‘শিশুর মুখে ঘৃণার বীজ’! বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন মমতা

ভিনরাজ্যে বসবাসকারী বাঙালিদের উপর নির্যাতনের ঘটনা নতুন নয়। তবে এবার যে ঘটনা সামনে এসেছে, তা আরও ভয়াবহ এবং হৃদয়বিদারক। দিল্লির গীতা কলোনিতে এক পরিযায়ী শ্রমিকের…

CM Mamata Banerjee Directs All Ministers to Launch Campaign Over Harassment of Bengali-Speaking Migrants in Other States

ভিনরাজ্যে বসবাসকারী বাঙালিদের উপর নির্যাতনের ঘটনা নতুন নয়। তবে এবার যে ঘটনা সামনে এসেছে, তা আরও ভয়াবহ এবং হৃদয়বিদারক। দিল্লির গীতা কলোনিতে এক পরিযায়ী শ্রমিকের স্ত্রী এবং দেড় বছরের শিশুকে পৈশাচিকভাবে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। ঘটনা সামনে আসতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও শেয়ার করে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এর আগেও নয়াদিল্লির জয়হিন্দ কলোনিতে বাঙালিদের উচ্ছেদ চেষ্টার বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন তিনি। এবার আবারও রাজধানীতেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটায় ক্ষোভে ফুঁসছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।

মুখ্যমন্ত্রীর শেয়ার করা ৪৭ সেকেন্ডের ভিডিওটি অত্যন্ত মর্মান্তিক। ভিডিওতে মালদার চাঁচলের বাসিন্দা, দিল্লিতে শ্রমিকের কাজ করা এক ব্যক্তি নিজেই কণ্ঠ ভারী করে জানাচ্ছেন, কীভাবে তাঁর নিরীহ পরিবারকে নিশানা করা হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, দিল্লি পুলিশের একদল কর্মী তাঁর দেড় বছরের সন্তানকে নগ্ন করে পেটায়। এমনকি শিশুটির কানের ভিতরে আঘাত লাগে। চিকিৎসকের মতে, এত গভীর চোটে ভবিষ্যতে শ্রবণশক্তি হারিয়ে ফেলতে পারে সে।

   

শুধু শিশু নয়, ওই শ্রমিকের স্ত্রীকেও পুলিশ টেনে হিঁচড়ে থানায় নিয়ে যায় এবং সেখানে বেধড়ক মারধর করে। তাঁর গালে ও শরীরের বিভিন্ন অংশে গুরুতর চোটের চিহ্ন রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, তাঁদের পরণের পোশাক কেড়ে নেওয়া হয়, যার ফলে তাঁরা তীব্র অপমান ও মানসিক আঘাতের শিকার হন। এই গোটা ঘটনাক্রমে যে নারকীয়তার ছবি ফুটে উঠেছে, তা শিউরে ওঠার মতো।

মুখ্যমন্ত্রী এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে লেখেন, “দেখুন, দিল্লি পুলিশ মালদার চাঁচলের এক পরিযায়ী পরিবারের এক শিশু ও মা-কে কি নিষ্ঠুরভাবে মেরেছে! দেখুন, বাঙালিদের বিরুদ্ধে বিজেপির ভাষা সন্ত্রাসে একটি শিশুরও পরিত্রাণ নেই! দেশকে এরা কোথায় নিয়ে যাচ্ছে?” তাঁর এই মন্তব্যে স্পষ্ট যে, এই ঘটনাকে তিনি শুধুমাত্র একটি আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা হিসেবে দেখছেন না, বরং একটি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের ছক হিসেবেই বিবেচনা করছেন।

তাঁর বক্তব্যে বিজেপিকে কটাক্ষ করে আরও বলা হয়েছে, আজ ভাষা, পরিচয়, অঞ্চল – এই সমস্ত কিছুকেই হাতিয়ার করে নিরীহদের উপর অত্যাচার চালানো হচ্ছে। “যেখানে একটি শিশুও রেহাই পাচ্ছে না, সেখানে আমরা কিসের গণতন্ত্রে বাস করছি?” – এই প্রশ্নও তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

Advertisements

এই ঘটনার পর পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস দাবি তুলেছে, অবিলম্বে দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হোক। অপরাধীদের বিরুদ্ধে যেন যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়, সেই দাবি জানিয়েছে তাঁরা। পাশাপাশি দিল্লিতে বসবাসকারী বাঙালিদের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল নেতৃত্ব।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ২০২৬-এর লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে এই ধরনের ঘটনা কেন্দ্র-বিরোধী রাজ্যগুলিতে বিজেপির প্রতি রাজনৈতিক ক্ষোভ আরও উস্কে দেবে। বাংলা-বিরোধী মনোভাব ও হিন্দি বলয়ের কর্তৃত্ববাদী আচরণ নিয়ে যে ইতিমধ্যেই জনমানসে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, এই ঘটনা তার ঘৃতাহুতি দিতে পারে।

শেষমেশ, প্রশ্ন উঠছে—এই ধরনের বর্বরতা কতদিন চলবে? বাঙালি পরিচয়ের নামে যেভাবে দমন-পীড়ন চালানো হচ্ছে, তার কি কোনও শেষ আছে? মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হুঁশিয়ারি বার্তাই হয়তো অনেককে সাহস দেবে, কিন্তু কেন্দ্রীয় স্তরে এই বিষয়ের কি কোনও স্থায়ী সমাধান হবে? উত্তরের অপেক্ষায় আপাতত গোটা বাংলা।