তি পার্কে টিসিএস-এর ২০ একর জমির উপর নির্মিত হচ্ছে এই অত্যাধুনিক অফিস ক্যাম্পাস।
প্রথম পর্যায়ে ৯ লক্ষ বর্গফুটের পরিকাঠামোতে একটি ১১ তলা অফিস টাওয়ার ছাড়াও স্মার্ট ওয়ার্কস্পেস, সবুজ এলাকা, এবং টেকসই নকশা থাকবে। এই পর্যায়ে প্রায় ৫,০০০ তরুণ পেশাদারের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে, যা রাজ্যের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নতুন গতি সঞ্চার করবে।
দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও ১৫ লক্ষ বর্গফুট নির্মাণ করা হবে, যা অতিরিক্ত ২০,০০০ কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে। পুরো প্রকল্প সম্পন্ন হলে এই ক্যাম্পাসে মোট ২৪ লক্ষ বর্গফুট বিল্ট-আপ স্পেস থাকবে, যা ২৫,০০০ প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থানের পাশাপাশি হাজার হাজার পরোক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। টিসিএস-এর এই ক্যাম্পাসে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), ক্লাউড কম্পিউটিং, এবং ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনের মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তির উপর কাজ করা হবে।
বাংলার আইটি খাতে নতুন দিগন্ত (Mamata)
বেঙ্গল সিলিকন ভ্যালি বাংলার আইটি খাতের জন্য একটি গেম-চেঞ্জার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে ইনফোসিস, উইপ্রো, এবং কগনিজেন্টের মতো আইটি জায়ান্টরা এখানে তাদের ক্যাম্পাস স্থাপনের জন্য জমি নিয়েছে। টিসিএস-এর এই প্রকল্প এই হাবের গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে দেবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমরা বাংলাকে ভারতের সিলিকন ভ্যালি হিসেবে গড়ে তুলছি। এখানে তরুণ প্রজন্মের জন্য বিশ্বমানের
কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হচ্ছে
নিউ টাউনের আধুনিক পরিকাঠামো,(Mamata) সংযোগ ব্যবস্থা, এবং বিনিয়োগ-বান্ধব নীতি এই অঞ্চলকে আইটি কোম্পানিগুলির জন্য আকর্ষণীয় করে তুলেছে। কলকাতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই হাব মেট্রো, রাস্তা, এবং অন্যান্য পরিবহন ব্যবস্থার মাধ্যমে সুসংযুক্ত। এছাড়া, রাজ্য সরকারের আইটি নীতি, যেখানে কর ছাড়, বিদ্যুৎ ভর্তুকি, এবং দ্রুত অনুমোদনের ব্যবস্থা রয়েছে, বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করছে।
মমতার বার্তা
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata) তাঁর ঘোষণায় বাংলার সমালোচকদের প্রতি তীক্ষ্ণ কটাক্ষ করেছেন। তিনি বলেন, “কেউ কেউ বাংলার উন্নয়নকে উপেক্ষা করে। তাদের জন্য এই প্রকল্প একটি জবাব। আমরা কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী।” তিনি আরও বলেন, “বাংলা শুধু ঐতিহ্যের জন্য নয়, উদ্ভাবন ও বিনিয়োগের জন্যও পরিচিত হচ্ছে। আমরা তরুণদের স্বপ্ন পূরণের জন্য কাজ করছি।”
মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্য রাজনৈতিক মহলেও আলোড়ন ফেলেছে। তৃণমূল নেতা ফিরহাদ হাকিম বলেন, “মমতা দিদির নেতৃত্বে বাংলা আইটি হাব হিসেবে বিশ্ব মানচিত্রে উঠে আসছে। টিসিএস-এর এই প্রকল্প তার প্রমাণ।” তিনি আরও বলেন, “বিজেপি বাংলার উন্নয়নকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও আমরা এগিয়ে চলেছি।”
বিরোধীদের প্রতিক্রিয়া
বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী এই ঘোষণার প্রশংসা করলেও সরকারের নীতির সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “টিসিএস-এর প্রকল্প বাংলার জন্য গর্বের বিষয়। কিন্তু তৃণমূল সরকারের শিল্পনীতি স্বচ্ছ নয়। আমরা চাই বাংলায় আরও বিনিয়োগ আসুক, কিন্তু সরকারের দুর্নীতি এর পথে বাধা।” তিনি আরও দাবি করেছেন, রাজ্যে আইনশৃঙ্খলার অবনতি বিনিয়োগকারীদের জন্য উদ্বেগের কারণ।
‘বাংলার বাইরে সমস্যায় পড়া শ্রমিকরা রোহিঙ্গা’, দাবি শমীকের
অর্থনৈতিক প্রভাব
টিসিএস-এর এই ক্যাম্পাস বাংলার অর্থনীতিতে বড় প্রভাব ফেলবে। ২৫,০০০ প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান ছাড়াও এটি পরোক্ষভাবে হোটেল, পরিবহন, এবং খুচরো খাতে হাজার হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। এছাড়া, এই প্রকল্প নিউ টাউনের রিয়েল এস্টেট খাতে নতুন গতি আনবে। রাজ্যের আইটি রপ্তানি, যা বর্তমানে ১.৫ লক্ষ কোটি টাকা, এই প্রকল্পের মাধ্যমে আরও বাড়বে।
টিসিএস-এর বেঙ্গল সিলিকন ভ্যালি ক্যাম্পাস (Mamata) বাংলার তথ্যপ্রযুক্তি খাতে একটি মাইলফলক। মনে করা হচ্ছে এই প্রকল্প রাজ্যের তরুণদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করবে এবং বাংলাকে বিশ্বের আইটি মানচিত্রে প্রতিষ্ঠিত করবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বাংলা বিনিয়োগ ও উদ্ভাবনের কেন্দ্র হিসেবে এগিয়ে চলেছে। এই ঘোষণা শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতিই নয়, বাংলার সমালোচকদের কাছে একটি শক্তিশালী বার্তা যে ‘বেঙ্গল মিনস বিজনেস’।