কলকাতা যেন আবার ফিরে গেল সেই ‘স্টোনম্যান’ (Stoneman Murder) আতঙ্কে। তবে এবার কল্পনা নয়, বাস্তবেই এক যুবককে পাথর দিয়ে থেঁতলে খুন করার অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সকালে দক্ষিণ কলকাতার টালিগঞ্জ থানা এলাকার শরৎ বোস রোডের উপর সুদেশ ভবনের কাছে ফুটপাথে পড়ে থাকা এক যুবকের দেহ ঘিরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায়।
মৃত যুবকের নাম সোমনাথ চক্রবর্তী ওরফে বুম্বা। বয়স আনুমানিক ৩০-এর কোঠায়। মহেশতলা থানা এলাকার বাসিন্দা। মূলত বিভিন্ন এলাকায় ভিক্ষা করেই জীবনধারণ করত। রাত কাটাত ফুটপাথেই।
প্রথমে মনে করা হয়েছিল, দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে সোমনাথের। কিন্তু দেহে যে ধরনের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়, তা দেখে সন্দেহ দানা বাঁধে। বাম কানে গুরুতর আঘাত ও রক্তক্ষরণ, ডান হাত ভাঙা — সব মিলিয়ে খুনের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়নি কলকাতা পুলিস।
টালিগঞ্জ থানার পুলিস নিজে থেকেই খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে। এলাকার একাধিক সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে পুলিস জানতে পারে, ঘটনাটি নিছক দুর্ঘটনা নয়। দেখা যায়, সোমনাথকে পাথর দিয়ে মাথায় আঘাত করা হচ্ছে। এরপরেই উঠে আসে খুনির নাম — রাজু নস্কর ওরফে ‘নাপিত’।
রাজুও একজন ভিক্ষুক। তবে তার অতীত অপরাধের খতিয়ান রয়েছে পুলিশের খাতায়। পুলিস তদন্তে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসে — ধৃত রাজু এর আগেও একাধিকবার ফুটপাথবাসীদের উপর হামলা চালিয়েছে।
২০২৪ সালের এপ্রিলে পার্ক সার্কাস এলাকায় এক ঘুমন্ত পথবাসীর উপর পাথর দিয়ে হামলার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। এমনকি, রবীন্দ্র সরোবর ও আশপাশের এলাকায় ব্লেড দিয়ে হামলার একাধিক অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
ধৃত রাজুকে টালিগঞ্জ থানার তদন্তকারী দল জয়নগর এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। পুলিসি জেরায় সে নিজের অপরাধ স্বীকার করেছে।
তদন্তে উঠে এসেছে, রাজুর মধ্যে গভীর মানসিক অসুস্থতা এবং অপরাধপ্রবণতা রয়েছে। সে নিজেও পথবাসী হয়েও অন্য পথবাসীদের উপর হিংস্র হয়ে উঠত। ঠিক যেন ১৯৮০-র দশকের মুম্বই বা কলকাতার কুখ্যাত স্টোনম্যান আতঙ্ক।
রাজুর বিরুদ্ধে খুন, আক্রমণ, অস্ত্র আইনে একাধিক ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। কলকাতা পুলিসের দক্ষ তদন্ত ও দ্রুত পদক্ষেপে ৯ ঘণ্টার মধ্যে রহস্যভেদ হওয়ায় সাধারণ মানুষ ও প্রশাসনের মধ্যে স্বস্তির বাতাবরণ তৈরি হয়েছে।
তবে বড় প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে — রাজুর মতো আরও কেউ কি শহরে লুকিয়ে আছে? ফুটপাথবাসীরা কি আর নিরাপদ? এ নিয়ে কলকাতা পুলিস আরও সতর্কভাবে নজরদারি চালাচ্ছে বলে সূত্রের খবর।