মহুয়া মৈত্রকে সরানোর দাবিতে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি ৬ বিধায়কের

পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার তৃণমূল সংগঠনে নতুন করে এক গৃহযুদ্ধের আঁচ দেখা যাচ্ছে। দলের সাংসদ মহুয়া মৈত্রের (Mahua Moitra) বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন স্থানীয় বিধায়করা। বিধায়কদের দাবি,…

Mahua Moitra: Six TMC MLAs Submit Letter to Mamata Banerjee and Subrata Bakshi Demanding Removal of Mahua

পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার তৃণমূল সংগঠনে নতুন করে এক গৃহযুদ্ধের আঁচ দেখা যাচ্ছে। দলের সাংসদ মহুয়া মৈত্রের (Mahua Moitra) বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন স্থানীয় বিধায়করা। বিধায়কদের দাবি, মহুয়া মৈত্রকে (Mahua Moitra)কৃষ্ণনগর জেলা সাংগঠনিক সভাপতির পদ থেকে সরানো হোক, কারণ তিনি দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় সংগঠনের কার্যক্রমে মনোযোগী নন এবং দিল্লির কাজেই বেশি ব্যস্ত থাকেন। এই দাবিতে বিধায়কেরা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে একটি চিঠি লিখেছেন।

এখন প্রশ্ন উঠছে, তৃণমূলের নদিয়া জেলা সংগঠনে কি গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হতে চলেছে? মহুয়া মৈত্রের (Mahua Moitra) বিরুদ্ধে বিধায়কদের ক্ষোভের মূল কারণ,তিনি স্থানীয় দলের কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেন না এবং সাংসদ (Mahua Moitra)হিসেবে তার দায়িত্বও তিনি সঠিকভাবে পালন করছেন না। বিধায়কদের বক্তব্য, সাংসদ মহুয়া মৈত্রের (Mahua Moitra)মনোযোগ দিল্লিতে থাকায়, তিনি নিজের সংসদীয় এলাকায়, বিশেষত কৃষ্ণনগরে দলের কর্মকাণ্ডে সময় দেন না। ফলে,দলের স্থানীয় সংগঠন দুর্বল হয়ে পড়েছে, যা নির্বাচনী জয়ের জন্য এক বড় ধরনের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

   

চিঠিতে বিধায়কেরা এমন অভিযোগ করেছেন যে, মহুয়া মৈত্রের (Mahua Moitra)কাজের প্রতি অবহেলা দলের জন্য ক্ষতিকর। তারা জানান, মহুয়া মৈত্র প্রতিটি বিধানসভায় একটি সমান্তরাল সংগঠন গড়ে তুলছেন, যা দলের শৃঙ্খলা ও সংগঠনবদ্ধতার ওপর প্রশ্ন তোলে। এই চিঠির মাধ্যমে তারা সুস্পষ্টভাবে দাবি করেছেন যে, মহুয়া মৈত্রের (Mahua Moitra) বদলে অন্য কাউকে জেলা সভাপতি করা হোক, যাতে সংগঠন আরও শক্তিশালী হয়।

এ প্রসঙ্গে, চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে যে, প্রায় ছয়জন বিধায়ক এই চিঠি তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পাঠিয়েছেন। বিধায়করা হলেন উজ্জ্বল বিশ্বাস, রুকবানুর রহমান, বিমলেন্দু সিনহা, কল্লোল খান সহ আরও কয়েকজন। চিঠির একটি কপি রাজ্য কমিটির তৃণমূল সভাপতি সুব্রত বক্সির কাছে দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া, মহুয়া মৈত্রের সাথে স্থানীয় বিধায়কদের দ্বন্দ্ব নতুন কিছু নয়। কয়েকটি নির্বাচনের আগে থেকেই মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে, তিনি বিধায়কদের যথাযথ সহযোগিতা করেন না, বিশেষ করে নির্বাচনের সময়ে। বিধায়করা বলেন, নির্বাচনী প্রচারে তাদের সহযোগিতা না পেয়ে মহুয়া মৈত্র কখনও কখনও তাদের পরামর্শ উপেক্ষা করেছেন। অন্যদিকে, মহুয়া মৈত্রের পাল্টা অভিযোগ ছিল, বিধায়কদের কাছ থেকে তার কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায় না, যা তাকে তাঁর নির্বাচনী কার্যক্রম চালাতে আরও বেশি বাধা সৃষ্টি করেছে।

তবে, দলের নেতৃত্ব বারেবারে মহুয়া মৈত্রের পারফরম্যান্সের উপর আস্থা রেখেছে এবং তাকে জাতীয় স্তরে দলের মুখ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। দলীয় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে মহুয়া মৈত্রের কৃতিত্ব ও দৃষ্টিভঙ্গি অনেকটা প্রশংসিত। কিন্তু নদিয়ার স্থানীয় পরিস্থিতি ঠিক কতটা জটিল হয়ে উঠবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।

বর্তমানে, দলের মধ্যে এই অস্থিরতা দলের ভিতরে এক নয়া পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে, যেখানে দলের সাংগঠনিক কাঠামো প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। তবে, এই পরিস্থিতি কি দলের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করবে, নাকি তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছে দলের অভ্যন্তরীণ অশান্তি মেটাবেন, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

এদিকে, স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের দাবি, এই ধরনের অস্থিরতা দলের পক্ষে ক্ষতিকর হতে পারে। নির্বাচন সামনে রেখে দলের শৃঙ্খলা এবং সংগঠনের ঐক্য রক্ষা করা জরুরি। দলের নেতা এবং কর্মীরা যদি এই বিভাজন বা গোষ্ঠী কোন্দলের মধ্যে আটকে যান, তবে দলের হারানোর আশঙ্কা অনেক বেড়ে যাবে।

এছাড়া, তৃণমূলের মূল উদ্দেশ্য হল পশ্চিমবঙ্গে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠা, তবে যদি দলের ভেতরের এই অস্থিরতা অব্যাহত থাকে, তবে তা দলের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

অতএব, তৃণমূলের নদিয়া জেলা সংগঠনে বর্তমানে যে অস্থিরতা চলছে, তা দলীয় নেতৃত্বের পক্ষে এক বড় পরীক্ষা হতে চলেছে। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কীভাবে এই সংকট মোকাবিলা করবেন, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।