আরজি কর কাণ্ডের (RG Kar Protest) জেরে দীর্ঘদিন ধরে কর্মবিরতি চালিয়ে যাচ্ছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। কিছুদিন আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্ন থেকে জানিয়েছিলেন যে, চিকিৎসকদের কর্মবিরতির জেরে প্রায় ২৩ জন রোগী বিনা চিকিৎসায় প্রাণ হারিয়েছেন। যদিও সেই অভিযোগ মানতে চাননি আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকরা। এরপরে মুখ্যমন্ত্রীর আবেদন সত্ত্বেও তাঁরা এখনও পর্যন্ত কর্মবিরতি চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এর মধ্যে চারটি সরকারি হাসপাতাল ঘুরেও বিনা চিকিৎসায় প্রাণ হারালেন দেগঙ্গার এক যুবক।
আর সেই মৃত যুবকের স্ত্রীকে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এবার চাকরি দেওয়ার কথা ভেবেছে তৃণমূলের প্রতিনিধি দল। জানা যাচ্ছে, দেগঙ্গার সোহাই শ্বেতপুরের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম সম্প্রতি বাইক দুর্ঘটনায় জখম হয়। এরপর প্রথমে তাঁকে বারাসাত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। সেখান থেকে তাঁকে আরজি কর হাসপাতালে রেফার করা হয়। কিন্তু সেখানেও চিকিৎসা না মেলায় সেই যুবকের পরিবার তাঁকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল এবং এসএসকেএমে ভর্তি করানোর চেষ্টা করে।
তবে শেষ পর্যন্ত চারটি সরকারি হাসপাতালেই চিকিৎসা না মেলায় বাধ্য হয়ে তাঁকে বারাসতের একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। সেখানেই নিহত হন দেগঙ্গার যুবক শফিকুল ইসলাম। নিহত যুবকের পরিবার অভিযোগ জানিয়ে বলেছে, আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতির জন্য এত সরকারি হাসপাতাল ঘুরেও সেই যুবকের চিকিৎসা তাঁরা করতে পারেননি। শফিকুলের মৃত্যুর জন্য মূলত জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনকে দায়ী করেছে তাঁর পরিবার।
এরপরে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে গিয়ে পুরো বিষয়টা জানিয়েছিলেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে মৃতের পরিজনদের পাশে থাকার নির্দেশ দেওয়ার পরে বৃহস্পতিবার সকালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে মৃতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন একটি প্রতিনিধি দল। এদিন শফিকুলের বাড়িতে গিয়েছিলেন দেগঙ্গার তৃণমূল বিধায়ক রহিমা বিবি, অশোকনগরের বিধায়ক তথা উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামী সহ স্থানীয় পঞ্চায়েতের জনপ্রতিনিধিরা।
সেখানে পরিবারের সঙ্গে কথা বলে তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে শফিকুলের স্ত্রীকে চাকরি দেওয়ার বিষয়ের কথা তাদের তরফে থেকে জানানো হয়। যুবকের মৃত্যু প্রসঙ্গে ক্ষোভ উগড়ে দেগঙ্গার তৃণমূল বিধায়ক বলেছেন, “চিকিৎসকেরা তাঁদের দায়িত্ব পালন না করায় এক যুবককে প্রাণ হারাতে হল। আমরা পাশে থাকছি, কিন্তু পরিবারের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল।”
এদিন মৃত দিনমজুরের স্ত্রী শাহিনারা বেগমের বায়োডেটা নিয়ে নারায়ণ গোস্বামী জানিয়েছেন, “মুখ্যমন্ত্রী আমাদের শফিকুলের পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে বলেছিলেন। আগামী দিনে আমরা তাদের পাশে আছি, সে কথাই জানাতে এসেছিলাম। মৃত যুবকের স্ত্রীর বায়োডাটা নিয়েছি, এ বিষয়ে যা করার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করবেন।”