শুভেন্দুর ‘অশালীন’ মন্তব্যে কড়া পদক্ষেপে প্রস্তুত লালবাজার প্রশাসন

কলকাতা: রাজ্য রাজনীতিতে ফের তীব্র বিতর্কের ঝড়। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর এক মন্তব্য ঘিরে এবার আইনি পদক্ষেপের পথে হাঁটছে লালবাজার (Kolkata Police)। সূত্রের খবর, কলকাতার…

BJP Takes to the Streets Against Corruption; Suvendu Leads Vijay Sankalp Yatra"

কলকাতা: রাজ্য রাজনীতিতে ফের তীব্র বিতর্কের ঝড়। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর এক মন্তব্য ঘিরে এবার আইনি পদক্ষেপের পথে হাঁটছে লালবাজার (Kolkata Police)। সূত্রের খবর, কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ ভর্মাকে উদ্দেশ্য করে ‘অশালীন’ মন্তব্য করার অভিযোগে শুভেন্দুর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। ইতিমধ্যেই লালবাজারে শুরু হয়েছে আইনি পরামর্শ প্রক্রিয়া।

প্রসঙ্গত, গত শনিবার তৃণমূল বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী রাজ্যের প্রশাসনিক নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে ‘নবান্ন অভিযান’ কর্মসূচিতে অংশ নেন। এই কর্মসূচি চলাকালীন তিনি কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ ভর্মাকে নিয়ে এমন কিছু মন্তব্য করেন, যা বিরোধীদের দাবি— “নির্লজ্জ, অশালীন ও প্রশাসনিক পদমর্যাদার প্রতি অবমাননাকর”।

   

ঘটনার পরপরই লালবাজারে নড়চড় শুরু হয়। পুলিশ কমিশনারের পদমর্যাদা ও দায়িত্বকে লক্ষ্য করে প্রকাশ্যে এমন মন্তব্য কেবল আইনের লঙ্ঘনই নয়, বরং পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে পারে বলে মনে করছেন একাধিক উচ্চপদস্থ পুলিশকর্তা। সেই কারণেই বিষয়টি শুধু রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া নয়, আইনি দিক থেকেও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।

লালবাজার সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই একাধিক আইনজীবী ও আইন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন পুলিশের শীর্ষকর্তারা। শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্যকে কোন কোন ধারায় অভিযুক্ত করা যায় এবং আদালতে প্রমাণ হিসেবে কোন ধরনের ভিডিও বা অডিও রেকর্ডিং পেশ করা যেতে পারে, তার প্রস্তুতি চলছে। আইনি পরামর্শ অনুযায়ী শীঘ্রই আনুষ্ঠানিক মামলা দায়ের হতে পারে বলেই সূত্রের দাবি।

রাজনৈতিক মহলে এই ঘটনাকে ঘিরে শুরু হয়েছে তীব্র তরজা। তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা দাবি করছেন, বিরোধী দলনেতা হিসেবে শুভেন্দু অধিকারীর দায়িত্ব অনেক বেশি, কিন্তু তিনি প্রকাশ্যে প্রশাসনিক শীর্ষপদে থাকা ব্যক্তিকে অপমান করেছেন— যা নিন্দনীয়। অন্যদিকে, বিজেপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “শুভেন্দু অধিকারী একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে প্রশাসনের ভুল ধরিয়ে দিয়েছেন মাত্র। তৃণমূল সরকার বিষয়টিকে বাড়িয়ে তুলে বিরোধী কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করছে।”

Advertisements

আইনি প্রক্রিয়া শুরু হলে এটি রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আরও উত্তেজনা বাড়াবে, তা বলাই বাহুল্য। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিরোধী নেতা ও পুলিশের মধ্যে এমন সরাসরি সংঘর্ষ সাম্প্রতিক কালে খুব কম দেখা গেছে। এটি প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ও রাজনৈতিক সংস্কৃতির উপরও প্রশ্ন তুলে দিতে পারে।

উল্লেখ্য, ‘নবান্ন অভিযান’ কর্মসূচি নিয়ে আগেও একাধিকবার রাজনৈতিক সংঘাতের সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ ও বিরোধী সমর্থকদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি, গ্রেফতার ও লাঠিচার্জের ঘটনা নতুন নয়। কিন্তু কোনও পুলিশ কমিশনারকে উদ্দেশ্য করে প্রকাশ্যে ‘অশালীন’ মন্তব্য করার অভিযোগ বিরল। তাই এবারের পদক্ষেপ রাজনৈতিকভাবে যেমন তাৎপর্যপূর্ণ, তেমনই আইনি দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ নজির হয়ে উঠতে পারে।

এখন নজর সবারই লালবাজারের পরবর্তী সিদ্ধান্তে। শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিলে তা কেবল রাজনৈতিক বিরোধিতার ক্ষেত্রেই নয়, আইনি লড়াইয়ের ময়দানেও বড় সঙ্কট তৈরি করবে। রাজ্যের রাজনৈতিক মহল এখন দেখছে, আগামী দিনগুলিতে এই বিতর্ক কোন দিকে গড়ায়।