ধর্মতলার শহিদ সমাবেশে তৃণমূল নেত্রীর গলায় যেন হারের হাহাকার। ২৪ এর লোকসভা এবং তার পরপরই বিধানসভা উপনির্বাচনে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে তৃণমূল। কিন্তু তা সত্ত্বেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিছুটা যেন আশাহত। উত্তরবঙ্গে তৃণমূলের সেই চেনা ছবিটা যেন এবারও বদলাল না। তাই হারের মালার মধ্যেও কাঁটার খোঁচা অনুভব করছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। সব থেকে বেশি আশাহত হয়েছেন মালদহ নিয়ে, এমনটাই উঠে এল তাঁর বক্তব্যে।
লোকসভা নির্বাচনের ফলপ্রকাশের পর দেখা গেল, একমাত্র কোচবিহার ছাড়া, উত্তরবঙ্গে বিজেপির গড় মোটামুটি অক্ষতই রয়েছে। অথচ মমতা-অভিষেক জুটি ভোট প্রচারে উত্তরবঙ্গে রীতিমতন মাটি কামড়ে পড়েছিলেন। তবে কোচবিহারের তৃণমূলের জয়ে তিনি ধন্যবাদ জানিয়েছেন সেখানকার ভোটদাতাদের।
‘বিত্তমান নয়, বিবেকবান!’ বড় জয়ের পর ২১শের মঞ্চে শৃঙ্খলার পাঠ মমতার
অপরদিকে রায়গঞ্জে লোকসভা ভোটে হেরে গেলেও, বিধানসভা উপনির্বাচনে ব্যাপক জয় পেয়েছে তৃণমূল। সেই কথা মনে করিয়ে অকুন্ঠ কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। তবে মমতার গলায় সব থেকে বেশি দীর্ঘশ্বাস শোনা গিয়েছে মালদহকে নিয়ে। মালদহ উত্তর এবং মালদহ দক্ষিণ দুই কেন্দ্রেই পরাজিত হয়েছে তৃণমূল। অথচ লোকসভা নির্বাচনের দিনে অনুষ্ঠিত হওয়া বিধানসভা উপনির্বাচনে ভগবানগোলা কেন্দ্রে তৃণমূলের রেয়াত হোসেন সরকার জিতেছেন। কেন দুই লোকসভা কেন্দ্রে হার, তাই নিয়ে রীতিমতন হাহাকারের সুর মমতার গলায়।
এই দুই কেন্দ্রের একটিতে জিতেছে বিজেপি এবং অপরটিতে জিতেছে কংগ্রেস। বাংলার কংগ্রেসের একমাত্র সাংসদ ইশা খান চৌধুরী মালদহ দক্ষিণ থেকে জিতেছেন। মমতার অনুযোগ, কেন এত কাজ করা সত্ত্বেও মালদহবাসীর মন তাঁরা জিততে পারেন না? এর আগে নির্বাচনে মালদহে প্রচারে গিয়ে আম এবং আমসত্ত্বের তত্ত্ব টেনে এনেছিলেন মমতা। আমের সাথে সাথে আমসত্ত্বটাও চাই এটাই ছিল তাঁর আবেদন।
একুশের মঞ্চে মমতার মুখে হিংসাবিধ্বস্ত বাংলাদেশ! দিলেন বিরাট বার্তা
২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে মালদহে যথেষ্ট ভালো ফল করেছিল তৃণমূল। সেই প্রসঙ্গ মাথায় রেখেই মমতার বক্তব্য ছিল আম তো হলো এবার আমসত্ত্ব অর্থাৎ লোকসভা ভোটেও তাদেরকেই যেন ভোটটা দেন আমজনতা। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে মমতার আমসত্ত্বের আবদার কার্যত নাকচই করেছেন মালদহে আমজনতা। তবে আশা ছাড়ছেন না মমতা। তার বিশ্বাস আগামী দিনে আম এবং আমসত্ত্ব দুটোই তৃণমূলের ভাগেই আসবে।
তবে পাশের জেলা মুর্শিদাবাদে রীতিমতন ইতিহাস গড়েছে তৃণমূল। বহরমপুরের তৃণমূল প্রার্থী ইউসুফ পাঠান জায়েন্ট কিলার হিসেবেই নিজেকে প্রতিপন্ন করেছেন। অধীর চৌধুরীর গড় বলে যে মিথ হয়ে গিয়েছিল বহরমপুর, ২০২৪ এর লোকসভায় তা কার্যত ধূলিস্যাৎ। সেই ফলাফলেও যে তিনি তৃপ্ত, তা নিজের ভাষণে উল্লেখ করেছেন মমতা।
আগামী তিন মাসেই তৃণমূলের সংগঠনে বড় ঝাঁকুনি! হুঙ্কার অভিষেকের
তবে অভিজ্ঞ রাজনৈতিক মহলের মতে উত্তরবঙ্গ এবং মালদহের ফলাফলের উল্লেখ কার্যত হুশিয়ারি। ২৬ এর বিধানসভার বলতে পাকানো যেন ২০২৪ এর শহীদ সমাবেশ থেকেই শুরু করে দিল তৃণমূল। একদিকে মঞ্চে সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদব, অপরদিকে মমতা-অভিষেক জুটি, জাতীয় স্তরেও তৃণমূলের শহীদ সমাবেশ এক অন্য মাত্রা পেয়েছে বলেই অনেকে মনে করছেন। সেই মঞ্চে কার্যত বিজয় উৎসবের আবহেই মমতার হারের ময়নাতদন্তে, হুঁশিয়ারির গন্ধই পাচ্ছেন তৃণমূলের সমর্থকরা।