এক রাতেই একমাসের বৃষ্টি, মাত্র ১২ ঘণ্টায় জলমুক্ত কলকাতা

কলকাতায় একরাতের বৃষ্টিতে (Kolkata rain update) কার্যত ভেসে গিয়েছিল শহরের একাধিক রাস্তা। তবে আশ্চর্যজনক ভাবে, মাত্র ১২ ঘণ্টার মধ্যেই শহরের প্রায় সমস্ত জল নামিয়ে ফেলল…

এক রাতেই একমাসের বৃষ্টি, মাত্র ১২ ঘণ্টায় জলমুক্ত কলকাতা

কলকাতায় একরাতের বৃষ্টিতে (Kolkata rain update) কার্যত ভেসে গিয়েছিল শহরের একাধিক রাস্তা। তবে আশ্চর্যজনক ভাবে, মাত্র ১২ ঘণ্টার মধ্যেই শহরের প্রায় সমস্ত জল নামিয়ে ফেলল পুরসভার নিকাশি বিভাগ। সরকারি তথ্য বলছে, সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত যোধপুর পার্ক পাম্পিং স্টেশনে বৃষ্টি হয়েছে প্রায় ২৬৭ মিলিমিটার। যা সাধারণত গোটা বর্ষায় এক মাসে হয়।

কলকাতা পুরসভার নিকাশি বিভাগের মেয়র পারিষদ তারক সিং জানান, “এক রাতে যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে, তা বর্ষাকালের গড় বৃষ্টিপাতের চেয়ে বেশি। তাও আমরা দ্রুত জল নামাতে সক্ষম হয়েছি। নাগরিকদের দুর্ভোগ যেন দীর্ঘস্থায়ী না হয়, তা নিশ্চিত করতে পুরসভার দল রাতভর কাজ করেছে।”

   

যদিও শহরের কিছু জায়গা— বিশেষ করে টালিগঞ্জ, বালিগঞ্জ, রাসবিহারী, গাঙ্গুলিপুকুর, খিদিরপুরের কিছু অংশে দীর্ঘ সময় ধরে জল জমে ছিল। এর প্রধান কারণ, টালিগঞ্জ থেকে অভিষিক্তা পর্যন্ত ভূগর্ভস্থ নিকাশির একটি বড় অংশ আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছিল বক্স ড্রেন তৈরির কারণে। তবুও শেষ পর্যন্ত ব্লো ভ্যাক যন্ত্র নামিয়ে সেই জলও সরানো সম্ভব হয়।

তারক সিং নিজে উপস্থিত থেকে সার্কুলার ক্যানাল এবং বিবি ১ খাল পরিদর্শন করেন। দেখা যায়, ভরা কটাল এবং অতিবৃষ্টির ফলে খালের জল উপচে পড়ছে রাস্তায়। এর মোকাবিলায় গঙ্গার সঙ্গে যুক্ত সমস্ত নিকাশির পেন স্ট্রোক গেট সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয় পুরসভা।

অন্যদিকে, একেবারে ব্যতিক্রমী ছবি ধরা পড়ে পাতিপুকুর রেলব্রিজের নিচে। গত ২০ বছরে এই প্রথম বৃষ্টির পরেও সেই অংশে একফোঁটাও জল জমেনি। পুরসভার দাবি, তিন মাস আগে ওই এলাকায় ভূগর্ভস্থ নিকাশির পলি অপসারণ করা হয়েছিল বলেই এই সাফল্য এসেছে।

Advertisements

মঙ্গলবার সকাল সাতটার মধ্যেই দমদম থেকে বালিগঞ্জ, টালা থেকে টালিগঞ্জ— এমনকি খিদিরপুর, মেটিয়াবুরুজ, গার্ডেনরিচের মতো সংযুক্ত এলাকাগুলিতেও জল নামতে শুরু করে। ফলে বহু স্কুল পড়ুয়া নির্ধারিত সময়ে বাসে করেই স্কুলে পৌঁছাতে পারে।

পুরসভার নিকাশি বিভাগ সারা শহর জুড়ে প্রায় ৫০টি গাড়ি নামায় রাস্তায় জমা জল সরানোর কাজে। পাশাপাশি, সেচ দফতর বড় পাম্প চালিয়ে খালের জল গঙ্গায় ফেলার কাজ করে রাত থেকেই।

একদিকে ১১৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত, অন্যদিকে ভরা কটালের প্রভাব— তা সত্ত্বেও পুরসভা ও সেচ দফতরের যৌথ তৎপরতায় শহরবাসীকে জলযন্ত্রণায় তেমন ভাবে পড়তে হয়নি। বিশেষজ্ঞ মহল বলছে, সময়মতো পরিকল্পনা, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের তৎপরতাই এই সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।

কলকাতার মতো মেট্রো শহরে যেখানে প্রতি বছর বর্ষায় জল জমে নাগরিক দুর্ভোগ চরমে ওঠে, সেখানে এবারকার পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে একটি বড় দৃষ্টান্ত হয়ে রইল।