যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় (Jadavpur University Campus) পড়াশোনার জন্য নয়, বরং ক্যাম্পাসে ঘটে যাওয়া একাধিক বিতর্কিত ঘটনার তদন্তে নামল লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগ। ছাত্রীমৃত্যু, হোস্টেলের অস্বাভাবিক পরিবেশ, রাজনৈতিক প্রভাব এবং প্রশাসনিক ব্যর্থতা—সব মিলিয়ে যাদবপুর আজ এক অনিশ্চয়তার কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে।
সম্প্রতি এক ছাত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয় রাজ্যজুড়ে। অভিযোগ ওঠে হোস্টেলে র্যাগিং, মানসিক নির্যাতন, এমনকি বহিরাগতদের দৌরাত্ম্য নিয়েও। প্রশাসন প্রথমে বিষয়টি ‘স্বাভাবিক মৃত্যু’ বলে দায় এড়িয়ে গেলেও, পরবর্তীতে প্রমাণ ও ছাত্রদের আন্দোলনের চাপে পড়েই তদন্তে নামতে হয়। এই পরিস্থিতিতেই লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগ ক্যাম্পাসে এসে পৌঁছায়।
গোয়েন্দা আধিকারিকদের একটি বিশেষ দল মঙ্গলবার সকালে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে তদন্ত শুরু করে। প্রথমেই তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে পৌঁছে রেকর্ড খতিয়ে দেখে। এরপর সিসিটিভি ফুটেজ, হোস্টেলের হাজিরা তালিকা, রাত্রিকালীন নিরাপত্তা রাউন্ডের রিপোর্ট—সব কিছু সংগ্রহ করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শী ছাত্রদের আলাদা করে ডেকে জেরা করা হয়। কিছু ছাত্র জানান, হোস্টেলের মধ্যে রাতে নির্দিষ্ট কিছু ঘর থেকে চিৎকার বা অস্বাভাবিক শব্দ শোনা যেত, কিন্তু ভয় বা প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তার কারণে কেউ মুখ খোলেনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীরাও গোয়েন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন। অনেকেই হতাশা প্রকাশ করেন যে, বিগত কয়েক বছরে প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ দুর্বল হয়েছে। বহিরাগতদের ক্যাম্পাসে প্রবেশ, ছাত্ররাজনীতির নামে দাদাগিরি, এমনকি নিয়মবহির্ভূত অর্থ আদায়ের অভিযোগও সামনে আসে। শিক্ষকরা চান ক্যাম্পাসে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আসুক, কিন্তু ছাত্রদের ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সরাসরি প্রভাব তাঁরা চান না। গোয়েন্দারা হোস্টেলের বিভিন্ন ঘর ঘুরে দেখে, কিছু জায়গায় ছাত্রদের ব্যক্তিগত জিনিসপত্রও পরীক্ষা করে। এতে কিছু ছাত্র ক্ষুব্ধ হয় এবং ক্যাম্পাসের গেটের সামনে বিক্ষোভ শুরু করে। কিন্তু গোয়েন্দারা জানান, তাঁদের উদ্দেশ্য কাউকে হেনস্থা করা নয়, বরং প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটন করা।
তদন্ত চলাকালীন, লালবাজারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা ক্যাম্পাসে শান্তি বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর। যাঁরা দোষী, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে, কিন্তু নির্দোষদের হয়রানি করা হবে না। প্রশাসনও আশ্বাস দেয়, তদন্তে কোনো রকম গোপনীয়তা রাখা হবে না এবং প্রতিবেদন প্রকাশ্যে আনা হবে। যাদবপুর ক্যাম্পাসের এই পরিস্থিতি আবারও এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছে—একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কি শুধুই পড়াশোনার জায়গা, নাকি সেটি এক রাজনৈতিক, সামাজিক চেতনার কেন্দ্র? প্রশাসনের ব্যর্থতা, ছাত্ররাজনীতি, এবং বহিরাগত প্রভাব মিলিয়ে ক্যাম্পাসে তৈরি হয়েছে এক অনাকাঙ্ক্ষিত অস্থিরতা।