সম্প্রতি রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় SIR ইস্যুতে শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বিজেপি। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে ভোটার তালিকা সংক্রান্ত অভিযোগ। তবে বিজেপির দাবি, তৃণমূলের এই দুই ইস্যুতে চাপে পড়ে রাজ্যের শাসকদল এখন গুজব রটানোর অভিযোগ তুলছে। কিন্তু তৃণমূলের বক্তব্য, আসল সত্যিই বিজেপির অভিযোগের ভিত অনেকটাই নড়বড়ে।
বুধবার দিল্লিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর সাংবাদিক বৈঠক করে অভিযোগ তোলেন, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজের কেন্দ্রেই নাকি রয়েছে “লক্ষ লক্ষ ভুয়ো ভোটার”। তাঁর মতে, এই ভুয়ো ভোটারদের সাহায্যে তৃণমূল ভোটে প্রভাব বিস্তার করছে। অনুরাগের অভিযোগ, SIR ইস্যুতে রাজ্য সরকার ব্যর্থ হয়েছে, আর ভোটার তালিকায় গরমিলের দায়ও সরকার এড়াতে পারবে না।
তবে এই অভিযোগে তৃণমূলের ভ্রুক্ষেপ নেই। রাজ্যের শাসকদল সাফ জানিয়ে দিয়েছে, এই সমস্ত মন্তব্য শুধু রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডা ছাড়া আর কিছু নয়। তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, “ভোটার তালিকায় একটা-দু’টো ভুল নাম থাকতেই পারে, এটা নতুন কিছু নয়। জন্মলগ্ন থেকেই ভোটার তালিকায় সামান্য ভুল থাকে, যা এত বড় নির্বাচনে প্রভাব ফেলে না।” তাঁর মতে, বিজেপি ইচ্ছে করেই ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে বিভ্রান্তি ছড়াতে চাইছে।
কুণাল আরও প্রশ্ন তোলেন— “যদি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কেন্দ্র নিয়ে বিজেপির এত অভিযোগ থাকে, তাহলে এতদিন পুনর্নির্বাচনের দাবি তুলল না কেন? ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন তো করিয়েছে নির্বাচন কমিশন ও কেন্দ্রীয় বাহিনী। সেক্ষেত্রে এই তালিকা যদি সত্যিই ভুয়ো ভোটারে ভরা থাকে, দায় কি নির্বাচন কমিশনের উপর বর্তায় না?”
তৃণমূল শিবির মনে করছে, আসলে সাম্প্রতিক SIR আন্দোলনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে সক্রিয় হয়েছেন, তাতে বিজেপি অস্বস্তিতে পড়েছে। শাসকদলের দাবি, জনমুখী আন্দোলনে বিজেপির মোকাবিলা করতে না পেরে তারা এখন অভিযোগের রাজনীতি শুরু করেছে।
অন্যদিকে, বিজেপির বক্তব্য— তৃণমূল ইচ্ছাকৃতভাবে ভোটার তালিকায় গরমিল রেখেছে, যাতে নির্বাচনে সুবিধা পায়। তাদের দাবি, এই ধরনের ‘ভুয়ো ভোটার’ বাদ না দিলে গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই ইস্যুতে বিজেপি নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জানাবে বলেও সূত্রের খবর।
রাজনৈতিক মহল বলছে, ভোটার তালিকার গরমিল নিয়ে এই প্রথম নয়, অতীতেও বহুবার রাজ্যে অভিযোগ উঠেছে। তবে সাধারণত সেই অভিযোগ থাকে সীমিত এলাকায়। এবার যেহেতু সরাসরি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কেন্দ্রকে নিশানা করা হয়েছে, তাই তা রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। বিজেপি চাইছে এই ইস্যুকে হাতিয়ার করে শাসকদলকে আক্রমণ করতে, আর তৃণমূল চাইছে অভিযোগকে ‘গুজব’ বলে প্রমাণ করতে।
এদিকে, সাধারণ ভোটারদের অনেকেরই বক্তব্য— ভোটার তালিকায় গরমিল থাকলে নির্বাচন কমিশনেরই দায়িত্ব তা সংশোধন করার। একজন ভোটারের নাম ভুল থাকলে বা মৃত ব্যক্তির নাম তালিকায় রয়ে গেলে তা সংশোধন করা উচিত। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে এই নিয়ে দোষারোপের রাজনীতি চলতে থাকলে, মূল সমস্যার সমাধান হবে না।
সব মিলিয়ে, SIR ইস্যুর সঙ্গে ভোটার তালিকার বিতর্ক যুক্ত হওয়ায় রাজ্যের রাজনৈতিক তাপমাত্রা আরও কিছুটা বেড়ে গেল। সামনে পঞ্চায়েত বা বিধানসভা উপনির্বাচন থাকলে এই বিষয়টি নিয়ে আরও উত্তেজনা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। এখন দেখার, বিজেপি তাদের অভিযোগে কতটা প্রমাণ হাজির করতে পারে, আর তৃণমূল কতটা সফল হয় এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন প্রমাণ করতে। রাজনৈতিক লড়াইয়ের এই নতুন অধ্যায়ে দুই পক্ষই যে পিছু হটবে না, তা প্রায় নিশ্চিত।