গঙ্গা নদীর তলদেশ দিয়ে কলকাতা থেকে হাওড়া পর্যন্ত সুড়ঙ্গপথ (Kolkata-Howrah Tunnel) নির্মাণের একটি বৃহৎ প্রকল্প গ্রহণ করতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই সুড়ঙ্গ নির্মাণের মাধ্যমে পণ্যবাহী ট্রাকগুলির জন্য একটি নতুন পথ তৈরি করা হবে, যা হাওড়া ব্রিজ (রবীন্দ্র সেতু) এবং দ্বিতীয় হুগলি (Kolkata-Howrah Tunnel) সেতুর যানবাহন চাপ কমাতে সাহায্য করবে। কলকাতা থেকে হাওড়ার (Kolkata-Howrah Tunnel) মধ্যে মেট্রো চলাচল শুরু হওয়ার পর থেকেই নতুন সংযোগপথ তৈরির প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছিল। এবার সেই অভাব পূরণের উদ্দেশ্যে কেন্দ্র সরকার এই প্রকল্পের কাজ শুরুর পরিকল্পনা করেছে।
প্রকল্পের গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তা
কলকাতা ও হাওড়া দু’টি শহর একে অপরের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত। নবান্নে রাজ্যের সচিবালয় স্থানান্তরের পর হাওড়ার গুরুত্ব আরও বেড়ে গিয়েছে। শহর দু’টির মধ্যে যোগাযোগের উন্নতি করা একটি অগ্রাধিকার ভিত্তিক প্রয়োজন। বর্তমানে, হাওড়া ব্রিজ ও বিদ্যাসাগর সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহনের যাতায়াত হওয়ায় যানজটের সমস্যা প্রকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। যাতায়াতের বিকল্প পথ নির্মাণ করা এই সমস্যার সমাধান করতে পারে।
কেন্দ্রীয় সরকারের পরিকল্পনা
কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রকল্পের জন্য ১১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। মোট ১৫ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে ৮ কিলোমিটার অংশ গঙ্গার তলদেশ দিয়ে যাবে। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বন্দর কর্তৃপক্ষের অধীনে এই প্রকল্পটির পরিকল্পনা প্রথমে ২০২২ সালে গৃহীত হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ইতিমধ্যেই বন্দর, জাহাজ ও জলপথ মন্ত্রকে রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর জানিয়েছেন, এই প্রকল্পের কাজ খুব শীঘ্রই শুরু হবে।
সুড়ঙ্গপথ নির্মাণের কার্যকারিতা
গঙ্গার তলদেশ দিয়ে সুড়ঙ্গপথ তৈরি করার ফলে যানজট সমস্যার সমাধান হবে। ভারী ট্রাকগুলি সহজে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে এবং কলকাতা শহরের রাস্তায় যানজট কমবে। প্রতিদিনের যানজটের কারণে যে বন্দর এলাকায় যানজটের চাপ পড়ে তা অনেকটাই কমে যাবে।
যানজট কমানোর উদ্যোগ
কলকাতা শহরে দিনে ৮ ঘণ্টা ভারী গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখা হয়। এটি যানজটের সমস্যা কিছুটা কমালেও সম্পূর্ণভাবে সমস্যার সমাধান করতে পারে না। ফলে রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় অনেক ট্রাককে। অন্যদিকে, বন্দর থেকে দ্বিতীয় হুগলি সেতু পর্যন্ত যানজট তৈরি হওয়ায় গার্ডেনরিচ সার্কুলার রোড, খিদিরপুর রোড, হেস্টিংস এলাকাগুলিতেও যানজট দেখা দেয়। এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সুড়ঙ্গপথ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
হাওড়া ব্রিজ এবং বিদ্যাসাগর সেতুর উপর চাপ কমানো
প্রচুর পরিমাণে যানবাহন চলাচল করায় হাওড়া ব্রিজের ওপর বিশাল চাপ পড়ে। অতীতে দিনে ১৫ হাজারের বেশি ট্রাক চলাচল করত এই ব্রিজের ওপর। বিদ্যাসাগর সেতু চালু হওয়ার পর কিছুটা চাপ কমেছে, তবে ট্রাফিক সমস্যার পুরোপুরি সমাধান হয়নি।
প্রকল্পের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা
গঙ্গার তলদেশ দিয়ে সুড়ঙ্গপথ নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে কলকাতা ও হাওড়ার মধ্যে যান চলাচলের গতি আরও সহজতর হবে। যানজট কমে গিয়ে বাণিজ্যিক কার্যক্রমের ক্ষেত্রেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তবে, প্রকল্পটি শেষ হতে কত দিন লাগতে পারে তা এখনও স্পষ্ট নয়। পরিকল্পনার পূর্ণ বাস্তবায়নে কিছুটা সময় লাগলেও এটি নিশ্চিতভাবে শহরের যানজট সমস্যা সমাধানে বড় ভূমিকা পালন করবে।
এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে শুধু কলকাতা ও হাওড়া নয়, বরং গোটা রাজ্যের উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিশেষ করে, ট্রাক ও পণ্যবাহী যানবাহনের জন্য এই সুড়ঙ্গপথ বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে।